গ্লুকোমা নামক মারাত্মক রোগটি প্রতিরোধ করবে যেভাবে

ডা. ইফতেখার মো. মুনির
২২ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:২০
শেয়ার :
গ্লুকোমা নামক মারাত্মক রোগটি প্রতিরোধ করবে যেভাবে

গ্লুকোমা সম্পর্কে তেমন কোনো প্রচার-প্রচারণা নেই। অনেক মানুষের তাই এ রোগ সম্পর্কে ধারণা কম। ফলে সচেতনতার অভাবে এক বিরাট জনগোষ্ঠী অপরিবর্তনযোগ্য অন্ধত্বের শিকার হন। স্থায়ীভাবে এ রোগের কোনো প্রতিকার নেই। প্রতিরোধই একমাত্র উপায়। প্রথমেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে রোগটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। গ্লুকোমা চোখের রোগ। শরীরের রক্তের যেমন নির্দিষ্ট প্রেসার আছে, তেমনি চোখেরও নির্দিষ্ট প্রেসার আছে। এর মাত্রা থাকবে ১০ থেকে ২১ মিলিমিটার মার্কারি। যদি প্রেসার এ মাত্রায় থাকে, তাহলে এটিকে বলে চোখের স্বাভাবিক প্রেসার। কোনো কারণে যদি এ প্রেসার ২১ মিলিমিটার মার্কারির বেশি হয়, তাহলে চোখের যে নার্ভ দৃষ্টি শক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে, সে নার্ভের ক্ষয় হওয়া শুরু হয়। ফলে রোগী চোখে কম দেখতে শুরু করেন। চোখের প্রেসার বেড়ে যাওয়ায় অপটিক নার্ভের ক্ষয় হওয়া এবং রোগী চোখে কম দেখাকে সমন্বিতভাবে বলে গ্লুকোমা।

রোগের লক্ষণ : গ্লুকোমার প্রকারভেদের ওপর রোগের লক্ষণ নির্ভর করে। তিন ধরনের গ্লুকোমা দেখতে পাওয়া যায়Ñ প্রাইমারি ওপেন অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা, ন্যাড়া অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা ও কনজেনিটাল গ্লুকোমা। সাধারণত ওপেন অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা উপসর্গহীন। রোগী আক্রান্ত হলেও বলতে পারেন না। রোগী যখন ডাক্তারের কাছে আসেন, তখন ধরা পড়ে। যেমন চোখের প্রেসার বেড়ে যাওয়া, অপটিক নার্ভের ক্ষয় হয়ে ভেতরে কাফিং দেখা যাওয়া এবং রোগীর দৃষ্টির ব্যাপ্তি সংকুচিত হওয়া। অন্যদিকে ন্যাড়া অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমার লক্ষণ হলো চোখে ব্যথা হওয়া, লাল হওয়া। কনজেনিটাল গ্লুকোমা শিশুদের হয়ে থাকে। এর লক্ষণÑ জন্মের পর পর শিশুর চোখ বড় হয়ে যাওয়া, চোখ থেকে পানি পড়া ও রুমের লাইট জ্বালানো হলে শিশু চোখ বন্ধ করে ফেলে।

রোগের কারণ : ছানি অপারেশন না করলে তা থেকে বেশি পেকে গিয়ে চোখের প্রেসার বেশি হতে পারে। চুলকানির জন্য স্টেরয়েড বেশিদিন ব্যবহার করলে হতে পারে। চোখের ভেতরে প্রদাহজনিত কারণে হতে পারে।

যাদের চোখ পরীক্ষা করা জরুরি : প্রাইমারি গ্লুকোমার কেন হয়, তা জানা যায় না। কিন্তু সেকেন্ডারি গ্লুকোমা কেন হয়, তা জানা যায়। প্রাইমারি গ্লুকোমা সাধারণত পঁয়ত্রিশ বছরের পরে হয়। এজন্য যারা প্রাপ্তবয়স্ক, তারা পরীক্ষার মাধ্যমে নিজের চোখের প্রেসার জেনে নেবেন। বিশেষ করে যাদের পরিবারে গ্লুকোমা রয়েছে, চোখে আঘাতজনিত কারণ রয়েছে, প্রদাহজনিত কারণ রয়েছে, যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, মাইগ্রেন ইত্যাদি রোগ আছে, মাইনাস পাওয়ারের চশমা ব্যবহার করেন, তাদের উচিত প্রতিবছর একবার চোখের প্রেসার পরীক্ষা করা। গ্লুকোমার সন্দেহ হলে চিকিৎসক যেসব পরীক্ষা দেয়, তা করে নেওয়া ভালো। উপজেলা পর্যায়ে পরীক্ষা করানো সম্ভব না হলে জেলা সদরে, তাও সম্ভব না হলে মেডিক্যাল কলেজ বা যেখানে এটা করা সম্ভব, সেখানে থেকে পরীক্ষাগুলো করাতে হবে।

চিকিৎসা : গ্লুকোমা নিরাময়যোগ্য না হলেও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের মতো এ রোগের চিকিৎসা সারাজীবন করে যেতে হবে। দৃষ্টি যাতে আর কমে না যায়, তার জন্য চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।

প্রতিরোধ : রোগটির স্থায়ী কোনো সমাধান নেই। সময়মতো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে নিয়মিত চোখ পরীক্ষা ও তার পরামর্শ মেনে চলা উচিত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, নিয়মিত ওষুধ ব্যবহার করা।

লেখক : গ্লুকোমা বিশেষজ্ঞ ও পরিচালক এবং অধ্যাপক ও সাবেক বিভাগীয় প্রধান, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ আই হসপিটাল, মালিবাগ শাখা, ঢাকা। হটলাইন : ০৯৬১৩৯৬৬৯৬৬, ০১৭৮৯৭৭৯৯৫৫