সমাবেশে বক্তব্য শেষে টাঙ্গাইলে বিএনপি সভাপতির মৃত্যু
সমাবেশে বক্তব্য শেষে টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হামিদুল হক মোহনের মৃত্যু হয়েছে।
টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে সোমবার (২০ অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এর আগে সোমবার বিকেলে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার দেওলী এলাকায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য শেষ করে এলাসিনে অপর একটি প্রচারণায় যোগ দিতে যাওয়ার পথে তিনি হৃদযন্ত্রে আক্রান্ত হন।
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের সিসিইউতে (করোনারি কেয়ার ইউনিট) কর্তব্যরত চিকিৎসক মাহমুদুল হক।
আরও পড়ুন:
ডেঙ্গুতে ৬ জনের মৃত্যু
জানা গেছে, হামিদুল হকের বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। তিনি স্ত্রী, ২ ছেলে, ৩ মেয়ে রেখে গেছেন। উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে ভাষাসৈনিক সৈয়দ আব্দুল মতিনের ছোট বোন নুরুন্নাহার পুটির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি।
প্রসঙ্গত, প্রবীণ এই রাজনীতিক আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।
দেলদুয়ার উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এসএম ফেরদৌস বলেন, ‘১২ অক্টোবর দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে টাঙ্গাইল-৬ (দেলদুয়ার-নাগরপুর) থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে ঘোষণা দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা হামিদুল হক মোহন । যার কারণে বিভিন্ন জায়গায় জনসংযোগ করার জন্য সভা-সমাবেশ করছেন কয়েকদিন যাবত। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার দেলদুয়ার উপজেলার দেওলী এলাকায় নির্বাচনী জনসভা শেষ করেন। এরপর এলাসিন এলাকায় অপর একটি প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে যাওয়ার পথে তিনি হৃদযন্ত্রে আক্রান্ত হন। তাকে অচেতন অবস্থায় টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে সিসিইউতে তাকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।
হামিদুল হকের বড় ছেলে মিল্টন হক জানিয়েছেন, আজ বাদ জোহর জানাজার নামাজ টাঙ্গাইল বিন্দু বাসিনি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে মাঠে হবে এবং টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
উল্লেখ্য, হামিদুল হক মোহন ৮ আগস্ট ১৯৫২ সালে টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলার মঙ্গলহোড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম আইনউদ্দিন আহমেদ ছিলেন পাথরাইল ইউনিয়নের দীর্ঘদিনের চেয়ারম্যান ও সমাজসেবক।
স্কুলছাত্র থাকা অবস্থায় ছাত্র ইউনিয়নের (মেনন গ্রুপ) মাধ্যমে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন হামিদুল হক। ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানে তিনি টাঙ্গাইল জেলা সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন এবং স্বাধীনতার পর ভাসানী ন্যাপের রাজনীতে যুক্ত হন। পরে ভাসানী ন্যাপ বিএনপির সঙ্গে একীভূত হয়। তিনি টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালে সভাপতি হন। টানা ১৭ বছর জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। পাশাপাশি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি।
এছাড়া টাঙ্গাইল জেলা মোহামেডাম স্পোটিং ক্লাবের সভাপতি, টাঙ্গাইল জেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রথম নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান এবং দীর্ঘদিন টাঙ্গাইল জেলা ফুটবল লীগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। টাঙ্গাইল নাগরিক অধিকার সুরক্ষা কমিটিরও সভাপতি ছিলেন প্রয়াত এই নেতা।
আমাদের সময়/আরআর