রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিক্রিয়া /

দ্বিধা কাটিয়ে দ্রুত সনদ বাস্তবায়নের আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:০১
শেয়ার :
দ্বিধা কাটিয়ে দ্রুত সনদ বাস্তবায়নের আহ্বান

জুলাই সনদে স্বাক্ষরকে দেশের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা বলে আখ্যা দিয়েছে বিএনপি। জুলাই সনদ বস্তবায়নে কোনো শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে দলটি। সনদের দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াত নেতারা, আর এবি পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদ অংশীদার দলগুলোর মধ্যে ‘ইগো’ ও ‘দ্বিধা’ কাটিয়ে সহযোগিতার তাগিদ দিয়েছেন। কেউ কেউ আশা করছেন, স্বাক্ষর না করা দলগুলোও পরে এতে যুক্ত হবে।

গতকাল শুক্রবার বিকালে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদ স্বাক্ষর শেষে সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, জুলাই সনদ স্বাক্ষর বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে একটা নতুন অধ্যায়ের সূচনা। সনদ স্বাক্ষরের জন্য প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, সব রাজনৈতিক দল এবং জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান বিএনপি মহাসচিব।

জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন এবং সংস্কার কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় বিএনপির পক্ষে নেতৃত্ব দেওয়া সালাহউদ্দিন বলেন, এই যাত্রার মধ্য দিয়ে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান নির্মিত হবে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো নির্মিত হবে, রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে ভারসাম্য সৃষ্টি হবে। রাষ্ট্রের কোনো অঙ্গ আরেকটি অঙ্গের ওপরে কর্তৃত্ব প্রদর্শন করতে পারবে না। তিনি বলেন, সব রাজনৈতিক দল জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছেন। যারা দুই-একজন স্বাক্ষর করেননি, আশা করি তারাও ভবিষ্যতে স্বাক্ষর করবেন। সেটা উন্মুক্ত রাখা আছে। এদিকে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে ‘শঙ্কার কিছু নেই’

বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এজেডএম জাহিদ হোসেন। শুক্রবার সকালে শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। জাহিদ বলেন, রাষ্ট্র যখন দায়িত্ব নেয় কোনো একটি সনদ বা কোনো একটি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য, সেখানে এটি নিয়ে আমার মনে হয় না কারো মনে কোনো ভীতি অথবা শঙ্কা থাকার কারণ আছে যে, এটি ভবিষ্যতে বাস্তবায়ন হবে না।

শেষ মুহূর্তে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে না আসাটা ডিস্টার্বের অংশ

জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের অংশ না নেওয়ার বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সনদ তৈরি হয়েছে। শেষ মুহূর্তে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে কারও না আসাটা ডিস্টার্বের অংশ।

বাস্তবায়নে বিলম্ব হলে গাদ্দারি হবে

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে কোনো ধরনের বিলম্ব হলে তা জাতির সঙ্গে গাদ্দারি হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। গতকাল শুক্রবার বিকালে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পর গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার আগেই জামায়াত স্বাক্ষর করল কেন?Ñ এমন প্রশ্নের জবাবে তাহের বলেন, এতদিন যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে সেগুলোর সঙ্গে আমরা একমত। এ জন্য আমরা সই করেছি। তিনি বলেন, ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে সেটা যেন এই সরকার বাস্তবায়ন করে।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এখন স্বাক্ষর না করলেও পরে করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর। গতকাল শুক্রবার জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষে তিনি বলেন, তারা আমাদের আন্দোলন-সংগ্রামের বন্ধু। কিন্তু তাদের আজ এখানে পাওয়া যায়নি। তারা বোধহয় পরবর্তীতে স্বাক্ষর করতে পারে। কারণ শেষদিকে এসে তাদের মতামত ঐকমত্য কমিশন গ্রহণ করেছে।

বাস্তবায়নে সহযোগিতার আহ্বান এবি পার্টির

অন্তর্বর্তী সরকারের আস্থাভাজন দলগুলোকে ইগো পরিহার করে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। গতকাল সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এবি পার্টির পক্ষ থেকে দলের চেয়ারম্যান মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ সনদে স্বাক্ষর করেন।

অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মঞ্জু বলেন, আশা করি সংশয় ও সংকট কেটে যাবে। ইগো পরিহার করে অন্তর্বর্তী সরকারের আস্থাভাজন তিনটি রাজনৈতিক দলকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করতে হবে। বিএনপি সবচেয়ে বড় দলÑ তারা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় ছিল, আবার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। এই অভিজ্ঞতা ও অবস্থানই তাদের ইগো। জামায়াত সবচেয়ে সুসংগঠিত দল, দমন-নিপীড়ন সয়েও তারা হাল ছাড়েনি; বর্তমানে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছেÑ এটাও এক ধরনের ইগো। আর এনসিপিÑ যারা জুলাই অভ্যুত্থানের হিরো, তাদের নেতৃত্বেই ফ্যাসিবাদের পতন ঘটেছে। এই সাফল্যও তাদের মধ্যে ইগো তৈরি করেছে।

মঞ্জু বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার এই তিন দলকে সব সময় বড় দল বা গুরুত্বপূর্ণ দল হিসেবে মর্যাদা দিয়েছে। কিন্তু এখন দেখছি, তাদের ইগো ঐকমত্যের পথে অন্তরায় হয়ে উঠছে।

আগামী সংসদে সনদ কার্যকর করা উচিত

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, আগামী সংসদের প্রথম অধিবেশনেই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে জুলাই সনদ কার্যকর করা উচিত। গতকাল সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষে তিনি বলেন, জুলাই সনদের মর্মকথা হচ্ছে কোনো ব্যক্তি বা দল যাতে স্বৈরাচার হয়ে উঠতে না পারে। সনদটি কার্যকরের মধ্য দিয়ে এটি নিশ্চিত করা যাবে। তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক দল, জনগণ ও নির্বাচন কমিশনকে আস্থার মধ্যে নিতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে। এরপর গণভোট ও নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।


আমাদের সময় / এইচও