অনুকূল পরিবেশের অপেক্ষায় জাতীয় পার্টি
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের মধ্যে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। অনেক দল এরই মধ্যে তাদের মনোনীত প্রার্থীদের নামও ঘোষণা করেছে। কিন্তু জাতীয় পার্টির (জাপা) কোনো নির্বাচনী কার্যক্রম এখনও দৃশ্যমান নয়। কেন? প্রাপ্ত তথ্যমতে, জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন অংশ মনে করছে, দেশে এখনও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। এ ছাড়া দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। অন্যদিকে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের অনুসারীরা জানান, তাঁদের নেতাদের বিরুদ্ধেও মামলা রয়েছে। মামলা প্রত্যাহার না হলে নির্বাচনে যাওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব হবে না। অর্থাৎ দুটি অংশই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য অনুকূল পরিবেশের অপেক্ষায় আছে। এ ছাড়া রওশন এরশাদ জানিয়েছেন, তাঁর বয়স হয়েছে। তাই নির্বাচন ও রাজনীতি নিয়ে তিনি আর ভাবছেন না।
নির্বাচনমুখী দলগুলোর প্রার্থীরা এখন নিজ নিজ এলাকায় জনসংযোগে ব্যস্ত। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ, ১৪ দলের শরিক দলগুলোর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নেই বললেই চলে। আওয়ামী লীগের শাসনামলে গত তিনটি নির্বাচনকে ‘বৈধতা’ দেওয়ার অভিযোগে জাতীয় পার্টিকেও থাকতে হচ্ছে চাপের মুখে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর দুইবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। চাপের মুখেও মাঝেমধ্যে কর্মসূচি দিচ্ছে জাতীয় পার্টি।
নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির মহাসচিব রহুল আমিন হাওলাদার আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমাদের দল সবসময় নির্বাচনমুখী একটি দল। প্রতিটি পার্লামেন্ট নির্বাচনে আমরা অংশগ্রহণ করি। আমাদের একটা প্রস্তুতি চলছে। আমাদের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত হবে।’ নির্বাচনে আপনাদের কোনো বাধা আছে কি নাÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের তো কতগুলো মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা আছে। মামলাগুলোর ব্যাপারে সরকারের যে সিদ্ধান্ত, সেটাকে
আমরা সাধুবাদ জানাই। মামলা বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়াটা শেষ হওয়া পর্যন্ত তো আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। এমনিতে অনেকে মনোনয়নের জন্য যোগাযোগ করছেন। আমরাও যোগাযোগ রাখছি।
জিএম কাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী আমাদের সময়কে বলেন, জাতীয় পার্টি ৯ বার ভোট করেছে। ৪০ বছরের পুরনো একটি দল। আমাদের বিভিন্ন আসনে অনেক ত্যাগী নেতা আছেন। কয়েকবার ভোট করা অনেক প্রার্থী আছেন। আমরা যে কোনো সময় ভোটের জন্য প্রস্তুত। দেশে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কোনো আলামত আমরা দেখছি না। সুষ্ঠু লক্ষণ দেখছি না। তিনি বলেন, সরকারকে নিশ্চিত করতে হবেÑ ভোট সুষ্ঠু হবে। তবেই আমরা ভোটে যেতে আগ্রহী।
এদিকে জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ করার দাবিতে মাঠে আছে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টিসহ আরও কয়েকটি দল। দলগুলো প্রধান উপদেষ্টা বরাবর এরই মধ্যে স্মারকলিপিও দিয়েছে। গত মঙ্গলবার জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধসহ বেশকিছু দাবিতে নির্বাচন কমিশন বরাবর চিঠি দিয়েছে জামায়াত। ফলে নির্বাচনী আলোচনা যত বাড়ছে, ততই চাপে পড়তে হচ্ছে জাতীয় পার্টিকে। এমতাবস্থায় দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অনেকটাই বিব্রতকর অবস্থায় আছেন বলে জানা গেছে।
দলটির বিভিন্ন জেলার অন্তত ১০ জন নেতার সঙ্গে কথা হয় আমাদের সময়ের এ প্রতিবেদকের। তাঁদের ভাষ্য, নির্বাচন সামনে রেখে দল সব সময়েই কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়ে। তথাপি ৯০ সালে গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে আজ অবধি যত নির্বাচন হয়েছে, সব নির্বাচনেই জাতীয় পার্টি অংশ নিয়েছে। অদৃশ্য সুতোর টানে জাপাকে বারবার নড়তে হয়েছে। হিসাব-নিকাশে ভুল হলে জাপায় ভাঙন হয়েছে। এবারও এমনটা হয়েছে। এতে করে দলের তৃণমূলের নেতাদের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে যায়।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রহুল আমিন হাওলাদারের নেতৃত্বে ষষ্টবারের মতো দলে ভাঙন হয়েছে বলে জানা গেছে। এর আগে, ১৯৯৬ সালে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু আলাদা দল গঠন করেন। এ ছাড়া ১৯৯৯ সালে নাজিউর রহমান মঞ্জু, ২০০৩ সালে মতিন, ২০১৩ সালে জাফর, ২০২৪ সালে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে দলে ভাঙন সৃষ্টি হয়। অবশ্য রওশন এরশাদ বর্তমানে অসুস্থ এবং তাঁর মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদ জেলে। ফলে এই গ্রুপের তেমন কার্যক্রম নেই।
মনোনয়নের বিষয়ে জিএম কাদের আমাদের সময়কে বলেন, মনোনয়ন সময়মতো দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন:
সাকিবকে নিয়ে যা বললেন ওবায়দুল কাদের
নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বেগম রওশন এরশাদ আমাদের সময়কে বলেন, আমি রাজনীতি করি না। হয়েছে। তাই নির্বাচন ও রাজনীতি নিয়ে আর ভাবছি না।