বাউল শিল্পীর রহস্যজনক মৃত্যু, স্বামী আটক
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় অনিকা আক্তার (১৮) নামের এক বাউল শিল্পীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। পরে আনিকার মরদেহ স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান তার স্বামী হাবিবুর রহমান (২৫)।
আজ শনিবার ভোরে ফতুল্লার ভুইগড় মাস্টারবাড়ী এলাকার একটি পাঁচতলা ভবনের চতুর্থ তলায় এ ঘটনা ঘটে। তবে পারিবারিক কলহের জেরে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন আনিকার পরিবার।
খবর পেয়ে ফতুল্লা থানা পুলিশ হাবিবুরকে আটক করে এবং আনিকার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।
আনিকা মাদারীপুর জেলার মোস্তফাকুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে। হাবিবুর ও আনিকা মাস্টারবাড়ী এলাকার ওই ভবনে একটি ফ্ল্যাটে ভাড়ায় থাকতেন।
আরও পড়ুন:
ডেঙ্গুতে ৬ জনের মৃত্যু
আনিকার বাবা জাহাঙ্গীর আলম জানান, পাঁচ বছর আগে হাবিবুর ভালোবেসে আনিকাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে হাবিবুর বিভিন্ন বিষয়ে ঝগড়া করতেন এবং আনিকার ভরণপোষণ দিতেন না। গত চার মাস আগে আনিকা একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। সন্তান কোলে নিয়ে আনিকা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকের বিভিন্ন বাউল ক্লাবে গান করতেন, আর উপার্জিত টাকা স্বামী জোর করে নিয়ে নিতেন।
তিনি আরও জানান, সম্প্রতি হাবিবুর মালা নামে আরেক নারী বাউল শিল্পীকে বিয়ে করলে আনিকা তার সত্যতা জানতে চায়। এ নিয়ে হাবিবুর ক্ষিপ্ত হয়ে ঘরের আসবাবপত্র ভাংচুর করে চাঁদপুরে চলে যান। এরপর আনিকাকে তালাকের নোটিশ পাঠান। আনিকা ওই নোটিশ নিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তির কাছে নালিশ করলে হাবিবুর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।
এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে হাবিবুরের সহযোগী স্বর্ণা আনিকার বাসায় গিয়ে তাকে বেধড়ক মারধর করে তার স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়। পরে আনিকার চিৎকারে আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে ওই দিনও হাসপাতালে নিয়ে যায়।
অভিযোগ করে তিনি আরও জানান, পরিকল্পিতভাবে আনিকাকে হত্যা করে হাবিবুর মরদেহ নিয়ে হাসপাতালে যান। তারা সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার দাবি করেছেন।
তবে অভিযুক্ত হাবিবুর রহমানের দাবি, আনিকাকে তিনি হত্যা করেননি। গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর থেকে এসে অনিকার খোঁজে তাদের ভাড়া বাসায় যায়। সেখানে গিয়ে দরজায় অনেক ধাক্কাধাক্কি করেও কোনো সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করেন। পরে দেখতে পান অনিকার নিথর দেহ জানালার গ্রিলের সঙ্গে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় ঝুলছে। এরপর তিনি তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তালাকের নোটিশের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তালাকের নোটিশ ভুয়া ছিল এবং আনিকাকে ভয় দেখানোর জন্য পাঠিয়েছিলাম।’
বিষয়টি নিশ্চিত করে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। তবে নিহতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে হাবিবুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।’
নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।