নিজেকে সময় দিন
শরীর ও মন একই সুতোয় গাঁথা। বলা হয়ে থাকে, সুস্থ শরীরে সুস্থ মনের বাস। আবার শারীরিক সুস্থতায় প্রয়োজন মনের প্রশান্তি। কিন্তু শারীরিক সুস্থতার বিষয়টি গুরুত্ব পেলেও দেখা যায় আমাদের মানসিক যত্নের বিষয়টি খুব একটা লক্ষ করা হয় না। আমরা অনেকেই ক্যারিয়ার, পরিবার ইত্যাদির ব্যস্ততায় মনের যত্নের বিষয়টি প্রায় ভুলেই যাই। কিন্তু নিজে না ভালো থাকলে অন্যকেও ভালো রাখা যায় না। তাই নিজের যত্নের বিষয়টি সবার আগে লক্ষ রাখতে হবে নিজেকেই। বিস্তারিত লিখেছেন নিশাত তানিয়া
তাড়াহুড়ার এই জীবনে ছুটছি প্রতিদিন। ছুটতে ছুটতে একসময় এতটা ক্লান্তি ভর করে যে, সব যান্ত্রিক সঙ্গের আতিশয্যে নিজেকেও একটা যন্ত্র ছাড়া কিছুই মনে হয় না। কিন্তু নিজেকে ম্রিয়মাণ হতে দেওয়া যাবে না কিছুতেই। একটুখানি খেয়াল করুন প্রতিদিনের আয়নায় ভেসে ওঠা সেই ব্যক্তিটির দিকে, জগৎসংসারে যাকে ঘিরেই আপনার অস্তিত্ব।
শিশু সাহিত্যিক ও উন্নয়নকর্মী নিশাত সুলতানা বলেন, পেশাগত জীবন ও লেখালেখির প্রচণ্ড ব্যস্ততার মাঝেও আমি নিজের জন্য কিছুটা সময় বের করে নেই। আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য এটা খুব দরকার। নিজের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার জন্য আপনার প্রতিদিনের রুটিনে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। এর মধ্যে ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুমানো এবং নিজের জন্য সময় বের করার মতো ব্যাপারগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
যোগাযোগে থাকা : ভালো সামাজিক সম্পর্ক মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি একটি বন্ধুর সঙ্গে কথা বলা, কোনো গ্রুপে যোগদান বা স্বেচ্ছাসেবী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে হতে পারে। অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগে থাকা আপনার মেজাজকে ভালো রাখতে এবং ‘বিচ্ছিন্নতার’ অনুভূতি কমাতে সাহায্য করবে।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন : নিয়মিত ব্যায়াম এন্ডোরফিন (একটি হরমোন যা মন ভালো রাখতে সহায়ক) নিঃসরণের পাশাপাশি চাপ এবং উদ্বেগ কমাতেও সাহায্য করে। করতে পারেন যোগাসন।
আরও পড়ুন:
শীতে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন
শখগুলো ফিরিয়ে আনুন : পেশাদারি কাজের জায়গা যেটাই হোক, আমাদের সবারই এমন কিছু প্রিয় কাজ থাকে যার মধ্যে নিছক আনন্দ খুঁজে পাই। সেসব শখের কাজ হয়তো ঠিক ‘কাজের কাজ’ নয়, অনেক সময় তা অকাজ বলেই গণ্য হয়। নিজেকে ভালো রাখতে সেই অকাজগুলোর দিকে ফিরে তাকান। বহুদিন ধুলো পড়ে আছে, এমন স্কেচবুকের পাতাজুড়ে চলুক পেন্সিলের আঁকিবুঁকি। ছন্দ ছাড়া ছন্নছাড়া ডায়েরি লেখা, বারান্দায় রাখা গাছটায় দুটো ফুল ফোটাতে করা সাধ্য-সাধনা, শহুরে ছাদে ছুটির বিকালে রঙিন ঘুড়ি ওড়ানোÑ মোটমাট শখের হাঁড়িতে রাখা যে কোনো শখের জন্যই একটুখানি সময় বের করুন, নয়তো জগতের সব আনন্দ আয়োজন বৃথা মনে হবে।
স্বাস্থ্যকর খাবার খান : স্বাস্থ্যকর খাবার আপনার মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করবে। ফল এবং শাকসবজি, গোটা শস্য এবং চর্বিহীন প্রোটিনসমৃদ্ধ একটি মেন্যু মস্তিষ্ককে সঠিকভাবে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করার পাশাপাশি দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ কমায়।
মাইন্ডফুলনেস অনুশীলন : মাইন্ডফুলনেস হলো এই মুহূর্তে উপস্থিত থাকার এবং নিজের চিন্তাভাবনা ও অনুভূতির প্রতি মনোযোগ দেওয়ার অনুশীলন। এটি মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমানোর একটি দুর্দান্ত উপায়।
উপহার দিন নিজেকেও : যে কোনো আবেগী সম্পর্কেই উপহারের স্থানটা বিশেষ। উপলক্ষ থাকুক না থাকুক, প্রিয়জনের মুখে হাসি ফোটাতে তার পছন্দ-অপছন্দ ভেবে নিয়ে উপহার দেওয়ার রীতিটা বেশ প্রচলিত। কিন্তু অনেক সময় একই কাজ নিজের জন্য করা হয়ে ওঠে না। ঝুলিতে যোগ হতে পারে অনেকদিন ধরে কিনতে চেয়েও কেনা হচ্ছে না এমন কোনো জিনিস, নয়তো আকাক্সিক্ষত কোনো ছুটির দিন।
আরও পড়ুন:
জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণগুলো জেনে রাখুন
পর্যাপ্ত ঘুম : ভালো মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম অপরিহার্য। প্রতি রাতে প্রায় ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন এবং নিয়মিত ঘুমের নির্দিষ্ট সময় মেইনটেইন করুন।
নেতিবাচক চিন্তা বাদ দিন : নেতিবাচক চিন্তা বিষণ্নতা এবং উদ্বেগের অনুভূতি জন্ম দেয়। এই চিন্তাগুলোকে চ্যালেঞ্জ করে এবং একটি ইতিবাচক আলোকে তাদের পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে আপনি আপনার মেজাজ এবং মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে পারেন। এটা আপনার মধ্যে ইতিবাচক ও সুস্থ চিন্তাভাবনার বিকাশ ঘটাবে।
প্রফেশনালের সাহায্য নিন : যদি আপনার মানসিক স্বাস্থ্য সামলাতে হিমশিম খেতে হয়, এখনই সময় প্রফেশনাল কারও সাহায্য নেওয়ার। এ ক্ষেত্রে একজন থেরাপিস্ট, কাউন্সেলর বা সাইকিয়াট্রিস্টের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।
কৃতজ্ঞতার অভ্যাস করুন : আপনার জীবনের যে জিনিসগুলোর জন্য আপনি কৃতজ্ঞ তা উপলব্ধি করার জন্য সময় নিন। কৃতজ্ঞ থাকার এই অভ্যাস চাপ এবং উদ্বেগের অনুভূতি কমানোর পাশাপাশি আপনার মনকে রাখবে ফুরফুরে। সবার আগে প্রতিটি মুহূর্তের জন্য সৃষ্টিকর্তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।
আরও পড়ুন:
শীতে মুলা কেন খাবেন?
নিজের জন্য সময় নিন : নিজের জন্য সময় নেওয়া এবং আপনি যে জিনিসগুলো উপভোগ করেন তা করা গুরুত্বপূর্ণ। এটি একটি বই পড়া, গান শোনা বা প্রকৃতিতে হাঁটা থেকে যে কোনো কিছু হতে পারে। এগুলো নিজেকে রিচার্জ করার একটি দুর্দান্ত উপায়ও বটে! এই অনুশীলনগুলো আপনার রুটিনের একটি নিয়মিত অংশ করে ফেলুন। মনে রাখবেন, আপনার মানসিক স্বাস্থ্য আপনার শারীরিক স্বাস্থ্যের মতোই গুরুত্বপূর্ণ।