স্বয়ংক্রিয় এজেন্ট : এআইয়ের নতুন দিগন্ত
জেনারেটিভ এআই বা চ্যাটবটগুলো কয়েক বছর ধরে প্রযুক্তির কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। তবে এখন আমরা এআইয়ের এক নতুন যুগের দ্বারপ্রান্তে, যেখানে শুধু প্রশ্ন করে উত্তর পাওয়া বা কনটেন্ট তৈরি করাই শেষ কথা নয়। এই নতুন যুগটি হলো ‘এজেন্টিক এআই’ (Agentic AI) বা স্বয়ংক্রিয় এআই সিস্টেমের। এই প্রযুক্তি মানুষের দেওয়া নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণের জন্য নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারে, একাধিক ধাপের পরিকল্পনা করতে পারে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারে। ইন্টারনেট থেকে তথ্য নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন জামিউর রহমান
এজেন্টিক এআই হলো জেনারেটিভ এআইয়ের পরবর্তী ধাপ। চ্যাটজিপিটি বা গুগল জেমিনির মতো মডেলগুলোকে আপনি যখন কোনো কাজ করতে বলেন, তখন তারা উত্তর দিয়ে থেমে যায়। কিন্তু এজেন্টিক এআই হলো এমন সফটওয়্যার, যা আপনার লক্ষ্যটিকে একাধিক ছোট ধাপে ভাগ করে, সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে, বিভিন্ন টুল ব্যবহার করে এবং সম্পূর্ণ কাজটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি চালু রাখে- অনেকটা একজন দক্ষ কর্মচারীর মতো।
যেভাবে কাজ করে এই স্বয়ংক্রিয় এআই : এজেন্টিক এআইয়ের মূল কাঠামো তিনটি প্রধান স্তরের ওপর নির্ভর করে-
পরিকল্পনা : এটি ব্যবহারকারীর কাছ থেকে একটি বড় লক্ষ্য গ্রহণ করে (যেমন : ‘আমার জন্য আগামী তিন মাসের মধ্যে নতুন একটি মার্কেটিং ক্যাম্পেইনের কৌশল তৈরি করো’)। এরপর এআই নিজেই সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য ছোট ছোট ধাপে একটি কার্যকর কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে।
স্মৃতি ও যুক্তি : এজেন্টের একটি ‘স্বল্পমেয়াদি’ স্মৃতি এবং একটি ‘দীর্ঘমেয়াদি’ স্মৃতি থাকে। স্বল্পমেয়াদি স্মৃতি বর্তমান কাজটির গতিবিধি মনে রাখে, আর দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতি আগের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের সিদ্ধান্তগুলোকে উন্নত করে। এটি তার যুক্তি ব্যবহার করে সঠিক সময়ে সঠিক টুল বা পদক্ষেপটি বেছে নেয়।
টুল ব্যবহার : এজেন্ট শুধু তথ্য তৈরি করে না, এটি বাহ্যিক অ্যাপ্লিকেশন ও সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। যেমন- এটি গুগল সার্চ ব্যবহার করে তথ্য নিতে পারে, কোনো স্প্রেডশিট আপডেট করতে পারে বা ই-মেইল পাঠাতে পারে।
কাজের জগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন : করপোরেট জগৎ দ্রুত এই প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকছে। গার্টনারের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৮ সালের মধ্যে প্রায় ৩৩% এন্টারপ্রাইজ সফটওয়্যারে এজেন্টিক এআই-কে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। যে কাজগুলো এতদিন একাধিক কর্মী এবং বিভাগের মাধ্যমে সম্পন্ন হতো, এখন তা একটি এআই এজেন্টের মাধ্যমে আরও দ্রুত ও নিখুঁতভাবে করা সম্ভব।
এআই এজেন্টরা যে কাজে অবদান রাখতে পারে
মার্কেটিং এবং সেলস : এআই এজেন্টরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাজারের ট্রেন্ড বিশ্লেষণ করে, কাস্টমারদের আচরণের পূর্বাভাস দেয় এবং পুরো মার্কেটিং বাজেট দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করে।
আরও পড়ুন:
যে গ্রহে হয় বালুবৃষ্টি
সাপ্লাই চেইন : বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনে জটিলতা ও অনিশ্চয়তা মোকাবিলায় এজেন্টরা রিয়েল-টাইম ডেটা ব্যবহার করে পণ্য সরবরাহ এবং লজিস্টিকসের পরিকল্পনাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট : ‘কোডিং কোপাইলট’-এর মাধ্যমে ডেভেলপাররা এখন কোড লেখার ক্ষেত্রে প্রতিদিন প্রায় দুই ঘণ্টা সময় সাশ্রয় করছেন। এজেন্টিক এআই এই প্রক্রিয়াকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। ভবিষ্যতে এআই নিজেই সামান্য নির্দেশনায় সফটওয়্যার বাগ ঠিক করতে বা নতুন ফিচার যোগ করতে পারবে।
এজেন্টিক এআইয়ের চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি : এজেন্টিক এআই যত স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছে, ততই এর ঝুঁকি এবং নৈতিক প্রশ্নগুলো সামনে আসছে।
কর্মসংস্থান : এআই এজেন্টরা যেহেতু মানুষের মতো ‘উদ্দেশ্য-চালিত’ কাজগুলোও স্বয়ংক্রিয়ভাবে করতে পারে, তাই অনেক বিশ্লেষকের মতে এটি ডেটা এন্ট্রি, কাস্টমার সাপোর্ট বা ব্যাক-অফিসের মতো রুটিন কাজগুলোতে বড় ধরনের কর্মী ছাঁটাই ঘটাতে পারে। যারা এআইয়ের সঙ্গে কাজ করতে শিখবেন, তারাই এই নতুন যুগে টিকে থাকবেন।
আরও পড়ুন:
এআই টিম ভেঙে দিল মেটা
নিয়ন্ত্রণের অভাব : একটি স্বয়ংক্রিয় এজেন্টকে যদি একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য দেওয়া হয়, তবে সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য সে এমন পদক্ষেপ নিতে পারে যা নৈতিকভাবে বা আইনিভাবে বিতর্কিত। এআইয়ের কাজ ও সিদ্ধান্তগুলো পর্যবেক্ষণ এবং প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি শক্তিশালী ‘এআই গভর্ন্যান্স প্ল্যাটফর্ম’ তৈরি করা এখন সময়ের দাবি।
ভুল এবং মিথ্যা তথ্য : এজেন্টের নেওয়া একটি ভুল সিদ্ধান্ত বা ব্যবহৃত কোনো ভুল তথ্য গোটা একটি সংস্থাকে বড় ক্ষতির মুখে ফেলতে পারে।