শতবর্ষে ঋত্বিক ঘটক
বাংলা সিনেমার উজ্জ্বল কিংবদন্তি ঋত্বিক কুমার ঘটক। ডাকনাম ‘ভবা’। একাধারে তিনি ছিলেন একজন দার্শনিক, নির্মাতা, লেখক, নাট্যকার, অভিনেতা, চিত্রনাট্যকার ও তাত্ত্বিক। শৈল্পিক ভঙিমায় বাংলা সিনেমাকে নতুন রূপ, নতুন ভাষা দিয়েছিলেন এই কীর্তিমান। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও তৈরি হয়েছিল তার পরিচিতি। আজ ঋত্বিকের জন্মশতবর্ষ। ১৯২৫ সালের ৪ নভেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
প্রজন্মের পর প্রজন্মকে ঋত্বিকের সিনেমা আজও অনুপ্রেরণা যুগিয়ে চলেছে। তাকে নিয়ে কিংবদন্তি হলিউড নির্মাতা মার্টিন স্করসেসি বলেন, ‘সত্যজিৎ রায় একবার ঋত্বিক ঘটককে নিয়ে বলেছিলেন, তার কাছে হয়তো হলিউডের অস্তিত্বই ছিল না কখনও। কথাটা খুবই দারুণ লেগেছিল। আমরা ২০০৭ সালে ওয়ার্ল্ড সিনেমা প্রজেক্ট শুরু করি। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণে কখনও কখনও অনেক সিনেমা আড়ালে পড়ে গেছে, সেসব সিনেমাকে সংরক্ষণ করে দর্শকের কাছে পৌঁছে দেওয়াই ছিল উদ্দেশ্য। অনেক সময় এমন হয়, নির্মাতার জীবদ্দশায় তার কাজের যথেষ্ট স্বীকৃতি মেলে না। ঋত্বিক ঘটকের “তিতাস একটি নদীর নাম” সিনেমার ক্ষেত্রেও এমনটা হয়েছিল। জীবনের শেষ প্রান্তে গিয়ে সিনেমাটি বানিয়েছিলেন তিনি।’
যোগ করে তিনি আরও বলেন, ‘অনেক বছর ধরে পশ্চিমাদের কাছে ভারতীয় চলচ্চিত্র মানেই ছিল সত্যজিৎ রায়। তারপর আসে বলিউড। সময় যত গড়িয়েছে, আমাদের দৃষ্টিসীমা যত প্রসারিত হয়েছে, ঋত্বিক ঘটকের মতো অনেক প্রতিভা বেরিয়ে আসছে। তার প্রথম সিনেমা “নাগরিক” তৈরি হয়েছিল “পথের পাঁচালী”রও বছরখানেক আগে। সময়মতো মুক্তি পেলে এটিই হতে পারত প্রথম বাংলা আর্ট ফিল্ম। সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ শিল্পী ছিলেন ঘটক। মাত্র ৮টি সিনেমা তৈরি করেছেন। তবে সিনেমা সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল খুবই পরিষ্কার। তার প্রতিটি সিনেমা ভিজ্যুয়ালি এবং থিমের জায়গা থেকে খুবই সমৃদ্ধ। ভারতের স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যাচ্ছে তার কাজগুলো।’
বলতে গেলে, ময়মনসিংহের স্কুলজীবন থেকে রাজশাহীর পদ্মা নদী পর্যন্ত ঋত্বিকের বেড়ে ওঠা যেন এক সিনেমাটিক যাত্রা, যেখানে প্রতিটি দৃশ্যে ছিল মানুষের বেদনা, নদীর স্মৃতি, আর ছিন্নভিন্ন এক মাতৃভূমির প্রতি আকুলতা। সেসব বেদনা আর স্মৃতি তার সিনেমা কিংবা ছোটগল্পেও ফুটে উঠেছে।
আরও পড়ুন:
ওটিটি প্ল্যাটফরম আমার জন্য বেশ লাকি
১৯৪৭ সালের দেশভাগ যেন ঋত্বিকের ভেতরটা দুমড়েমুচড়ে দিয়েছিল। সেসময় তার পরিবার রাজশাহী থেকে পাড়ি দিয়েছিল কলকাতায়। কিন্তু সেই বিভক্তি শুধু ভূখণ্ডের ছিল না, ছিল আত্মারও।
ঋত্বিক বলতেন, ‘পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে নিজের দেশে আসা মানে নিজের মায়ের কোলে যাওয়ার আগে অনুমতি চাওয়া।’
যে কারণে স্বাধীন বাংলাদেশ জন্ম না নেওয়ার আগপর্যন্ত তিনি কখনও এই মাটিতে আসেননি, যেখানে তার জন্ম।
ঋত্বিক ঘটক নির্মিত সিনেমাগুলো হলো- ‘নাগরিক’ (১৯৭৭), ‘অযান্ত্রিক’ (১৯৫৮), ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’ (১৯৫৮), ‘মেঘে ঢাকা তারা’ (১৯৬০), ‘কোমল গান্ধার’ (১৯৬১), ‘সুবর্ণরেখা’ (১৯৬২), ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ (১৯৭৩) ও ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’ (১৯৭৭)।
আমাদের সময়/ এসএ