ঢাবিতে উচ্ছেদ অভিযানে সহিংসতার অভিযোগ গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ভাসমান দোকান উচ্ছেদ অভিযানে সহিংসতা, হকারদের ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী হয়রানির অভিযোগ এনে ডাকসু নেতৃত্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে সমসাময়িক বিষয়ে ডাকসু ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সমালোচনা করে।
সংগঠনটির অভিযোগ, ২৫ অক্টোবর থেকে ডাকসুর উদ্যোগে চালানো অভিযানে হকারদের ওপর শারীরিক নির্যাতন, দোকান ভাঙচুর, মালামাল জব্দ ও নারী হকারদের লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটেছে, যা ডাকসু ও বিশ্ববিদ্যালয়ের এখতিয়ার বহির্ভূত এবং ফৌজদারি অপরাধের শামিল। অতীতে প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান চালালেও পরবর্তী সময়ে একই দোকান প্রশাসনের মদদে পুনরায় বসার সুযোগ পেয়েছে। প্রক্টোরিয়াল টিমের কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে এসব দোকান থেকে চাঁদা তোলার অভিযোগ থাকলেও কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
সংগঠনটি অভিযোগ করে, সাম্প্রতিক অভিযানে হকারদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানানো বামপন্থি শিক্ষার্থীদের ‘উসকানিদাতা’ হিসেবে দায়ী করে ডাকসু নেতৃত্ব ফ্যাসিবাদী আচরণ প্রদর্শন করেছে।
তারা বলছে, প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের শোকজ করার আহ্বান ন্যক্কারজনক ও কর্তৃত্ববাদী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক এবি জুবায়ের ও সদস্য সর্ব মিত্র চাকমা নিজেদের ‘অপরাধমূলক কার্যক্রম’ আড়াল করতে সমালোচনাকারীদের বিরুদ্ধে অনলাইন-বট আক্রমণ ও মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছেন। বামপন্থী শিক্ষার্থীদের ‘মাদক সিন্ডিকেট’ বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, যা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ।
গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট জানায়, সম্প্রতি সময়ে যেসব ভাসমান দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে, সেগুলো মূলত চা, ফাস্টফুড, ফুল ও অলংকারের দোকান ছিল। মাদক ব্যাবসার সঙ্গে তাদের কোনও সম্পৃক্ততা নেই।
সংগঠনটির দাবি, কর্মসংস্থান নিশ্চিত না করে উচ্ছেদ কোনও সমাধান নয়; বরং সমস্যাকে আরও প্রকট করা।
ঢাকা শহরে বিনোদন কেন্দ্রের অভাব ও রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতাই বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অতিরিক্ত ভিড়ের মূল কারণ বলে মনে করছে তারা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যর্থতায় ক্যাম্পাস অনিরাপদ হয়ে পড়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক হত্যাকাণ্ডের উদাহরণও তারা তুলে ধরে।
নারীর নিরাপত্তা প্রসঙ্গে বলা হয়, প্রশাসনের দায়িত্বহীনতা ও যৌন নিপীড়নবিরোধী কমিটির অনুপস্থিতি নারীর নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ। ‘নারী হয়রানি ঠেকানোর নামে নারী দোকানদারদের উচ্ছেদ প্রকৃত সমস্যার সমাধান নয়’—উল্লেখ করে তারা ক্যাম্পাসে ‘নিরাপদ ক্যাম্পাস চার্টার’ প্রণয়নের দাবি জানায়।
আরও পড়ুন:
ইবির ইসলামের ইতিহাস বিভাগে তালা!
তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হিসাবে আমরা উদ্বাস্তু ও হকারদের সংকটকে রাষ্ট্রীয় সমস্যা মনে করি। গ্রামীণ অর্থনীতির পতন ও বেকারত্বের ফলে অনেকেই জীবিকার জন্য শহরে এসে ছোট ব্যবসায় যুক্ত হচ্ছে। তাদের নিরাপদ উদ্যোক্তা হিসেবে টিকে থাকতে রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব।’
সংগঠনটি আরও দাবি করে, ‘ডাকসু নেতা হোক বা অন্য যে কেউ, কারও ওপর শারীরিক আক্রমণের অধিকার নেই। উচ্ছেদ অভিযানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত, ক্ষতিপূরণ এবং বাজেয়াপ্ত মাল ফেরত দিতে হবে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘শাহবাগে এক রিকশাচালককে মারধর এবং শিক্ষার্থী আবির হাসানের ফোন তল্লাশি করে প্রক্টোরিয়াল টিম শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করেছে। এই আচরণ সম্পূর্ণ বেআইনি ও ফ্যাসিবাদী।’
গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমস্যাগুলোর স্থায়ী সমাধানে ৫টি পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছে। তাদের প্রস্তাব ও দাবিগুলো- হামলা ও হয়রানির ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার, ক্ষতিপূরণ ও মালামাল ফেরত। ভ্রাম্যমাণ জনগোষ্ঠীর বিকল্প কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা। মাদক সিন্ডিকেট ও চাঁদাবাজি তদন্ত করে দায়ীদের শাস্তি।
এছাড়া, নিরাপদ, শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতে ‘নিরাপদ ক্যাম্পাস চার্টার’ প্রণয়ন করার প্রস্তাবনা জানিয়েছে এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা, মিথ্যা প্রচারণা বন্ধ এবং প্রশাসনের অগণতান্ত্রিক আচরণের প্রতিকার।
তাদের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ডাকসু সদস্যদের এই ধরনের মিথ্যাচার ও ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ড চিহ্নিত করবে এবং প্রত্যাখ্যান করবে।’
গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের পক্ষ থেকে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সাধারণ সম্পাদক সামি আবদুল্লাহ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ঢাবি শাখা আহ্বায়ক মুজাম্মেল হক, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ঢাবি শাখা মাহীন আহমেদ লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।