১৬ কোটি বছর আগের ডাইনোসরের পায়ের ছাপের সন্ধান মিললো
যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ডশায়ারের এক খনিতে মাটির নিচ থেকে উন্মোচিত হয়েছে পৃথিবীর প্রাগৈতিহাসিক অতীতের এক বিস্ময়কর নিদর্শন—ডাইনোসরের পায়ের ছাপের এক দীর্ঘ সারি, যা বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন ‘ডাইনোসর সুপারহাইওয়ে’।
১৬৬ মিলিয়ন (প্রায় ১৬ কোটি) বছরের পুরনো নিদর্শন
যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিওনটোলজিস্টরা এ গ্রীষ্মে ডিউয়ারস ফার্ম খনি এলাকায় খননকাজ চালান। সেখানে আবিষ্কৃত হয়েছে প্রায় ২২০ মিটার দীর্ঘ পায়ের ছাপের পথ, যা ইউরোপের অন্যতম দীর্ঘতম ডাইনোসর ট্র্যাকওয়ে হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক ইতিহাস জাদুঘরের গবেষক এমা নিকলস বলেন, ‘এগুলো বিশালাকার পায়ের ছাপ—সম্ভবত সিটিওসরাস নামের এক প্রজাতির, যা চার পায়ে হাঁটত, লম্বায় প্রায় ১৮ মিটার পর্যন্ত হতো।’
হাজার বছর পুরনো কাদার নিচে লুকানো ইতিহাস
খনির মধ্যে নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণের মাধ্যমে প্রাচীন চুনাপাথরের স্তর সরিয়ে এই ছাপগুলো উদ্ধার করা হয়। প্রতিটি ছাপে দেখা যায় সামনের দিকে হালকা উঁচু দাগ—যা নির্দেশ করে ডাইনোসরটি কাদার ভেতর দিয়ে কোন দিকে চলছিল।
শুধু বিশাল সিটিওসরাস নয়, একই স্থানে পাওয়া গেছে মেগালোসরাস নামের এক মাংসাশী ডাইনোসরের তিন আঙুলওয়ালা পায়ের ছাপও। এই প্রজাতির দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় নয় মিটার, এবং তারা জুরাসিক যুগে এই অঞ্চলে শিকার করত।
আরও পড়ুন:
তাপমাত্রা যখন সর্বনিম্ন!
‘ডাইনোসরদের হাঁটার ভিডিও’র মতো জীবন্ত প্রমাণ
লিভারপুল জন মুরস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিটার ফকিংহাম বলেন,‘এগুলো শুধু জীবাশ্ম নয়, প্রাণীদের প্রকৃত চলাচলের চিত্র। এখানে আমরা শত শত মিটারজুড়ে দেখতে পাচ্ছি ডাইনোসররা নিজের মতো করে হেঁটেছে, থেমেছে, আবার এগিয়েছে।’
একটি বিশেষ পায়ের ছাপ বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন—এক জায়গায় ডাইনোসরটি সামান্য থেমেছিল বা হোঁচট খেয়েছিল, তারপর আবার হাঁটা শুরু করে।
‘ঠিক সেই মুহূর্তটাই যেন সময়ের ফ্রেমে বন্দি হয়ে আছে’, বলেন অধ্যাপক ফকিংহাম।
আরও পড়ুন:
দি নিউ স্কুল ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘পিঠা পার্বণ’
কীভাবে সংরক্ষিত রইল এই ছাপগুলো?
ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহামের প্যালিওনটোলজিস্ট কার্স্টি এডগার জানান, সঠিক পরিবেশের ‘গোল্ডিলকস এফেক্ট’ ছাড়া এমন সংরক্ষণ সম্ভব নয়।
‘কাদা হতে হবে সঠিক ঘনত্বের, আবহাওয়া হতে হবে অনুকূল—তবেই সূর্যের তাপে শক্ত হয়ে পরে সেগুলো নতুন পলিতে ঢেকে যায় এবং কোটি বছর ধরে টিকে থাকে।’
জুরাসিক যুগের ইংল্যান্ড
১৬৬ মিলিয়ন বছর আগে যুক্তরাজ্য ছিল নিরক্ষীয় অঞ্চলের কাছাকাছি, যেখানে ছিল অগভীর উষ্ণ সমুদ্র ও হ্রদে ভরা একটি উপকূলীয় ভূখণ্ড। গবেষকেরা ক্ষুদ্র সামুদ্রিক জীব—বেলেমনাইট, ব্র্যাকিওপড, ও সমুদ্র সজারু—এর জীবাশ্মও খুঁজে পেয়েছেন, যা ইঙ্গিত দেয় যে অঞ্চলটি একসময় ফ্লোরিডা কিজ বা বাহামার মতো একটি লেগুন অঞ্চল ছিল।
নতুন আবিষ্কারের সম্ভাবনা
আরও পড়ুন:
২৩ জুন আওয়ামী লীগের জন্মদিন
দীর্ঘ দুই দশকের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্যালিওনটোলজিস্ট ড. নিকলস বলেন, ‘এমন আবিষ্কার এখনও গায়ে কাঁটা দেয়। এই পায়ের ছাপগুলো যেন সময়ের ওপারে দাঁড়িয়ে থাকা জীবন্ত স্মৃতি।’
বিজ্ঞানীদের ধারণা, খনির আরও গভীর স্তরে অজানা বহু ট্র্যাকওয়ে এখনো লুকিয়ে আছে—যা খুলে দেবে পৃথিবীর বিলুপ্ত দৈত্যদের চলাচলের নতুন ইতিহাস।