চুলের টোটাল কেয়ার
হেমন্তের প্রভাবে বাতাসে হিমভাব বাড়তে শুরু করেছে। যে কারণে ত্বক ও চুলও হয়ে উঠছে রুক্ষ। এ ছাড়া ঋতু বদলের এ সময়ে চুল পড়া, চুলের আগা ফেটে যাওয়ার মতো সমস্যা বৃদ্ধি পায়। তাই প্রয়োজন পর্যাপ্ত পুষ্টি ও আর্দ্রতা। আমাদের হাতের কাছেই রয়েছে এমন প্রচুর উপাদান, যা আমাদের ত্বক ও চুলের রুক্ষতা নিয়ন্ত্রণ করতে কার্যকর। শুধু মনে রাখতে হবে, প্রসাধনীর তুলনায় প্রাকৃতিক উপাদান কিছুটা ধীরগতিতে কাজ করে। বিস্তারিত লিখেছেন নিশাত তানিয়া
চুলের যে কোনো ধরনের যত্নে সবচেয়ে বেশি পরিচ্ছন্নতাকেই প্রাধান্য দিলেন শোভন মেকওভার বিউটি ক্লিনিক আ্যন্ড মেকওভার স্যালুনের কস্মোটোলজিস্ট, স্বত্বাধিকারী শোভন সাহা। এর জন্য ধরন বুঝে শ্যাম্পু ব্যবহার খুবই জরুরি। ঠিক কনডিশনারের ক্ষেত্রেও একই পরামর্শ তার। তবে চুলের সিরাম ব্যবহার খুবই জরুরি এবং প্রতিদিন চুল ঠাণ্ডা বাতাস দিয়ে শুকিয়ে নিতে হবে।
চুলের রুক্ষতায় বিশেষ যত্ন
চুলের রুক্ষতা দূর করতে প্রথমেই প্রয়োজন প্রাকৃতিক কন্ডিশনার। কলা প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে দারুণ, যা নিমিষেই দূর করে রুক্ষতা। একটা পাকা কলার সঙ্গে দুই চা-চামচ মধু ও অর্ধেক কাপ নারকেল অথবা আমন্ড তেল মিশিয়ে চুলে ২০ থেকে ২৫ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে নিতে হবে। রুক্ষতার কারণে চুল ভেঙেও যেতে পারে। এর থেকে রেহাই পেতে ডিম দারুণ উপকারী। চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে অলিভ অয়েল। এবার এই দুই উপাদান একসঙ্গে মেশালেই তৈরি হবে রুক্ষ চুলের জন্য আদর্শ প্যাক। এই মিশ্রণ মাথার তালুসহ পুরো চুলে ভালোভাবে লাগিয়ে রাখতে হবে ৪০ মিনিট। এরপর শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে হবে।
চুল পড়া কমাতে
আরও পড়ুন:
শীতে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন
বিশেষজ্ঞরা বলেন, দিনে ১০০ চুল পড়া স্বাভাবিক। এর চেয়ে বেশি চুল পড়লে বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।
মাথার ত্বক বুঝে শ্যাম্পু করতে হবে। ত্বক শুষ্ক হলে শ্যাম্পু কম করাই ভালো। মাথার ত্বক তৈলাক্ত হলে সপ্তাহে দু-তিনবার পরিষ্কার করা প্রয়োজন। শ্যাম্পু বেশিক্ষণ মাথায় দিয়ে রাখা ঠিক নয়। এতে চুল নরম হয়ে পড়তে পারে। যারা নিয়মিত শরীরচর্চা করেন, তাদের মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন ঠিক থাকে, চুলও কম পড়ে। তাই নিয়মিত ব্যায়াম করুন। যতই যত্ন নিন যদি খাদ্যতালিকায় পুষ্টিকর খাবার না রাখেন, তবে চুল ধরে রাখা কঠিন হবে। তাই প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও লৌহ ধরনের খাবার রোজ খাদ্যতালিকায় রাখুন। এতে চুলের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয়।
চুলের আগা ফাটলে
চুল ফাটা রোধে খুব ভালো কাজ করে মেথি। মেথি, টক দই, মধু ও অ্যালোভেরা একসঙ্গে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে চুলে লাগালে অনেক উপকার পাওয়া যায়। মেথিতে রয়েছে নিজস্ব অ্যাসেনশিয়াল অয়েল। নিত্যদিন ব্যবহার করা নারকেল তেলের ভেতর কয়েকটি মেথি দিয়ে রাখতে পারেন। এতে উপকার পাবেন বেশ। চুল ঘনকালো ও মজবুত রাখতে কিছু কালোজিরাও দিয়ে রাখতে পারেন ওই তেলে। বাড়িতে চট করে কিছু পাওয়া না গেলেও বারান্দার টবে লাগানো অ্যালোভেরা পেস্ট করে মাথায় লাগিয়ে নিতে পারেন সপ্তাহের কোনো কোনো দিন। দেখবেন নিজের অজান্তেই চুল হয়ে উঠবে মসৃণ। দুই মাস পরপর চুল কাটতে হবে, চুল বড় হোক আর না হোক। চুল ফাটা রোধে এই নিয়ম মানলে ফল পাবেন সহজে। পানিশূন্যতা হলেও চুল পড়া ও চুল ফাটা বাড়ে। তাই প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে।
আরও পড়ুন:
জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণগুলো জেনে রাখুন
কালার করা চুলও থাকবে যত্নে
কালার করা চুলে সপ্তাহে অন্তত একবার হট অয়েল ট্রিটমেন্ট করুন। পরিমাণমতো অলিভ অয়েল, আমন্ড অয়েল এবং নারকেল তেল একসঙ্গে মিশিয়ে হালকা গরম করে চুলের গোড়ায় ভালোমতো ম্যাসাজ করুন। এটি চুলের নিষ্প্রাণ ভাব দূর করে চুল সিল্কি ও সুন্দর করে। যতটা সম্ভব হেয়ার ড্রায়ার, কালার বা চুল আয়রন করা থেকে বিরত থাকুন। এসব জিনিস চুলকে ভেতর থেকে ড্যামেজ করে এবং ধীরে ধীরে চুল রুক্ষ ও মলিন হয়ে পড়ে। এ ছাড়া চুল পড়ার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে এসব হেয়ার স্টাইলার ব্যবহার করা। এ ছাড়া কালার করা চুলের জন্য সেই ধরনের শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার থাকে আলাদা, সেগুলো ব্যবহার করুন।
তেলে চুল তাজা
অয়েল ম্যাসাজের ওপর আর কোনো ট্রিটমেন্ট নেই চুলের। তবে চুলের আগায় তেলের ম্যাসাজ করলে খুব একটা উপকারে আসে না, বললেন শোভন সাহা। তাই সঠিক নিয়মে গোড়ায় ম্যাসাজ করাটাই উপকারী। চুলের ধরন অনুযায়ীও তেল বেছে নেওয়া যায়। যেমন যাদের চুল পাতলা, তারা হালকা তেল, যেমন জোজোবা বা আমন্ড তেল বেছে নিতে পারেন। আবার ঘন চুলের ক্ষেত্রে নারকেল তেল বা আর্গান তেল বেছে নেওয়া যেতে পারে। প্রয়োজন অনুযায়ী একাধিক তেল মিশিয়ে সামান্য গরম করে মালিশ করে নিতে হবে। এরপর গরম পানিতে তোয়ালে ডুবিয়ে অতিরিক্ত পানি ফেলে দিয়ে চুল বেঁধে রাখতে হবে। আধা ঘণ্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
আরও পড়ুন:
শীতে মুলা কেন খাবেন?
চুলের যত্নে হট অয়েল ম্যাসাজ বা হালকা গরম তেলের মালিশ বেশ পরিচিত একটি বিষয়। চুলের রুক্ষতা দূর করতেও এটি দারুণ কার্যকর। ভালোমানের নারকেল তেল এভাবে ব্যবহার করলে রুক্ষতা অনেকটাই কমে।