কমিশনের সুপারিশে জুলাই সনদের পূর্ণ প্রতিফলন নেই : সালাহউদ্দিন আহমেদ

নিজস্ব প্রতিবেদক
৩০ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৫৫
শেয়ার :
কমিশনের সুপারিশে জুলাই সনদের পূর্ণ প্রতিফলন নেই : সালাহউদ্দিন আহমেদ

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় যে সনদ স্বাক্ষরিত হয়েছে, কমিশনের দেওয়া সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশে তার হুবহু প্রতিফলন নেই। গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।

‘ফর্ম রুল বাই পাওয়ার টু রুল অব ল : ট্রানজিশন টু আ ডেমোক্রেটিক বাংলাদেশ’ শিরোনামের গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করে বিএনপি। এতে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দলিলে প্রধান উপদেষ্টা নিজেও দস্তখত করেছেন। তিনি বলেন, এতে করে বলা যায়Ñ সরকার ও ঐকমত্য কমিশন

একই। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে মনে হয়েছে সরকার ও আরও দুই-তিনটি দল মনে হয় একপক্ষ। আমি বিপক্ষেই খেলছিলাম মনে হয়। তিনি আরও বলেন, আমার কেন যেন মনে হয়েছে, কিছু দলের প্রস্তাব ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা জাতির ওপর জবরদস্তি আরোপিত করার প্রচেষ্টা লক্ষ্য করছি। কারণ ৯৪ পৃষ্ঠার যে দলিলটি প্রকাশিত হয়েছে, তার সঙ্গে কমিশনে যেভাবে ঐকমত্য পৌঁছে গেছে এবং গত ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে স্বাক্ষরিত হয়েছে তা হুবহু নেই। শুধু আছে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব। রাজনৈতিক দলগুলোর সুপারিশ, ঐকমত্য কীভাবে হলো এবং নোট অব ডিসেন্ট কোথায় কোথায় ছিল, তার কোনো কিছুরই উল্লেখ নেই।

সালাহউদ্দিন বলেন, সংবিধানের ৪৮ দফা সংশোধনের প্রস্তাব সহকারে তফসিল হিসেবে সংযুক্ত করেছে। বলেছে, এগুলোর ওপর গণভোট হবে। তাই যদি হতো তাহলে ১১/১২ মাস ধরে কেন কসরত করা হলো জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা নিজে প্রকাশ করেছেন যে, রাজনৈতিক দলগুলো যে সমস্ত বিষয় ঐকমত্য পোষণ করবে, সেগুলো সংকলিত করে জুলাই জাতীয় সনদ হবে, সেটি স্বাক্ষরিত হবে এবং পরবর্তী সংসদে বাস্তবায়ন হবে। তার আগে যেগুলো অধ্যাদেশ অথবা নির্বাহী আদেশে বাস্তবায়ন করা সম্ভব, তা সরকার করবেÑ এই ছিল প্রস্তাব।

সালাহউদ্দিন বলেন, ৩১ জুলাই দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শেষে হঠাৎ করে দুই-একটি দলের পক্ষ থেকে বলা হলো- বাস্তবায়নের জন্য আইনানুগ ভিত্তি চাই, বাস্তবায়নের গ্যারান্টি চাই। আমরা বললামÑ ঠিক আছে-সনদ প্রণীত হোক, তারপর বাস্তবায়নের উপায় ও আইনানুগ ভিত্তি এবং গ্যারান্টির জন্য আরও আলোচনা হোক। আমিই দলের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দিয়েছিলাম, সনদ বাস্তবায়নে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে গেজেট নটিফিকেশন করতে পারি। তার ভিত্তিতে এগুলো গ্রহণ করার পক্ষে জাতি আছে কী নাই-এই একটি প্রশ্নে গণভোট হতে পারে, জাতীয় নির্বাচনের দিনেই হতে পারে। কেন একই দিনে হতে পারে তার পক্ষেও যুক্তি দিয়েছিলাম। তিনি আরও বলেন, একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট হলে প্রার্থীরা ভোটারদের নিয়ে আসবে একই আয়োজনে একই খরচে হয়ে যাবে ছোট একটা ব্যালটের মাধ্যমে। এই প্রস্তাবে দুই-একটি দল বাদে সবাই একমত ছিল।

বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, যার ওপরে গণভোট হবে সেটি তো এই সনদে নেই। বলা হলো ৪৮টা দফার ওপর গণভোট হতে হবে। সেই আলাপ তো আমাদের সঙ্গে হয়নি। ঐকমত্য হয়েছে নোট অব ডিসেন্টসহ। যেসব রাজনৈতিক দল নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে, তারা তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করবে। যদি জনগণের ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত হন, তারা সেভাবে বাস্তবায়ন করবে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্দেশ্য ছিলÑ ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা। এখানে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যেসব প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে জাতি বিভক্ত হবে, অনৈক্য হবে।

গণপ্রতিনিধিত্বাদেশ (আরপিও) সংশোধী প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, হঠাৎ করে অগণতান্ত্রিকপন্থায় বলা হলো জোটভুক্ত হলেও নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে। একটি রাজনৈতিক দল তাকে সমর্থন করে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এই পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ আশা করি না। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় দেখতে চাই। তাদের ভূমিকায় যেন জাতি আশ্বস্ত হতে পারে- ঐকমত্য থাকতে পারে সেভাবে যেতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিভিন্ন পদক্ষেপে আজকে এখানে এসে আমরা হতাশা ব্যক্ত করছি।