খালেদা জিয়ার আসনে প্রার্থী দেবে না এনসিপি: নাহিদ ইসলাম
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দের কিছু আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রার্থী দেবে না বলে জানিয়েছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এ সময় জোট গঠনের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।
বুধবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের দুই নম্বর ঢাকেশ্বরী এলাকায় জুলাই আন্দোলনে আহতের পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু জুলাই যোদ্ধা গাজী সালাহউদ্দিনের পরিবারকে দেখতে এসে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
৩০০ আসনেই এনসিপির প্রার্থী দেওয়া বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে আমাদের সংস্কার আর জুলাই সনদের দাবির সঙ্গে কোনো দল সংহতি প্রকাশ করলে জোটের ব্যাপারটা বিবেচনা করব।’
কবে প্রার্থীর তালিকা ঘোষণা করা হবে, এ বিষয়ে দলটির আহ্বায়ক বলেন, আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে প্রার্থীর তালিকা ঘোষণা করা হবে।
বেগম খালেদা জিয়া যে তিনটি আসন থেকে লড়বেন যেসব আসনে প্রার্থী দেওয়া বিষয়ে নাহিদ বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন, উনাদের সম্মানে হয়তো আমরা সেসব এলাকায় প্রার্থী দেব না। এ ছাড়া সর্বাধিক আসনে আমরা প্রার্থী ঘোষণা করব।’
এ সময় গাজী সালাউদ্দিন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একজন অকুতভয়ী সৈনিক ছিলেন বলে জানান এনসিপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণের সময় গুলিতে আহত হন তিনি। তার গলায় একটি স্পিন্টার বিদ্ধ ছিল। গুলিতে তার চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এবং আহত অবস্থায় গণঅভ্যুত্থানের পরে এতগুলো দিন তাকে অতিবাহিত করতে হয়েছে এবং গত ২৬ অক্টোবর তিনি মারা যান।’
তিনি বলেন, ‘গাজী সালাহউদ্দিন ভাইয়ের মতো এ রকম হাজারো জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আহত যোদ্ধারা সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। গণঅভ্যুত্থানের অংশগ্রহণকারী আহতদের সুচিকিৎসার দায়িত্ব এই অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর ছিল, তারা তা সম্পূর্ণরূপে পালন করতে পারেনি, বিধায় এখনো লাশের সারি বাড়তেছে। আমাদের শহীদের সংখ্যা বাড়তেছে। আমরা গাজী সালাউদ্দিন ভাইয়ের এই মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত।’
অন্তবর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের আহত যোদ্ধা যারা রয়েছেন এখনো যারা কাতরাচ্ছেন, এখনো যাদের শরীরে স্পিন্টার রয়েছে, যাদের নানাভাবে অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত রয়েছে তাদেরকে সর্বাত্মকভাবে সর্বোচ্চ পরিমাণে সহযোগিতা করা প্রয়োজন। চিকিৎসার নেওয়া প্রয়োজন। সেটা যাতে সরকারের জায়গা থেকে করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা প্রয়োজন। হয়তো সাময়িক একটা চিকিৎসা অনেকেই পেয়েছে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসাগুলো যদি অব্যাহত না থাকে তাহলে এ রকম ঘটনা কিন্তু ঘটতে থাকবে। ফলে এখন নির্বাচনের ডামাডোলে আমরা যাতে এই আহত ভাইদের কথা এবং এই শহীদ পরিবারদের কথা ভুলে না যাই।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল আমিন, কেন্দ্রিয় সদস্য আহমেদুর রহমান তনু, জাতীয় যুবশক্তি কেন্দ্রীয় পার্টির সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক তুহিন মাহমুদ, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সদস্য সচিব জাবেদ আলমসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা।
উল্লেখ্য, গত ২৬ অক্টোবর রাত ১০টার দিকে শহরের খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নারায়ণগঞ্জে জুলাই আন্দোলনে চোখ হারানো ও গুলিতে আহত জুলাই যোদ্ধা গাজী সালাউদ্দিন। আন্দোলনের সময় শরীরের আরও কয়েক স্থানে গুলির স্প্রিন্টার লেগে আহত হয়েছিলেন তিনি। একটি গুলির স্প্রিন্টার তার গলার দীর্ঘদিন যাবৎ আটকে ছিল। গলায় আটকে থাকা এই অপারেশন করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। চিকিৎসকরা জানায়, সেই স্প্রিন্টার থেকেই সৃষ্ট শ্বাসকষ্টে তিনি মারা যান।
এর আগে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় সিদ্ধিরগঞ্জে নিজ এলাকায় সালাউদ্দিনকে একটি মুদি দোকান দেওয়া হয়।
আমাদের সময়/এএস
আরও পড়ুন:
সাকিবকে নিয়ে যা বললেন ওবায়দুল কাদের