স্যানিটারি পণ্যে সচেতনতা বাড়াতে ঢাবিতে ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন করলো ‘ফ্রেশ অনন্যা’

অনলাইন ডেস্ক
২১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬:৩৭
শেয়ার :
স্যানিটারি পণ্যে সচেতনতা বাড়াতে ঢাবিতে ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন করলো ‘ফ্রেশ অনন্যা’

দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ (এমজিআই)-এর জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ‘ফ্রেশ অনন্যা স্যানিটারি ন্যাপকিন’ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ যৌথভাবে জ্ঞানচর্চা ও সামাজিক পরিবর্তন আনতে যৌথভাবে একটি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

কর্মসূচির অংশ হিসেবে মাসিক স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ফ্রেশ অনন্যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন করেছে। পাশাপাশি ফ্রেশ অনন্যা ও উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ যৌথভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে ‘মেনস্ট্রুয়াল হাইজিন অ্যান্ড হেলথ অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রাম’ শীর্ষক একটি সেমিনারের আয়োজন করে।

এই যৌথ উদ্যোগটি দেশের অন্যতম অগ্রণী বিদ্যাপীঠ হিসেবে ঢাবির ভূমিকা এবং মাসিক স্বাস্থ্যবিধির মতো সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের উদার দৃষ্টিভঙ্গিকে তুলে ধরে।

আয়োজকদের প্রত্যাশা, এ ধরনের উদ্যোগ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সেমিনারে বিভাগের চেয়ারপারসন ও সহযোগী অধ্যাপক ড. সাবিহা ইয়াসমিন রোজি এবং অধ্যাপক ড. সানজিদা আখতার বলেন, কিছু ক্ষেত্রে অগ্রগতি এলেও নারীস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণে মাসিক- একটি স্বাভাবিক জৈবিক প্রক্রিয়াকে এখনও প্রতিবন্ধক হিসেবে দেখা হয়। তারা ফ্রেশ অনন্যাকে এ বিষয়ে বাস্তবধর্মী ও চিন্তাশীল ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান খান তার বক্তব্যে নারীদের জন্য একটি নিরাপদ ও উন্মুক্ত সমাজ গঠনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন, যেখানে মাসিকের মতো স্বাভাবিক বিষয়ে নারীরা আরও আত্মবিশ্বাসী হতে পারবেন। তিনি বলেন, সমাজ গঠনে নারীরা উপহারস্বরূপ, তাদের ভূমিকা অপরিসীম। পাশাপাশি তিনি বাবা-মেয়ে, ভাই-বোনের মধ্যে খোলামেলা কথোপকথনের আহ্বান জানান, যেন পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় হয় এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সম্মানবোধ গড়ে ওঠে।

ফ্রেশ অনন্যা বাজারে আনার পেছনে দুটি মূল লক্ষ্য উল্লেখ করেন এমজিআই পরিচালক ব্যারিস্টার তাসনিম মোস্তফা। তিনি বলেন, নারীস্বাস্থ্য নিশ্চিতের মাধ্যমে প্রাত্যহিক জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য আনা এবং সামাজিকভাবে ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করাই এর উদ্দেশ্য। তবে তিনি উল্লেখ করেন, এ ধরনের পরিবর্তন শুধু একটি ব্র্যান্ডের পক্ষে সম্ভব নয়; প্রতিষ্ঠান, নীতিনির্ধারক এবং সংস্কৃতিগতভাবে সবাইকে একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি জানান, ফ্রেশ অনন্যা থেকে ভবিষ্যতে আরও বৃহৎ পরিসরে কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে এবং নারীদের জন্য প্রয়োজনীয় ও সহজলভ্য পণ্য বাজারে আনা হবে।

সেমিনারের অন্যান্য আয়োজনের মধ্যে ছিল ড. তাজকিয়াতুল ইসলাম মহুয়ার পরিচালনায় একটি মাসিক স্বাস্থ্য সেশন এবং ড. রুবাইয়াত ফেরদৌসের মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সেশন। প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে নারী শিক্ষার্থীদের সৌজন্য উপহার হিসেবে স্যানিটারি ন্যাপকিন দেওয়া হয়। আমন্ত্রিত শিক্ষার্থীদের ‘মাসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা এবং সামাজিক প্রতিবন্ধকতা’ নিয়ে একটি রচনা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানানো হয়।

২০২৫ সালে রিপ্রোডাকটিভ হেলথ জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের মাত্র ২৮.৬ শতাংশ কিশোরী যথাযথ মাসিক স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে। এই বাস্তবতায়, সামাজিক সচেতনতা ও স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করতে এখন থেকেই যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অংশীদারত্ব, সচেতনতামূলক আয়োজন এবং ক্যাম্পাসে ভেন্ডিং মেশিন স্থাপনসহ নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে ফ্রেশ অনন্যা নারীর ক্ষমতায়ন এবং পিরিয়ড-স্বাস্থ্য বিষয়ে আলোচনা স্বাভাবিক করে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে। যেন কোনো নারী শিক্ষার্থী বা কর্মজীবী নারী মাসিকের কারণে শিক্ষা বা কর্মক্ষেত্রে পিছিয়ে না পড়ে।

আমাাদের সময়/ এইচও