নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে জলবায়ু সহনশীল নগর নির্মাণবিষয়ক সেমিনার

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
১৫ অক্টোবর ২০২৫, ২২:৩৩
শেয়ার :
 নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে জলবায়ু সহনশীল নগর নির্মাণবিষয়ক সেমিনার

রাজধানীতে ‘জলবায়ু সংকট ও বিপদাপন্ন নারী: নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে জলবায়ু সহনশীল নগর নির্মাণ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বুধবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ধানমন্ডির উইমেন ভলান্টারি অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়। এর আয়োজন করে চিলড্রেন ওয়াচ ফাউন্ডেশন (সিডব্লিউএফ)। 

সেমিনারে নারী, পরিবেশ, সমাজ উন্নয়ন ও জলবায়ু অভিযোজন নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, গবেষক, নারী উদ্যোক্তা, পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠী ও যুবসমাজের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

সেমিনারে জানানো হয়, বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশ, যেখানে ঘূর্ণিঝড়, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বন্যা, জলাবদ্ধতা এবং নগর দূষণ ক্রমাগতভাবে শহুরে জীবনের ভারসাম্য নষ্ট করছে। গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স ২০২৩-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত জলবায়ু দুর্যোগের ক্ষতির দিক থেকে বাংলাদেশ শীর্ষ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত দুই দশকে নগরের গড় তাপমাত্রা প্রায় ২.২°C বেড়েছে, যা একই সময়ে বৈশ্বিক গড়ের তুলনায় ১.৫°C বেশি।

 গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা অনেক স্থানে ৪০°C-এ পৌঁছে “আরবান হিট আইল্যান্ড এফেক্ট”-এর তীব্রতা বাড়িয়ে তুলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO, ২০২৩)-এর তথ্যমতে, ঢাকার বাতাসে PM2.5 কণার পরিমাণ ৬০–৯০ µg/m³, যা স্বাস্থ্যগত নিরাপদ সীমার সাত থেকে আট গুণ বেশি। এর ফলে নিম্নআয়ের ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বিশেষ করে নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। এই বাস্তব প্রেক্ষাপটে, চিলড্রেন ওয়াচ ফাউন্ডেশন (CWF) তাদের উইমেন ইকুইটি অ্যান্ড একশন উইং -এর উদ্যোগে পিছিয়ে পড়া ও জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ নারীদের সামনে এনে তাদের অভিজ্ঞতা, কণ্ঠস্বর ও নেতৃত্বের গুরুত্ব তুলে ধরার লক্ষ্যে এ সেমিনারের আয়োজন করে। 

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কোয়ালিশন ফর দ্য আরবান পুওরের (সিইউপি)নির্বাহী পরিচালকখন্দকার রেবেকা সান ইয়াত,। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘এই সেমিনারটি নারীর ক্ষমতায়ন ও জলবায়ু সহনশীল নগর গঠনের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নারীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে পড়ছেন, তাই তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই টেকসই উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। আমি আশা করি এই উদ্যোগ ভবিষ্যতে আরও সচেতনতা ও কার্যকর পদক্ষেপের পথ তৈরি করবে।”

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর কবির বলেন, ‘এটা আমাদের দায়বদ্ধতা যে, একজন পুরুষ হিসেবে আমাদের বুঝতে হবে নারীরা যে অমানবিক পরিশ্রম করছেন তার কোন নির্ধারিত সময় নেই এবং তারা এর জন্য কখনও পুরস্কৃতও হন না অর্থাৎ তারা কোন রকম স্বার্থ ছাড়া এ কাজ করে থাকে্ন। উপকুলীয় অঞ্চলে নারী ও শিশুরা সব থেকে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন বা হচ্ছেন গর্ভবতী নারীরা, সেদিকেও দৃষ্টি রাখা দরকার। আমাদেরকে এই সভার পাশাপাশি মাঠ পর্যায়েও সমানভাবে কাজ করতে হবে, নারী ক্ষমতার সৎ ও সময়োপযোগী ব্যবহার করতে হবে, তাহলেই আমরা সামনে অগ্রসর হতে পারবো।’ 


সেমিনারের সভাপতি চিলড্রেন ওয়াচ ফাউন্ডেশনের (সিডব্লিউএফ) চেয়ারম্যান শাহ ইসরাত আজমেরী তার বক্তব্যে বলেন, ‘জলবায়ু সংকট কেবল পরিবেশগত নয়, এটি সামাজিক ও মানবিক সংকটও বটে। এই সংকট মোকাবিলায় নারীকে কেবল ভুক্তভোগী নয়, বরং পরিবর্তনের নেতৃত্বে নিয়ে আসতে হবে। নারী যখন শিক্ষিত, সচেতন ও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়, তখনই গড়ে ওঠে একটি প্রকৃত অর্থে সুস্থ সমাজ। চিলড্রেন ওয়াচ ফাউন্ডেশন (সিডব্লিউএফ) দীর্ঘদিন ধরে নারী ও তরুণদের সক্ষমতা বৃদ্ধি, জলবায়ু শিক্ষা এবং টেকসই জীবিকার প্রচারে কাজ করে আসছে, যা ভবিষ্যতের অভিযোজন কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করবে।’

সেমিনারে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের নগরাঞ্চলে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা, বায়ু দূষণ, জলাবদ্ধতা এবং বসবাসযোগ্য স্থানের সংকট নারীদের জীবনে বহুমাত্রিক প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে নিম্নআয়ের ও প্রান্তিক নারীরা স্বাস্থ্যঝুঁকি, জীবিকা সংকট ও সামাজিক অনিরাপত্তার মুখোমুখি হচ্ছেন। বক্তারা আরও বলেন, নারী ও তরুণদের অংশগ্রহণমূলক ভূমিকা জলবায়ু নীতিনির্ধারণ, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে অন্তর্ভুক্ত না করলে টেকসই নগর উন্নয়ন সম্ভব নয়। সেমিনারে নারীর নেতৃত্বে জলবায়ু অভিযোজনকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানানো হয় এবং শহুরে জলবায়ু পরিকল্পনা, পানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সবুজ অবকাঠামো উন্নয়ন ও নারীর নিরাপদ জনপরিসর নিশ্চিতের প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। দ্বিতীয় অধিবেশনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মুক্ত আলোচনা, চারা ও বীজ বিতরণ, সার্টিফিকেট প্রদান এবং ‘সবুজ উদ্যোক্তা’ বিষয়ক আলোচনার মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তাদের টেকসই জীবিকা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানের শেষে চিলড্রেন ওয়াচ ফাউন্ডেশনের চ্যেয়ারম্যান শাহ ইসরাত আজমেরী ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, “নারীর স্বশক্তিকরণই পারে জলবায়ু সহনশীল নগর নির্মাণের ভিত্তি স্থাপন করতে।”