অটিজম অভিশাপ নয় বরং এটি এক ভিন্নধর্মী বিকাশের ধরন
অটিজম একটি নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার, অর্থাৎ মানসিক বিকাশজনিত এটি এক জটিল সমস্যা, যা মানুষের স্নায়ুতন্ত্রের গঠন ও কার্যকারিতার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এর আরেক নাম অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার বা এএসডি। এ অবস্থায় মস্তিষ্কের বিকাশে এমন কিছু অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়, যা ব্যক্তির সামাজিক যোগাযোগ, আচরণ, ভাষা ব্যবহার ও শেখার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। সাধারণত দেড় বছর থেকে তিন বছরের মধ্যেই অটিজমের লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে শুরু করে। অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা সাধারণ বিকাশমান শিশুদের মতো সামাজিকভাবে মেলামেশা করতে পারে না, তারা অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে অনাগ্রহী হয়, চোখে চোখ রেখে কথা বলতে বা কারও আবেগ বুঝতে অসুবিধা অনুভব করে। অনেক শিশুর ক্ষেত্রে কথা বলা, অঙ্গভঙ্গি বা আচরণ সীমিত হয়ে যায়; কেউ কেউ নির্দিষ্ট কাজ, শব্দ বা জিনিসের প্রতি অস্বাভাবিক আসক্তি প্রদর্শন করে। ভাষা ও যোগাযোগ দক্ষতার ঘাটতি তাদের শেখা এবং পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে বাধা সৃষ্টি করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুসারে, প্রতি ১৬০ জন শিশুর মধ্যে প্রায় ১ জন অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত।
ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের অটিজম হওয়ার আশঙ্কা চার গুণ কম। অটিজম আক্রান্ত প্রায় চল্লিশ শতাংশ শিশু কখনও কথা বলতে শেখে না, আবার প্রায় পঁচিশ থেকে ত্রিশ শতাংশ শিশু ১২ থেকে ১৮ মাস বয়সে কিছু শব্দ বলতে শেখে, কিন্তু পরবর্তী সময় সেই শব্দগুলো হারিয়ে ফেলে। প্রত্যেক অটিজম আক্রান্ত শিশুর লক্ষণ ও আচরণ একে অপরের থেকে আলাদা। অর্থাৎ অটিজমে আক্রান্ত দুটি মানুষ কখনই এক রকম নয়। গত দুই দশকে বিশ্বব্যাপী অটিজমের হার দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে এটি দ্রুত বর্ধমান মানসিক বিকাশজনিত ব্যাধিগুলোর একটি। ২০০৮ সালের একটি ডেনিশ গবেষণায় দেখা গেছে যে, অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃত্যুঝুঁকি সাধারণ মানুষের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এখন পর্যন্ত অটিজমের জন্য কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা বা প্রতিরোধ পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়নি। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক থেরাপি, আচরণগত চিকিৎসা, বিশেষ শিক্ষা ও পরিবারের সহায়তা শিশুর বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
অটিজমের লক্ষণ ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন হলেও কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য প্রায়ই দেখা যায়। আক্রান্ত শিশুদের অঙ্গভঙ্গি ও মুখের অভিব্যক্তি প্রায়ই কথার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না। তারা অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, একা থাকতে ভালোবাসে এবং অন্যের অনুভূতি বা প্রতিক্রিয়া বুঝতে পারে না। অনেকেই স্পর্শ এড়িয়ে চলে। একই বয়সী শিশুর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়তে ব্যর্থ হয় এবং কখনও কখনও ভারসাম্য বা নড়াচড়ার ক্ষেত্রে দুর্বলতা প্রকাশ করে। এসব লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা শিশু-মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক চিকিৎসা ও পরিচর্যা শিশুর জীবনমান উন্নত করতে সক্ষম।
আরও পড়ুন:
শীতে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন
অটিজম কোনো অভিশাপ নয়; এটি এক ভিন্নধর্মী বিকাশের ধরন, যা সমাজের বোঝাপড়া, সহমর্মিতা ও যত্নের মাধ্যমে সামঞ্জস্যপূর্ণ জীবনযাপনের সুযোগ পেতে পারে। পরিবার, শিক্ষক ও সমাজের সম্মিলিত উদ্যোগই পারে একজন অটিজম আক্রান্ত শিশুকে তার পূর্ণ সম্ভাবনা অর্জনে সহায়তা করতে।
লেখক : সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও অটিজম গবেষক
আরও পড়ুন:
জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণগুলো জেনে রাখুন
চেম্বার : ফার্ম ভিউ সুপার স্পেশালিটি ক্লিনিক
২০৫ ফার্মগেট সুপার মার্কেট, ঢাকা
আরও পড়ুন:
শীতে মুলা কেন খাবেন?
০১৮১৩৩২৬৫৯৫, ০১৭২৪৮৮৬৫৩৯