বিএনপির মনোনয়ন দৌড়ে পেশাজীবীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৬ অক্টোবর ২০২৫, ০০:৫২
শেয়ার :
বিএনপির মনোনয়ন দৌড়ে পেশাজীবীরা


ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ। সবাই মনোনয়ন নিশ্চিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায়ও এবার রয়েছে নতুন চমক। রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি পেশাজীবীরাও দলটি থেকে মনোনয়ন চেয়ে মাঠে নেমেছেন। এ তালিকায় রয়েছেন সাংবাদিক, আইনজীবী, চিকিৎসক, শিক্ষক ও ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণির পেশাজীবীরা। তাঁরা এখন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত নিবিড় যোগাযোগ রাখছেন। বিএনপি দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকলেও দলটির প্রতি অটল আনুগত্য, সামাজিক প্রভাব ও পেশাগত সুনামের কারণে এবার মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায় পেশাজীবীদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে জানানো হয়েছে, জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ আছে, সমাজে গ্রহণযোগ্যতা আছে এবং দীর্ঘদিন দলের পাশে ছিলেন যাঁরা, তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

পেশাজীবী নেতারা বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে দলীয় রাজনীতির পাশাপাশি পেশাগত অঙ্গনে যে ভূমিকা তাঁরা রেখেছেন, তা এবার কাজে লাগবে মাঠের নির্বাচনে। অনেকেই মনে করেন, পেশাজীবীদের প্রার্থিতা বিএনপিকে একটি ইতিবাচক বার্তা দিতে পারে যে, দলটি শুধু রাজনীতিবিদদেরই নয়, বরং সমাজের চিন্তাশীল শ্রেণিরও অংশগ্রহণ আছে এতে।

বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) প্রায় দুই ডজন নেতা এবার মনোনয়ন চাইছেন। ড্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা খাতে সরকারের অন্যায়, স্বাস্থ্যনীতির অসামঞ্জস্য ও চিকিৎসকদের পেশাগত সংকট নিয়ে কাজ করছেন। এসব কর্মকাণ্ডে তাঁরা জনগণের আস্থা অর্জন করেছেন, যা নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সংগঠনটি এরই মধ্যে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের একটি তালিকা বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে পাঠিয়েছে।

চিকিৎসক পেশাজীবী মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য যাঁরা, তাঁরা হলেনÑ অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশীদ (কুমিল্লা-৫), অধ্যাপক ডা. শহীদুল আলম (সাতক্ষীরা-৩), ডা. এমএ সালাম (ঠাকুরগাঁও-২), ডা. এমএ সেলিম (ময়মনসিংহ-৩), অধ্যাপক ডা. সিরাজুল ইসলাম (ভোলা-২), অধ্যাপক ডা. শাহ মো. শাহজাহান আলী (বগুড়া-১), ডা. ইউনুছ আলী (কুড়িগ্রাম-১), অধ্যাপক ডা. মইনুল হোসেন সাদিক (গাইবান্ধা-৩), ডা. খন্দকার জিয়াউল ইসলাম (গাইবান্ধা-১), ডা. মো. আহমেদুর রহমান আবদাল (হবিগঞ্জ-৩), ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামিম (চাঁদপুর-২)।

এ ছাড়া ডা. শামিম আহমেদ (চাঁদপুর-২), ডা. শাহাদাৎ হোসেন (চট্টগ্রাম-৯), ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু (গাজীপুর-৩), ডা. আনোয়ারুল হক (নেত্রকোণা-২), ডা. ইব্রাহিম রহমান বাবু রুমি (ঝিনাইদহ-২), ডা. এরশাদ আহসান সোহেল (কিশোরগঞ্জ-৩), ডা. কাজী মাজহারুল ইসলাম দোলন (নোয়াখালী-৩), ডা. কেএম বাবর (গোপালগঞ্জ-২), ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বাবু (ঢাকা-১৯), ডা. ইকরামুল বারী টিপু (নওগাঁ-৪), অধ্যাপক ডা. একেএম আমিনুল হক (ময়মনসিংহ-২), ডা. নাজমুল হুদা বিপ্লব (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২), ডা. দেলোয়ার হোসেন টিটু (নেত্রকোণা-২), বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ পদ থেকে সদ্য অবসরে আসা ডা. এসএম জিয়াউদ্দিন হায়দার (ঝালকাঠি-২)।

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন একাধিক অভিজ্ঞ সাংবাদিকও। পেশাগত জীবনে গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার ইস্যুতে কাজ করে তাঁদের অনেকেই সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন। সাংবাদিক নেতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেনÑ বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী (চট্টগ্রাম-২), বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা বা বাসস চেয়ারম্যান আনোয়ার আলদীন (খুলনা-৬), এমএ আজিজ (পাবনা-১), ডিইউজের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও জুলাই আন্দোলনকালে গুম-গ্রেপ্তারের শিকার হাফিজ আল আসাদ সাঈদ খান (পিরোজপুর-১), আমীরুল ইসলাম কাগজী (খুলনা-৬)। এ ছাড়া সাতক্ষীরা-১ আসনে মনোনয়ন চাইছেন সাংবাদিক আরিফুজ্জামান মামুন, যিনি দীর্ঘদিন ধরে কূটনীতিক সাংবাদিকতায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বর্তমানে তিনি ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ডিক্যাব) সাধারণ সম্পাদক। দলের নীতিনির্ধারণী সূত্র জানায়, সাংবাদিক পেশা থেকে আসা প্রার্থীদের দল ‘জনসম্পৃক্ততা’ বিবেচনায় গুরুত্ব দিচ্ছে।

বিএনপির অন্যতম ভিত্তি হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে আইনজীবী সমিতির প্রভাবশালী ভূমিকা রয়েছে। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের অনেক সদস্য এবার সংসদ নির্বাচনে দলের টিকিট চান। বিএনপির শীর্ষপর্যায়ের নেতারা মনে করেন, তাঁরা আদালত ও সমাজে যুক্তি ও ন্যায়ের প্রতীক। ফলে তাঁদের প্রার্থিতা নির্বাচনে জনসমর্থন বাড়াতে পারে। আইন পেশায় যুক্তদের মধ্যে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেনÑ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন (বরিশাল-৩), অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান (ঝিনাইদহ-১), জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল (নেত্রকোনা-১), সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল (ঝিনাইদহ-৩), বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম (ঢাকা-১০)। এ ছাড়া এ তালিকায় রয়েছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিন (চট্টগ্রাম-৫), ব্যারিস্টার নওশাদ জমির (পঞ্চগড়-১), বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুলসহ (নাটোর) বেশ কয়েকজন আইনজীবী।

এ ছাড়া বিএনপিপন্থি শিক্ষক সমাজও সক্রিয় দলের মনোনয়ন প্রত্যাশায়। বাগেরহাট-৪ আসন থেকে মনোনয়ন চান বিএনপির শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, শিক্ষক নেতা ও বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া কুমিল্লা-১ ও ২ আসনে মনোনয়ন চাইছেন। এ ছাড়া ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এ্যাব) প্রকৌশলী শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন নীলফামারী-১ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী।