‎নর্থ সাউথের ঘটনায় প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র দেখছে রাষ্ট্রপক্ষ

আদালত প্রতিবেদক
১৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৭:৪২
শেয়ার :
 ‎নর্থ সাউথের ঘটনায় প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র দেখছে রাষ্ট্রপক্ষ

‎নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অপূর্ব পালের আল কোরআন অবমাননায় পেছনে দেশি-বিদেশি, বিশেষ করে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে মনে করছে রাষ্ট্রপক্ষ। তবে এর পেছনে অন্য কারও হাত নেই বলেছে আদালতে জানিয়েছেন অপূর্ব পাল।

‎আজ মঙ্গলবার রিমান্ড আবেদনের শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষ এ অভিযোগ করে। জবাবে অপূর্ব পাল তা অস্বীকার করেন। শুনানি শেষে ‎ঢাকার মেট্টোপলিটন মাজিস্ট্রেট সারাহ্ ফারজানা তাকে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

‎‎মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, ভাটারা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) চাঁদ মিয়া ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।  ‎

রাষ্ট্রপক্ষে শামছুদ্দোহা সুমন রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানিতে বলেন, ‘এই সেই কোরআন, যা লাওহে মাহফুজে সংরক্ষিত আছে। বাংলাদেশের ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালী সরকার যখন নির্বাচনের দিকে হাঁটছে, তখন দেশি-বিদেশি, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের একটা ষড়যন্ত্রের আভাস পাচ্ছি। এটা সেটার অংশ।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের ধর্ম প্রত্যেক ধর্মের প্রতি সহানুভূতিশীল। দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে ন্যাক্কারজনক কাজ করে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য, দেশের আইনশৃঙ্খলার অবনতি করার জন্য, দেশে দাঙ্গা বাধানোর জন্য এ কাজ করছে। যা অন্য কোনো ধর্মের লোক সাহস পাবে না।'

রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী বলেন, ‘এ আসামি কার কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে। তার সঙ্গে ষড়যন্ত্রকারী কারা? কারা কারা তাকে শেল্টার দিয়ে যাচ্ছে? প্রতিবেশী দেশের গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত কি না? এসব জানার জন্য ১০ দিনের রিমান্ড প্রয়োজন।’

‎অপূর্ব পালের পক্ষে কোনো আইনজীবী না থাকায় আসামির কিছু বলার আছে কি না, জানতে চান আদালত। তখন অপূর্ব পাল বলেন, ‘আমার পেছনে কেউ নাই। যখন এ ঘটনা ঘটেছে, তখনকার কিছু আমার মনে নাই। এই রকম সমস্যা মাঝে মাঝে দেখা দেয়। আমি মাঝে মাঝে ভুলে যাই। একদিন মসজিদে ঢোকার পর মিম্বরে জুতা রেখেছিলাম। মুয়াজ্জিন আমাকে জুতা রাখার কথা জিজ্ঞাস করেছে, কিন্তু আমার মনে নাই। মাঝে মাঝে আমি ভুলে যাই।’

‎উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেয়।

‎গত ৪ অক্টোবর রাতে কয়েকটি ভিডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ে, যেসবে অপূর্ব পাল কোরআন অবমাননা করেছেন বলে বিভিন্ন পোস্টে অভিযোগ তোলা হয়। তার ফেসবুক পোস্ট শেয়ার করে তাকে গ্রেপ্তারের দাবিও জানানো হয়। এর মধ্যেই রাত ১টার দিকে অপূর্ব পালের বাসার সামনে জড়ো হতে থাকেন ক্ষুব্ধ অনেকেই।

‎খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে অপূর্বকে হেফাজতে নেওয়ার চেষ্টা করে ভাটারা থানা পুলিশ। প্রথমে তাকে আটক করতে জনতার সহায়তা চায় পুলিশ, জনতার তরফেও পুলিশকে সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়।

‎একপর্যায়ে পুলিশ অপূর্বকে আটক করে থানায় নিয়ে আসার চেষ্টা করলে উত্তেজিত জনতা অপূর্বকে মারধর শুরু করে। জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করলে তারা পুলিশের ওপরও ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ঘটনাস্থলে বাড়তি পুলিশ সদস্য ডেকে নেওয়া হয়।

‎‎কোরআন অবমাননার ঘটনায় ৫ অক্টোবর ভাটারা থানার এসআই হাসমত আলী মামলাটি দায়ের করেন। পরদিন এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে অপূর্বকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করা হয়। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

‎অপূর্ব নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া, কমিউনিকেশন অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তিনি আগেও সাময়িকভাবে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন বলে জানিয়েছিলেন একই বিভাগের প্রভাষক আসিফ বিন আলী। মামলা হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর অপূর্ব ‘স্থায়ী বহিষ্কার’ করেছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়।