ম্যাকবুকের আদ্যোপান্ত : অ্যাপলের ল্যাপটপের বিবর্তন

আজহারুল ইসলাম
০৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:১০
শেয়ার :
ম্যাকবুকের আদ্যোপান্ত : অ্যাপলের ল্যাপটপের বিবর্তন

অ্যাপলের ল্যাপটপ মানেই দক্ষতা, ডিজাইন এবং উদ্ভাবনের এক অনন্য উদাহরণ। ২০০০-এর দশকে যাত্রা শুরু করা ম্যাকবুক (MacBook) কেবল একটি পণ্য নয়, বরং পোর্টেবল কম্পিউটিংয়ের ইতিহাসের একটি সূচনা। প্রথম সংস্করণ থেকে শুরু করে বর্তমানের অ্যাপল সিলিকন (Apple Silicon)-চালিত মডেল পর্যন্ত ম্যাকবুক কীভাবে বিবর্তিত হয়েছে, তার আদ্যোপান্ত নিচে তুলে ধরা হলো। ইন্টারনেট থেকে তথ্য নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন আজহারুল ইসলাম

পাওয়ারবুক ও আইবুক : ম্যাকবুক নামটি আসার আগে অ্যাপলের ল্যাপটপ দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল। পাওয়ারবুক (PowerBook) ছিল প্রিমিয়াম, পেশাদারদের জন্য তৈরি, যার অ্যালুমিনিয়াম চেসিস পরবর্তী ম্যাকবুক প্রো-এর ভিত্তি স্থাপন করে। অন্যদিকে আইবুক (iBook) ছিল ভোক্তাকেন্দ্রিক, প্লাস্টিকের তৈরি, যা প্রথম ল্যাপটপ হিসেবে ওয়াই-ফাই (ডর-ঋর) সমর্থন করত।

ইন্টেলচালিত ম্যাকবুক ও ম্যাকবুক প্রো (২০০৬) : ২০০৬ সালে অ্যাপল যখন পাওয়ারপিসি থেকে ইন্টেল প্রসেসরে স্থানান্তরিত হয়, তখনই জন্ম নেয় ইন্টেলচালিত প্রথম ল্যাপটপ।

ম্যাকবুক প্রো : এটি ছিল প্রথম ইন্টেলচালিত প্রো ল্যাপটপ, যাতে ম্যাগসেফ চার্জিং পোর্ট ও বিল্ট-ইন ওয়েবক্যাম ছিল। ২০০৮ সালে এর ডিজাইন আরও পাতলা, টেকসই এবং দৃষ্টিনন্দন করতে ইউনিবডি ডিজাইন আনা হয়, যা আজকের ম্যাকবুক ডিজাইনের মূল ভিত্তি।

সাদা-কালো ম্যাকবুক : এটি ছিল আইবুকের উত্তরসূরি, যা পলিকার্বোনেট (প্লাস্টিক) বডিতে তৈরি। সাশ্রয়ী মূল্যে সাধারণ ব্যবহারকারীদের কাছে অ্যাপল ল্যাপটপ পৌঁছে দেওয়ার কাজটি করেছিল এই মডেল।

ম্যাকবুক এয়ার (২০১০) : ২০১০-এর দশকে অ্যাপল ল্যাপটপের আকারকে সম্পূর্ণ নতুন স্তরে নিয়ে যায়। ম্যাকবুক এয়ার তার টেপার্ড ডিজাইন এবং অত্যন্ত হালকা ওজনের কারণে দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। এর এসএসডি স্টোরেজ ব্যবহারকে দ্রুত করে তোলে, যা এটিকে বাজারের সবচেয়ে পোর্টেবল ল্যাপটপ করে তোলে।

রেটিনা ম্যাকবুক প্রো (২০১২) : ২০১২ সালে অ্যাপল প্রো মডেলে রেটিনা ডিসপ্লে যোগ করে। এটি উচ্চ পিক্সেল ঘনত্বসহ প্রথম ল্যাপটপ ছিল, যা টেক্সট এবং ছবিকে অবিশ্বাস্যভাবে শার্প করে তুলেছিল। রেটিনা ডিসপ্লে যুক্ত করার জন্য অ্যাপল অপটিক্যাল ড্রাইভ, ইথারনেট পোর্ট এবং ফায়ারওয়্যার পোর্ট বাদ দিয়ে স্লিম প্রো ল্যাপটপের সূচনা করে।

১২-ইঞ্চি ম্যাকবুক ও টাচ বার যুগ (২০১৫-২০২০) : এই সময় অ্যাপল ডিজাইনকে আরও মিনিমালিস্ট করে তোলে।

১২-ইঞ্চি ম্যাকবুক : ২০১৫ সালে আসা এই মডেলটি ছিল সবচেয়ে হালকা এবং ফ্যানলেস। এতে মাত্র একটি ইউএসবি-সি পোর্ট ছিলÑ চার্জিং, ডেটা এবং ডিসপ্লে সবকিছুর জন্য। তবে এর বাটারফ্লাই কিবোর্ড তার নির্ভরযোগ্যতার জন্য সমালোচিত হয়।

টাচবার ম্যাকবুক প্রো : ২০১৬ সালের প্রো মডেল সম্পূর্ণভাবে ইউএসবি-সি পোর্টে স্থানান্তরিত হয় এবং এতে কিবোর্ডের ওপর টাচবার, একটি ছোট ওলেড টাচস্ক্রিন যুক্ত করা হয়। বাটারফ্লাই কিবোর্ড এবং পোর্ট পরিবর্তনের জন্য এই মডেলগুলো সমালোচিত হয়েছিল।

অ্যাপল সিলিকনচালিত ম্যাকবুক (২০২০-বর্তমান) : ২০২০ সাল থেকে শুরু হওয়া এই যুগটি ম্যাকবুকের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এনেছে। অ্যাপল ইন্টেলের চিপ ব্যবহার বন্ধ করে নিজস্ব এম-সিরিজ চিপ M1, M2, M3 তৈরি শুরু করে। এম-সিরিজ চিপগুলো ইন্টেল চিপের তুলনায় অবিশ্বাস্য দ্রুত প্রসেসিং এবং গ্রাফিক্স পারফরম্যান্স প্রদান করে এবং কার্যক্ষমতা বাড়লেও ব্যাটারির স্থায়িত্ব কয়েক গুণ বেড়ে যায়। ল্যাপটপগুলো আগের চেয়ে অনেক কম গরম হয়। সর্বশেষ ম্যাকবুক প্রো এবং এয়ার মডেলগুলোতে পূর্ববর্তী সংস্করণগুলোর ত্রুটি দূর করে ক্লাসিক ডিজাইন ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

ম্যাকবুক প্রো : এই মডেলে টাচবার বাতিল করে আবার ফিজিক্যাল ফাংশন কি এবং ম্যাগসেফ চার্জিং পোর্ট ফিরিয়ে আনা হয়েছে। পেশাদারদের সুবিধার জন্য এইচডিএমআই এবং এসডি কার্ড স্লট পুনরায় যুক্ত করা হয়েছে। এতে লিকুইড রেটিনা এক্সডিআর ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে, যা মিনি-এলইডি প্রযুক্তি ব্যবহার করে অবিশ্বাস্য উজ্জ্বলতা এবং কনট্রাস্ট প্রদান করে। সর্বশেষ M3 চিপগুলো এআই-কেন্দ্রিক কাজের জন্য নিউরাল ইঞ্জিন-কে আরও শক্তিশালী করেছে।

ম্যাকবুক এয়ার : এই মডেলে টেপার্ড ডিজাইন বাদ দিয়ে একটি ফ্ল্যাট, ইউনিফর্ম ডিজাইন আনা হয়েছে। এতেও লিকুইড রেটিনা ডিসপ্লে এবং bP রয়েছে। এটি ফ্যানলেস থাকায় একদম শব্দহীনভাবে কাজ করতে পারে।