সরকারের পদক্ষেপ দেখে সনদে স্বাক্ষর করবে এনসিপি : নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জমা দেওয়া সুপারিশের জন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ‘ঐকান্তিক প্রচেষ্টা’কে সাধুবাদ জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তবে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ দেখার পরই এতে স্বাক্ষরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে দলটি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তাদের সুপারিশ জমা দেওয়ার একদিন পর গতকাল বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে মতামত জানিয়েছে দলটি।
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির মুখ্য সমম্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে খসড়া আদেশের প্রথমটি গ্রহণ করার মাধ্যমে এর আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং সংবিধান সংস্কার
বিলের খসড়া প্রণয়ন ও উন্মুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। আইনি ভিত্তিসম্পন্ন আদেশের খসড়া সরকার গ্রহণ করলে এনসিপির সনদ স্বাক্ষরের বিষয়ে অগ্রগতি হবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ প্রণয়নের পর গত ১৭ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীসহ ২৫টি রাজনৈতিক দল তাতে স্বাক্ষর করলেও এনসিপি সই করেনি। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, সনদ বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা পেলেই কেবল তারা এতে সই করবে।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিনের পরিচালনায় গতকাল রাজধানীর বাংলামোটরে দলের অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন আরও অংশ নেন এসসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, খালেদ সাইফুল্লাহ, যুগ্ম সদস্যসচিব ফরিদুল হক প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, আপনারা অবগত আছেনÑ জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিতের দাবিতে এনসিপি জুলাই সনদে স্বাক্ষর করা থেকে বিরত থেকেছে। আমরা বরাবর বলেছি, জুলাই সনদ স্রেফ রাজনৈতিক সমঝোতার ফাঁকা বুলি ও দলিল নয়; অবশ্যই এর আইনি ভিত্তি থাকতে হবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া দেখেই এনসিপি স্বাক্ষরের বিষয়টি বিবেচনা করবে- এই ছিল আমাদের বক্তব্য। আমরা লক্ষ করেছি, এনসিপির আপসহীন অবস্থানের ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার ঐকমত্য কমিশন সরকারের কাছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা সুপারিশ করেছে। আমরা মনে করি, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিতে এনসিপির অনড় অবস্থানের ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি আমরা কমিশনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই।
দুই ধরনের সংস্কারের জন্য স্বতন্ত্র বাস্তবায়ন রূপরেখা কমিশন পেশ করেছে উল্লেখ করে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, সংবিধান সম্পর্কিত নয় এমন সংস্কার সাধনের লক্ষ্যে প্রজ্ঞাপন ও অধ্যাদেশের খসড়া কমিশন সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে। আমরা মনে করি, কালবিলম্ব না করে অতিসত্বর এই সংস্কার প্রস্তাবসমূহ বাস্তবায়নের উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকারকে নিতে হবে। তবে অন্তত ৪৮টি সংস্কার প্রস্তাব সংবিধান সম্পর্কিতÑ এই সংস্কারসমূহের বাস্তবায়ন রূপরেখা নিয়েই এতদিন আলাপ-আলোচনা চলছিল। সংবিধান সম্পর্কিত এসব সংস্কার বাস্তবায়নের নিমিত্তে কমিশন দুটি স্বতন্ত্র খসড়া সুপারিশ দিয়েছে।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আরও বলেন, এনসিপি মনে করে, প্রথম খসড়া তথা প্রস্তাব-১ বাস্তবায়নের পথে সরকারকে যেতে হবে। কারণ এখানে ৮(ঙ) ধারায় বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংবিধান সংস্কার পরিষদ কার্য সম্পন্ন করতে না পারলে সংবিধান সংস্কার বিল পরিষদ কর্তৃক গৃহীত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে এবং সংবিধান সংস্কার আইনরূপে কার্যকর হবে। সনদের ওপর গণভোটের ম্যান্ডেট বাস্তবায়নে বাধ্যবাধকতা তৈরির লক্ষ্যে এটি একটি অত্যাবশকীয় সুপারিশÑ যার নজির বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে। অন্যদিকে, কমিশন প্রস্তাবিত প্রস্তাব-২ এ ব্যাপারে কোনো স্পষ্ট বক্তব্য নেইÑ যার দরুন গোটা সংস্কার কার্যক্রমই ভণ্ডুল হয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ প্রস্তাব-২ নয়; সরকারকে কমিশন প্রস্তাবিত প্রস্তাব-১ কে বাস্তবায়ন রূপরেখা হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি প্রস্তাব-১ এর বেশকিছু জায়গায় ভাষিক অস্পষ্টতা বিদ্যমান, যা নিরসন করতে হবে। যেমন ৮ (ক) ধারায় বর্ণিত আগামী নির্বাচিত সভা সংবিধান সংস্কার বিষয়ে সাংগঠনিক ক্ষমতা প্রয়োগ করিতে পারিবে নয়, ‘করিবে’- এভাবে উল্লেখ থাকা প্রয়োজন। ৮ (ঘ) ধারায় সংবিধান সংস্কার বিলের বিষয়াদি ‘বিবেচনা করিবে’ এক ধরনের অস্পষ্টতা তৈরি করে যা দূর করা প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, গণভোটে প্রদত্ত ‘সংবিধান সংস্কার বিল’-এর খসড়া দ্রুত প্রণয়ন এবং জনগণের নিকট উন্মুক্ত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে গণভোটে প্রদত্ত সংবিধান সংস্কার বিলের খসড়া দ্রুত প্রণয়ন এবং জনগণের কাছে উন্মুক্ত করতে সরকারকে আহ্বান জানান নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
আরও পড়ুন:
সাকিবকে নিয়ে যা বললেন ওবায়দুল কাদের