শিশুর ত্বকে অ্যালার্জি হতে পারে আর্টিকারিয়া বা আমবাত রোগ
শিশুর ত্বকে অ্যালার্জিজনিত আর্টিকারিয়া (সাধারণভাবে আমবাত নামে পরিচিত) রোগ দেখা দিতে পারে। এটি একটি চর্মরোগ। প্রায় ২০ শতাংশ মানুষের জীবনে কোনো না কোনো সময় এ রোগ দেখা দেয়। শিশুর ত্বকে হঠাৎ করে লালচে ফোস্কা বা চাকা ওঠা, চুলকানো, অনেক সময় ফুলে যাওয়া এ রোগের সাধারণ লক্ষণ। কখনও কখনও চোখের পাতা, ঠোঁট, হাত বা শরীরের অন্যান্য অংশ ফুলে গিয়ে আতঙ্কজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এ অবস্থায় দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ না নিলে জটিল আকার ধারণ করে।
এই রোগের প্রকারভেদ মূলত সময়ের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়। যেসব আমবাত ছয় সপ্তাহের কম সময় স্থায়ী হয়, সেগুলোকে স্বল্পমেয়াদি আমবাত বলা হয়। আবার যেসব আমবাত ছয় সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ত্বকে থেকে যায়, সেগুলোকে দীর্ঘমেয়াদি আমবাত বলা হয়। দীর্ঘমেয়াদি আমবাত সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা গেলেও শিশুদের মাঝে তা দেখা দিতে পারে। আর্টিকারিয়া মূলত শরীরে দুটি উপায়ে সক্রিয় হয়- ইমিউনোলজিক ও নন-ইমিউনোলজিক প্রক্রিয়ায়। ইমিউনোলজিক পদ্ধতিতে শরীরের ত্বকের নিচে অবস্থান করা মাস্ট সেল নামক কোষগুলো কোনো অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে এসে সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং তখন রক্তে হিস্তামিনসহ বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ ঘটে। এ রাসায়নিকগুলোর প্রভাবে ত্বকে প্রদাহ তৈরি হয়, যা চুলকানি ও ফোলাভাবের সৃষ্টি করে। এ ধরনের প্রতিক্রিয়ায় চিংড়ি মাছ, ইলিশ মাছ, গরু বা হাঁসের মাংস, ডিম, বেগুন, ধুলাবালি, ফুলের রেণু, পোকামাকড়ের কামড়, এমনকি বিভিন্ন রাসায়নিক ও ওষুধ, যেমন- অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যাসপিরিন জাতীয় ব্যথানাশক ওষুধ এবং এক্স-রে পরীক্ষায় ব্যবহৃত কনট্রাস্ট ডাই থেকেও আর্টিকারিয়া দেখা দিতে পারে। অনেক সময় শ্বাসনালিতে কোনো উৎকট গন্ধ প্রবেশ করলে, ভাইরাসজনিত সংক্রমণ হলে বা কোনো রাসায়নিকের সংস্পর্শে এলেও এই রোগের সূত্রপাত হতে পারে।
এ রোগের জটিল রূপ হলো অ্যানজিওইডিমা, যা তখনই দেখা দেয়, যখন আমবাত ত্বকের গভীরে ছড়িয়ে পড়ে। এতে চুলকানির তুলনায় ব্যথা বেশি হয় এবং শিশুর হাত, পা, চোখ, ঠোঁট বা মুখের অংশ ফুলে যায়। অনেক সময় শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানির মতো গুরুতর উপসর্গ দেখা দেয়। যদি এই অবস্থা বারবার দেখা দেয় এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের মাঝেও একই ধরনের ইতিহাস থাকে, তাহলে তা বংশগত অ্যানজিওইডিমা হিসেবে চিহ্নিত হয়। এ ধরনের রোগীর শরীরে জন্মগতভাবে একটি নির্দিষ্ট এনজাইম ইনহিবিটরের ঘাটতি থাকতে পারে, যা এই প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়। এ ধরনের রোগে পরিবারে অন্য কারও মাঝে এ রোগের ইতিহাস আছে কিনা, তা জানা জরুরি।
আরও পড়ুন:
শীতে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন
চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রথমেই শিশু কোন খাবার, ওষুধ বা পরিবেশগত উপাদানে সংবেদনশীল, তা নির্ধারণ করে তাকে তা থেকে দূরে রাখা প্রয়োজন। এরপর উপসর্গ নিয়ন্ত্রণের জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ ব্যবহৃত হয়। ত্বকে ক্যালামাইন লোশন প্রয়োগ করলে সাময়িক আরাম পাওয়া যায় এবং চুলকানি কিছুটা কমে আসে। গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। চিকিৎসাকালে শিশুর শরীরে সাবান, তেল কিংবা কোনো প্রসাধনী ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। কারণ এগুলো রোগকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। তাছাড়া মশা বা পোকামাকড়ের কামড় এড়াতে ফুলহাতা জামা-কাপড় পরানো উচিত এবং রোদে বের হওয়ার সময় ছাতা ও রোদচশমা ব্যবহার করাও উপকারী।
লেখক : অধ্যাপক, শিশুরোগ বিভাগ
আরও পড়ুন:
জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণগুলো জেনে রাখুন
চেম্বার : আলোক মাদার এন্ড চাইল্ড কেয়ার, মিরপুর -৬, ঢাকা
হটলাইন : ১০৬৭২, ০৯৬১০১০০৯৯৯
আরও পড়ুন:
শীতে মুলা কেন খাবেন?