রূপচর্চায় অ্যাসেন্সিয়াল অয়েলের ব্যবহার

লাবণ্য লিপি
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯:১৬
শেয়ার :
রূপচর্চায় অ্যাসেন্সিয়াল অয়েলের ব্যবহার

বয়স ধরে রাখার চেষ্টা মানুষের আদি যুগ থেকে। কেউই চায় না বুড়িয়ে যেতে। তাই মানুষ এত এত সাজ উপকরণ ব্যবহার করে তাকে। কিন্তু প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ করা তথ্য-উপাত্তই বার বার এর সমাধান দিয়েছে। প্রকৃতি থেকে বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করে মানুষ যেমন বয়স ধরে রাখতে অনেক ক্ষেত্রে সক্ষম হয়েছে, তেমনি নিজের সৌন্দর্যচর্চায় হয়ে উঠেছে অভিজ্ঞ। 

বর্তমানে অনেককেই বয়স হয়ে যাওয়ার আগেই ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগতে দেখা যায়। এর পেছনের মূল কারণ আমাদের অনিয়ম ও অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন। প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস, যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান না করা, পুষ্টিকর খাবার না খাওয়া, ত্বকের যত্ন এবং আবহাওয়া এসব কিছুর কারণেই ত্বকের সুস্থতা বজায় থাকে বা নষ্ট হতে পারে। এ ছাড়া বয়স বেড়ে গেলে তো বয়সের ছাপ আরও ভালো করেই পড়ে যায়। বয়স হয়ে যাওয়ার পর বয়সের ছাপ পড়া এবং অল্প বয়সেই ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে যাওয়া দুটিই ভাবিয়ে তোলার মতো। তবে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রকৃতি নিজেই এসব সমস্যার সমাধানের উৎস। যেমন যুগ যুগ ধরে রূপচর্র্চা ও সৌন্দর্য রক্ষায় বিভিন্ন রকমের তেলের ব্যবহার খুবই নির্ভরযোগ্য একটি বিষয়। 

রূপচর্চায় যে কোনও তেল অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে। একটা সময় আমাদের নানী- দাদীরা সাজ এবং রূপচর্চার প্রধাণ উপকরণ হিসেবে বিভিন্ন রকম তেলের ব্যবহার করত। তখন হাতের নাগালে নানা রকম প্রসাধনী ছিলও না। তাই তেলই ছিল তাদের ভরসা।

রূপচর্চায় ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষা করতে বহু বছর ধরে অ্যাসেন্সিয়াল অয়েলের ব্যবহার একটি বিশ্বস্ত মাধ্যম। আজকাল নানা রকমের অ্যাসেন্সিয়াল অয়েল যা ‘বায়ো অয়েল’ নামে জনপ্রিয় তেল রয়েছে। যে তেল ত্বক সুরক্ষায় জাদুর মতো কাজ করে। একেক রকমের তেলে রয়েছে একেক রকম গুণাগুণ। 

কোনোটি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে, কোনোটা শুষ্কতা দূর করতে কাজ করে। আবার কোনো কোনো তেল নানা রকমের সমস্যা নিরসনে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অ্যাসেন্সিয়াল অয়েল মূলত চুলের যতেœ, ত্বক ফর্সা করতে, শরীরের রিলাক্সের জন্য ব্যবহার করা হয়। 

এ বিষয়ে হারমোনি স্পার স্বত্তাধিকারী ও আর্য়ুবেদিক রূপ বিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা রীতা বলেন, ‘অ্যাসেন্সিয়াল অয়েল মূলত ট্রিটমেন্ট অয়েল। এমনি এমনি এই তেল ব্যবহার হয় না। যারা একটু সচেতন তারা বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে এই তেলের ব্যবহার করে থাকে। তবে চুল পড়া, চুল গজানো, ত্বক ফর্সা করা, মুখের ত্বকে রিংকেল বা বয়সের ছাপ পড়া, বডি রিলাক্সড করতে এই তেলের ব্যবহার করা হয়। যেমন ত্বকের রোদে পোড়া ভাব কমাতে যদি কেউ জোজোবা অয়েলের সঙ্গে সিসিলি অয়েল মিক্সড করে কিছুদিন ব্যবহার করে তো সানবার্ন চলে যাবে। জেসমিন অয়েল পুরো বডিতেই যে কেউ ব্যবহার করতে পারবে। এতেও সানবার্ন চলে যাবে। ভালো ঘুম হবে। রোজ মারিয়া তেল ত্বককে রিলাক্সড করে। আর অ্যারোমা থেরাপি বা স্পার ক্ষেত্রেও বিভিন্ন প্রকার অ্যাসেন্সিয়ার অয়েলের ব্যবহার করা হয়। অ্যারোমা হলো সুগন্ধী আর থেরাপি হলো চিকিৎসা অর্থাৎ সুগন্ধী দিয়ে চিকিৎসা করানো। এ থেরাপিতে বডির মেটাবলিজম বাড়ে, ব্লাড সার্কুলেশন বাড়ে। আর ব্লাড সার্কুলেশন বাড়লে স্বাভাবিকভাবে মানবদেহের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হয়।’

রাহিমা সুলতানা আরও বলেন ‘অ্যাসেন্সিয়াল অয়েলটা হচ্ছে একটা সুগন্ধি, যা ফুলের নির্যাস থেকে নেওয়া হয়। এই অ্যাসেন্স মানুষের নার্ভাস সিস্টেমে কাজ করে। নার্ভে নার্ভে কাজ করে। এর সঙ্গে আমরা বিভিন্ন তেল মিক্সড করি। সেটা নারিকেল তেল বা অলিভের তেল হতে পারে। ফেসিয়ালের ক্ষেত্রে আমরা যখন কাজ করি তখন একফোঁটা অ্যারোমা তেল নিয়ে বিভিন্ন প্রকার অ্যাসেন্সিয়াল তেল মিশিয়ে ম্যাসাজের কাজ করি। এ ক্ষেত্রে লেমনটা রিফ্রেশমেন্টের কাজ করে। জেসমিন বা বেলি ফুলের অ্যাসেন্স মানবদেহের ভেতরে একটা ভালো লাগা তৈরি করে, চন্দনের সুগন্ধ মানুষের নার্ভগুলোকে অ্যাকটিভ করে তোলে। এর ফলে ব্লাড সার্কুলেশনটা ভালো হয়, শরীরে মেটাবলিজম বাড়ে। অ্যাসেন্সিয়াল তেলের একেকটা ফ্লেভার একেক রকমের কাজ করে। যাদের ঘুমের সমস্যা তারা এই অ্যাসেন্সিয়াল অয়েল দিয়ে অ্যারোমা থেরাপি নিতে পারে। আমাদের এখানে আমরা একটা বার্নার ব্যবহার করি, যেটা বডি ম্যাসাজ, ফেসিয়াল, অ্যারোমা যে কোনো ক্ষেত্রেই অ্যাসেন্সিয়াল তেলের ব্যবহার করা হয়। আর আমরা আমাদের গ্রাহক বুঝে কার জন্য কোন অ্যারোমা থেরাপি দরকার তা এসব অ্যাসেন্সিয়াল তেল ব্যবহার করে সেভাবেই সেই গ্রাহককে সেবা দিয়ে থাকি।’

বাজারে বিভিন্ন রকমের অ্যাসেন্সিয়াল অয়েল পাওয়া যায়। লেভেন্ডার অয়েল, জোজোবা অয়েল, জেসমিন অয়েল, আমন্ড অয়েল, কমলা লেবুর বীজ থেকে তৈরি অয়েল, সিসিলি অয়েল, ভাটভাটি অয়েল, তিলের তেল, জলপাইয়ের তেল, রেড়ির তেল ইত্যাদি। এসব অ্যাসেন্সিয়াল অয়েল মূলত থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর থেকে আমাদের দেশে আসে। 


 কিছু টিপস

* কিছু গোলাপের পাপড়ি পানির সঙ্গে ফুটিয়ে সেই সুগন্ধি পানি গোছলের পানিতে মিশিয়ে গোছল করুন, রাতে ভালো ঘুম হবে।

* গোছলের পানির সঙ্গে লেবুর পানি মিশিয়ে গোসল করুন, দূর হবে সব ক্লান্তি ও অবসাদ।

* উষ্ণ গরম পানিতে সামান্য লেবুর রস দিয়ে কিছুক্ষণ পা ভিজিয়ে রাখুন, রাতে ঘুমের প্রশান্তি পাবেন। এ ছাড়া পায়ের রিলাক্সের জন্যও এ থেরাপি ভালো কাজে দেয়।

* কুসুম গরম নারিকেল তেলের সঙ্গে সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে চুলে দিন। আধা ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলুন, চুল হবে ঝলমলে সুন্দর।

* এ ছাড়া বাজারের যেসব অ্যাসেন্সিয়াল অয়েল পাওয়া যায় তার ব্যবহার জেনে নিজেই ঘরে বসে স্বল্প খরচে এ সুবিধা নিতে পারেন। তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই এ বিষয়ে কোনো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।