আরামের সাজ-পোশাক
বেশ কয়েকদিন বৃষ্টির পর গরম খানিকটা কমেছে। শরতের এই শেষ বেলায় মন খুলে সাজতে পারেন। গরমের জন্য অনেকেই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও শাড়ি পরতে পারেন না। তারা কিন্তু এখন শখ মিটিয়ে শাড়ি পরতে পারেন। অন্যান্য পোশাকও আরামের দিকটা দেখে নির্বাচন করা উচিত।
এ সময়ের পোশাকের ধরন নিয়ে বিশ্ব রঙের স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার বিপ্লব সাহা বলেন, এখন গরমের তীব্রতা কমে এসেছে। ক’দিন আগেই শারদীয় উৎসব হয়ে গেল। তখন পোশাকে যে ফেস্টিভ লুকটা ছিল এখন সেটা পরিবর্তনের সময়। এখন যে ডিজাইনগুলো করা হচ্ছে তাতে আরামের বিষয়টিই বেশি মাথায় রাখা হয়েছে।
এর সঙ্গে হালকা ডিজাইন ও রঙই থাকছে। ভয়েল, সফট শিফন, হ্যান্ডলুম কাপড় খুব চলছে। একটু গর্জিয়াস অনুষ্ঠানের জন্য সফট সিল্কগুলো আরামদায়ক। আর এ সময় ভেজিটেবল ডাইয়ের কাজগুলো অনেক চলে। বর্তমানে এটি ট্রেন্ডিও’, যোগ করেন বিপ্লব সাহা।
গরম কমলেও রোদে তাপে পোশাকের রঙ, ম্যাটারিয়াল, নকশা নির্বাচন করতে হবে চোখ শান্ত করার কথা মাথায় রেখে। হালকা হলুদ, নীল, আকাশি, জলপাইয়ের মতো ন্যাচারাল কালারগুলো নিয়ে এই সময়ে কাজ করছেন মানোতারা অনলাইন পেজের স্বত্বাধিকারী মুনতাসারিন বনলতা। এই সময়ে মনোতারা ভেজিটেবল ডাইয়ের শাড়ি এনেছে।
বনলতা জানান, তারা পোশাকের রঙের সঙ্গে কাপড়টি বেছে নিয়েছেন একদম হ্যান্ডলুম। এখানে আরামের কথা চিন্তা করে কোনো মিক্সড কাপড় দেওয়া হয়নি। তাদের পেজে থাকছে ন্যাচারাল ডাই ও ব্লকের কাজের শাড়ি, দোপাট্টা, কামিজ ও কুর্তি। নকশাতেও এনেছেন ব্যতিক্রমের ছোঁয়া। কোনো শাড়ির আঁচলে থাকছে কাঠ, বিডসের কারুকাজ, কোনোটার একই কাপড়ের ভিন্ন রঙে বরফি কেটে বসানো।
শাড়িতে স্বস্তি
পার্টি বা যেকোনো বিশেষ অনুষ্ঠানে শাড়ি তো পরা হয়। তবে অনেকে রোজকার অফিসেও শাড়ি পরতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তবে সারাদিন নানা কাজে পার করার জন্য বেশ আরামদায়ক কাপরের শাড়িই বেছে নিতে হবে। যেমন- হ্যান্ডলুম কাপড়ের ওপর বাটিক, ব্লক, ন্যাচারাল ডাইয়ের কাজগুলো সময় উপযোগী। এতে আসবে সর্বোচ্চ ক্যাজুয়াল লুক। এগুলোর বেশিরভাগই সাদা বেজ করে হালকা কালারের হচ্ছে।
এ ছাড়া তাঁতের একরঙা শাড়ি, তাঁতে কাঁথাস্টিচের কাজ করা পাড় বা গুটি কোটা শাড়িগুলোও বেশ আরামদায়ক। এর সঙ্গে পরতে পারেন কালার মিলিয়ে হালকা প্রিন্টের যে কোনো ব্লাউজ। এক কালারের থানের ওপর চার-পাঁচ রঙের কালার দিয়ে ব্লক শাড়িগুলো নিজেকে রাঙিয়ে তুলছে। এ ক্ষেত্রে একটু হালকা কালারগুলো নির্বাচন করে নিলে নিজেকে দেখাবে বেশ সিগ্ধ। আঁচলে বসিয়ে নিন পমপম, কুশিকাটার লেস অথবা কয়েকটি টারসেল।আর রাতে বা দিনের পার্টিতে যারা শাড়ি পরতে চান, তারা সফট ঢাকাই জামদানি, মসলিনের ওপর টাইডাই বা হ্যান্ডপ্রিন্টের শাড়িগুলো নির্বাচন করতে পারেন। আবার দেশীয় চওড়া পাড়ের টাঙ্গাইল শাড়ি ও তোসর শাড়িগুলোও বেশ আরাম দেবে আর লুকেও আনবে ঐতিহ্যের ছোঁয়া।
আরও পড়ুন:
শীতে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন
মানানসই ব্লাউজ
এখন ব্লাউজে বেশ ব্যতিক্রমের ছোঁয়া পাওয়া যাচ্ছে। যে কোনো সুতি শাড়ির সঙ্গে বাটিক বা ব্লকের ব্লাউজ একটি ক্ল্যাসি লুক ফুটিয়ে তোলে। তা ছাড়া হাতের কাজ ও হ্যান্ডপেইন্টের একটি বড় ছবি শুধু ব্লাউজের পেছনে বেশ আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে আপনার এ আবহাওয়ার ট্রেন্ড। ব্লাউজের ক্ষেত্রেও মাইক, থ্রি কোয়ার্টার, কুর্তি হাতাগুলো বেশ চলছে। গলার ডিজাইনেও এসেছে ভিন্নতা। এখন আবার ওই সিম্পল গোল চারকোণ ভি শেপের গলা দেখা যাচ্ছে। তবে যারা আরেকটু গলা বন্ধ পরতে চান, তারা বোট গলাটি করতে পারেন। গলার ধার দিয়ে সামান্য লেসই করে দিতে পারে আপনাকে অনন্যা।
সঙ্গে মানানসই গহনা
অন্য কোনো কিছুতে না থাকলেও শাড়ির সঙ্গে বিশেষ করে গলায় কিছু না থাকলেই নয়। তাই সুতি যে কোনো ধরনের শাড়ির সঙ্গে পরতে পারেন অ্যান্টিক, কাঠ বা মাটির গহনা। লম্বা মালা পরলে কানে কিছু না পরলেও চলে। আবার টারসেল, পুঁথি বা মেটালের লম্বা দুলের সঙ্গে গলায় কিছুই পরার দরকার পড়ে না। আর গর্জিয়াস শাড়ির সঙ্গে পরতে পারেন মুক্তা, মিনা করা কোনো সেট।
হুটহাট ক্যাজুয়াল : ক্যাজুয়াল পোশাকটি বেশিরভাগ স্টুডেন্টের মধ্যে দেখা যায়। তারা যেহেতু দিনের বেশিরভাগ সময় বাইরে ব্যস্ত থাকেন, সেহেতু আরামের কথাটা সবার আগে মাথায় রাখতে হবে। কুর্তি, টপস, সালোয়ার-কামিজ- এগুলোই এখন বেশি চলছে তরুণদের মধ্যে। এগুলোর নকশাতেও এসেছে পরিবর্তন। ফিস কার, সামনে শর্ট ও পেছনে একরু লং, ফ্রক স্টাইল এবং পাঞ্জাবি ধরনের কুর্তিগুলো এখন আরামদায়ক ও জনপ্রিয়ও বটে। ফুল স্লিভ, ম্যাগি ও ঘটিহাতা আরামের সঙ্গে সঙ্গে আনবে স্মার্টনেসও।
পোশাকের রঙ
এখন পোশাকের রঙে অনেক পরিবর্তন এসেছে বলে মনে করেন ডিজাইনার বিপ্লব সাহা। তার মতে, এখন বেশ মিক্সড কালার চলছে। যেমন- ফাল্গুনে শুধু হলুদ না হয়ে নানা রঙের খেলা দেখা যাচ্ছে। আর এখন তো দিন-রাত যখনই হোক, ক্যাজুয়াল বা গর্জিয়াস হালকা রঙটিই বেশ শান্তি দেবে। সব রঙেরই হালকা শেডগুলো আছে। তাই পছন্দের রঙ যেটিই হোক, বেছে নিন তার মাইল্ড ধরনটা। যেমন- আকাশি, হালকা বেগুনি, বেবি পিংক, অফহোয়াইট বা ক্রিম কালার, জলপায় রঙগুলো বেশ আরাম হবে।
কোথায় পাবেন ও দরদাম
আরও পড়ুন:
জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণগুলো জেনে রাখুন
আমাদের দেশিদশসহ সব শোরুমেই এখন গরমের পোশাক পুরো দমে চলে এসেছে। এ ছাড়া ইনফিনিটি, সারা, এম্ব্রেলা, বসুন্ধরা সিটি, পিংক সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, নিউমার্কেট, হকার্স, গাউসিয়া, নূরজাহান মার্কেটে পেয়ে যাবেন নিজের পছন্দমতো আরামদায়ক পোশাক। স্থানভেদে দাম পড়বে কুর্তি ৮০০ থেকে ১ হাজার, সালোয়ার-কামিজ ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ ও সুতি টাইডাই শাড়ি ১ হাজার ৩০০ থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকা। এ ছাড়া টপস পেয়ে যাবেন ৪০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে।
এ সময়ে হালকা সাজ
পোশাকে যেহেতু হালকা রঙ ও কাজ থাকছে, সেহেতু মেকআপও হতে হবে সেভাবেই। এ বিষয়ে রোজা’স মেকওভারের স্বত্বাধিকারী ও বিউটিশিয়ান সায়মা রোজা বলেন, সামারের মেকআপটি অবশ্যই ম্যাট হয়। যদি রোজকার ক্যাজুয়াল কোনো কাজে যাওয়া হয়, তা হলে প্রথমেই মুখটা ক্লিন করতে হবে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে। এর পর সানস্কিন, প্রাইমার, বিবি ক্রিম ইউস করে একটি ড্রাই কম্পেক্ট পাউডার লাগাতে পারেন। আর যদি পার্টিতে যান- তা হলেও মুখ ক্লিন করে সানস্ক্রিন, টোনিং, কন্সিলার ও ফুল কাভারেজ ফাউন্ডেশন ব্যবহার করতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, রাতে হলে সানস্ক্রিন লাগানো লাগবে না। আই মেকআপটিও হবে হালকা, ব্রাউন হতে পারে বা যে কোনো ম্যাট টোন। আইলাইনার মাশকারা হবে ওয়াটারপ্রুফ। লিপস্টিকও হবে হালকা শেডে, পিংক ও ব্রাউন ধরনের। তার মতে, কোনো ধরনের গ্লিটারিং সাজ গরমে না দেওয়াই ভালো। সবখানে থাকবে মাইল্ড লুক। আর চুলের ক্ষেত্রে যারা বেঁধে রাখতে চান, পনি টেলটি তাদের জন্য পারফেক্ট হবে। এটি বেশিরভাগ পোশাকের সঙ্গেই মানানসই। মেকআপের আগে অবশ্যই পানি পান করতে হবে যথেষ্ট পরিমাণ।
সতর্কতা
* পোশাকের ক্ষেত্রে এমন কোনো ডিজাইন বা লেইস ব্যবহার করা উচিত নয়- যেটি বেশ শক্ত ম্যাটারিয়াল দিয়ে তৈরি।
* যে কোনো ধরনের পোশাকে ভিন্নতা আনতে সামান্য হাতের কাজ করে নিন।
* আঁটসাঁট পোশাক পরলে দেখতেও এ সময় অস্বস্তিদায়ক হয়।
আরও পড়ুন:
শীতে মুলা কেন খাবেন?
* মেকআপ শেষে ও শুরুতে সেটিং স্প্রে ব্যবহার করুন।
* চুল না বেঁধে ছাড়া রাখলেও এলোমেলো না রেখে সেট করে নিন।
* খুব চকচকে জিনিস এড়িয়ে চলুন।
* ফেস ডার্ক দেখায়- এমন মেকআপ দিনে তো নয়ই, রাতেও করা থেকে বিরত থাকুন।
* ত্বক সতেজ ও শরীর সুস্থ রাখতে বেশি করে পানি পান করুন।