নাশকতার মামলায় মির্জা আব্বাস-রিজভীসহ ১৬৭ জনকে অব্যাহতি
অস্ত্রসহ পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত ও ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে রাজধানীর পল্টন থানার মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস উদ্দিন আহমেদ ও দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ ১৬৭ জনকে অব্যাহতির আদেশ দিয়েছেন আদালত।
‘অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি’ মর্মে পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে আজ সোমবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ সাব্বির ফয়েজের আদালত এ আদেশ দেন।
অব্যাহতিপ্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কফিল উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব, মিডিয়া উইং শামসুদ্দিন দিদার, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমুনুল ইসলাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুন রায়, যুবদলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মনজু, ঢাকা দক্ষিণের ছাত্রদলের সভাপতি জহির উদ্দিন তুহিনসহ প্রমুখ।
মির্জা আব্বাসের আইনজীবী মহি উদ্দিন চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, সম্প্রতি এই মামলায় তদন্ত শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়াশ দায় হতে আসামিদের অব্যাহতির সুপারিশ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। সোমবার আদালত সে প্রতিবেদন গ্রহণ করে আসামিদের অব্যাহতির আদেশ দেন।
আরও পড়ুন:
একের পর এক সাজা নাশকতার মামলা
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর বিএনপি নেত্রী আফরোজা আব্বাসের নেতৃত্বে একটি মিছিল ফকিরাপুলের দিক হতে ব্যান্ডপার্টি, ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে শো-ডাউন করে নয়াপল্টনস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসে। এরপর নবী উল্লাহ নবী ও কফিল উদ্দিন এর নেতৃত্বে অপর দুটি মিছিল শো-ডাউন করে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে একই দিক হতে আসতে থাকে এবং সর্বশেষ মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে ৮-১০ হাজার জনের একটি মিছিল নিয়ে- ব্যান্ডপার্টিসহ ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে শো-ডাউন করে নয়াপল্টনস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসে।
তারা নয়াপল্টনস্থ ভিআইপি রোড বন্ধ করে মিছিল ও শো-ডাউন করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে। পুলিশ তাদেরকে রাস্তার এক লেন ছেড়ে দিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখা ও জন দুর্ভোগ সৃষ্টি না করার জন্য অনুরোধ করলে তারা পুলিশের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়। তাদের নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘণের বিষয়টি বিএনপি অফিসে অবস্থানরত রুহুল কবির রিজভীসহ অন্যান্য সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে জানানো হয় এবং পুলিশকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ করা হয়।
আরও বলা হয়, তাদের অফিসের মাইকের মাধ্যমে যানবাহন চলাচলের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করার বিষয়ে ঘোষণা করার জন্য অনুরোধ করা হয়। পূর্বপরিকল্পিতভাবে মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে আসামিরা অবৈধ জনতাবদ্ধে বিএনপির পার্টি অফিস থেকে লাঠিসোটা নিয়ে নয়াপল্টনস্থ ভিআইপি রোডে হকস বেনামীয় গাড়ির শোরুমের উত্তর পাশে রাস্তায় পুলিশের একটি সরকারি ডাবল কেবিন পিকআপ পুড়িয়ে আনুমানিক মূল্য ৬০ লাখ টাকার ক্ষতি সাধন করে। পুলিশের ওপর আক্রমণ করে পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে সরকারি কাজে বাধা দিয়ে অতর্কিতে পুলিশকে আক্রমণ করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তারা রাস্তায় বিভিন্ন ধরনের সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে থাকে।
আরও পড়ুন:
ভারত সফরে গেলেন প্রধান বিচারপতি
ওই সময় আসামিরা সেখানে কর্তব্যরত পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে সরকারি কাজে বাধা দিয়ে পুলিশকে আক্রমণ করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। আসামিরা রাস্তার পাশে ডিউটিরত এসির (পেট্রল-মতিঝিল) সরকারি মিটসুবিসি প্রাইভেটকারে আগুন ধরিয়ে দিলে মুহুর্তের মধ্যে গাড়ির চারিদিকে আগুন ধরে যায়। আগুনে পোড়া গাড়ির আনুমানিক মূল্য ৩৫ লাখ টাকা।
আসামিদের নিক্ষেপিত ইটের আঘাতে কয়েকজন পুলিশ মারাত্বক আঘাতপ্রাপ্ত হন। মারাত্বক আহত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার জন্য রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে প্রেরণ করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
আসামিরা ঘটনাটি ঘটিয়ে সরকারবিরোধী বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিয়ে নাইট এ্যাগেল মোড় হতে পুলিশ হাসপাতাল ক্রসিং পর্যন্ত ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তারা রাস্তায় চলাচলরত সাধারণ জনগণের ওপর আক্রমণ করে প্রাইভেটকারসহ রাস্তায় আটকে পড়া আরও অনেক গাড়ি ভাঙচুর করতে থাকেন। পুলিশের যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে পুলিশের কর্মক্ষমতা ব্যাহত করার জন্য অন্তর্ঘাতমূলক কার্য সম্পাদন করে।
এ ঘটনায় পল্টন থানার উপ-পরিদর্শক মো. আল আমিন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।