৬০ পেরিয়ে ৬১-তে জেমস

বিনোদন প্রতিবেদক
০২ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩৩
শেয়ার :
৬০ পেরিয়ে ৬১-তে জেমস

ঝাকড়া চুল দুলিয়ে গিটার হাতে গান গাওয়া এক রকস্টারের নাম ফারুক মাহফুজ আনাম জেমস। ভালোবেসে ভক্তরা তাকে ডাকেন ‘গুরু’ নামে। সংগীতপ্রেমীরা তাকে ব্যান্ড সংগীতের জীবন্ত কিংবদন্তি হিসেবে অভিহিত করেন। আজ ২ অক্টোবর এই তারকার জন্মদিন। ৬০ পেরিয়ে ৬১-তে পা রাখছেন তিনি। ১৯৬৪ সালের ২ অক্টোবর নওগাঁয় জন্ম নিলেও বেড়ে ওঠেন চট্টগ্রামে।

জেমসের মুখপাত্র রুবাইয়াৎ ঠাকুর রবিন জানান, বিশেষ দিনটি পরিবারের সঙ্গেই কাটিয়ে থাকেন জেমস। তার কথায়, ‘উনি (জেমস) জন্মদিনে পরিবারের সদস্যদের সময় দেন। আত্মীয়-স্বজন, কাছের মানুষদের সঙ্গে ফ্যামিলি টাইম কাটান।’

জন্মদিনের বিশেষ মুহূর্তে আয়োজন না রাখলেও, ভক্ত-শুভাকাঙ্ক্ষীদের শুভেচ্ছায় ভাসছেন ‘নগর বাউল’খ্যাত এই তারকা। তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে সংগীতপ্রেমীরা লিখে যাচ্ছেন নানা কথা।

এদিকে, সংগীতের ভুবনে জেমসের পথচলা মোটেও সহজ ছিল না। পরিবারের একরকম দ্বিমতে সংগীতচর্চা শুরু করেন তিনি। আর তাই গানের জন্য তাকে ছাড়তে হয় ঘরও। ঠাঁই হয় চট্টগ্রামের আজিজ বোর্ডিংয়ে। সেখানে থেকেই তার সংগীতের মূল ক্যারিয়ার শুরু। ১৯৮০ সালে জেমস প্রতিষ্ঠা করেন ব্যান্ডদল ‘ফিলিংস’। ১৯৮৭ সালে প্রকাশ হয় তার প্রথম অ্যালবাম ‘স্টেশন রোড’। এরপর ১৯৮৮ সালে আসে ‘অনন্যা’ নামের অ্যালবাম। ভিন্ন গায়কীর কারণে ততদিনে তরুণ শ্রোতাদের মনে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেন জেমস। শহুরের মানুষদের মন জয় করে গুরু’র গান পৌছে যায় গ্রামেগঞ্জেও।

১৯৯০ সালে প্রকাশিত ‘জেল থেকে বলছি’ অ্যালবামের শিরোনামের গানটি বিটিভিতে প্রচার হলে জেমসের প্রশংসায় পঞ্চমুখ তখন সংগীতপ্রেমীরা। এরপর ব্যান্ড সংগীত আর জেমস যেন একে অপরের পরিপূরক।

১৯৯৬ ‘নগর বাউল’, ১৯৯৮ সালে ‘লেইস ফিতা লেইস’, ১৯৯৯ সালে ‘কালেকশন অব ফিলিংস’ অ্যালবামগুলো প্রকাশ পায়। এরপর ‘ফিলিংস’ ভেঙে জেমস গড়ে তোলেন নতুন লাইনআপে ব্যান্ডদল ‘নগর বাউল’। এই ব্যান্ড ‘দুষ্টু ছেলের দল’ এবং ‘বিজলি’ অ্যালবাম দুটির মধ্যেই আটকে যায়।

জেমসের গাওয়া একক অ্যালবামের তালিকায় আছে ‘অনন্যা’ (১৯৮৮), ‘পালাবি কোথায়’ (১৯৯৫), ‘দুঃখিনী দুঃখ করো না’ (১৯৯৭), ‘ঠিক আছে বন্ধু’ (১৯৯৯), ‘আমি তোমাদেরই লোক’ (২০০৩), ‘জনতা এক্সপ্রেস’ (২০০৫), ‘তুফান’ (২০০৬), ‘কাল যমুনা’ (২০০৯)।

একক অ্যালবামের পাশাপাশি অসংখ্যা মিশ্র অ্যালবামে গেয়েছেন জেমস। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে তার জনপ্রিয় ততদিনে বিশ্বজুড়ে। ওপার বাংলায়ও (ভারত) জেমসের জয়ধ্বনি বেজে ওঠে। ২০০৫ সালে বলিউডে ‘গ্যাংস্টার’ সিনেমায় প্লেব্যাক করেন এই রকস্টার। তার গাওয়া ‘ভিগি ভিগি’ গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এবং এক মাসেরও বেশি সময় এটি বলিউড টপচার্টের শীর্ষে ছিল। ২০০৬ সালে আবারও বলিউডের সিনেমায় কণ্ঠ দেন। ‘লাইফ ইন এ মেট্রো’তে তার গাওয়া ‘রিশতে’ ও ‘আলবিদা’ গান দুটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়।

সিনেমার গানে সবশেষ তিনি কণ্ঠ দেন ২০১৭ সালে ‘সত্ত্বা’তে। এই সিনেমার ‘তোর প্রেমেতে অন্ধ’ গানটি আজও শ্রোতাদের মুখে মুখে। গানটির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পান এই গায়ক।

জেমসের গান জনপ্রিয় গানগুলোর তালিকায় আছে- ‘বাংলাদেশ’, ‘জেল থেকে আমি বলছি’, ‘মা’, ‘যেদিন বন্ধু চলে যাবো’, ‘দুখিনী দুঃখ করো না’, ‘লেইস ফিতা লেইস’, ‘বাবা কত দিন’, ‘বিজলী’, ‘দুষ্টু ছেলের দল’, ‘মিরাবাঈ’, ‘লিখতে পারি না কোন গান’, ‘তুমি জানলে না’, ‘পাগলা হাওয়া’, ‘গুরু ঘর বানাইলা কী দিয়া’, ‘কবিতা’, ‘মন আমার পাথরের দেয়াল’, ‘শেষ দেখা’ ইত্যাদি।