পূজার আনন্দে রঙিন পোশাক

রিয়ানা ইসলাম রিম্পা
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
পূজার আনন্দে রঙিন পোশাক

কদিন পরই ঢোলে ঢাকের আওয়াজে, দেবীবরণের মধ্য দিয়ে শুরু হবে সনাতন ধর্মের মহোৎসব দুর্গাপূজা। বড়দের পূজার পোশাকে লাল-সাদা রঙের প্রাধান্য থাকলেও ছোটদের পোশাকে নেই রঙের বাধ্যবাধকতা। তবে উৎসবকে ঘিরে যাদের মধ্যে বেশি আনন্দ জমে ওঠে, সেই ছোট শিশু-কিশোরদের পোশাক হওয়া চাই তাদের মনের মতো রঙিন প্রজাপতির মতো ঝলমলে। জেনে নেওয়া যাক, দেশীয় ফ্যাশন হাউস ও রেডিমেড পোশাকের খোঁজখবর।

শিশুদের কাছে উৎসবের দিনগুলো যেন একেবারেই আলাদা। বড়দের মতো আড়ম্বর নয়, বরং আরামদায়ক, নিরাপদ ও রঙিন পোশাকই শিশুদের উৎসবের সাজে সবচেয়ে মানানসই- বলছিলেন মিরপুরের নীলিমা ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল রেডিমেড শপের স্বত্বাধিকারী সাজেদা আক্তার নীলিমা। তিনি বলেন, যেখানেই যান না কেন, শিশুদের স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতেই হবে। এ ক্ষেত্রে প্রধান বিষয় তাদের পোশাক।

শিশুরা সাধারণত ঢিলেঢালা পোশাক পরতেই পছন্দ করে। এ ছাড়া তাদের বেড়ে ওঠার সময়ে কখনই আঁটসাঁট পোশাক পরানো উচিতও নয়। আর এই ভ্যাপসা গরমে পূজা হওয়ায়, পূজাম-প ঘুরে ঘুরে দেখার পাশাপাশি সারাক্ষণ ভিড়, দৌড়ঝাঁপ ও খেলাধুলা করা শিশুদের অন্যতম কাজ। তাই উৎসবের পোশাকটি রঙিন ঝলমলে হওয়ার পাশাপাশি যেন আরামের হয় এ বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাদের জন্য বেশি আঁটসাঁট কিংবা ভারী কাপড় অস্বস্তিকর। এজন্য তুলা, লিনেন, নরম সিল্ক বা শীতকালে উষ্ণ কিন্তু হালকা কাপড় বেছে নেওয়া দরকার। শিশুর পোশাকও হওয়া উচিত রঙিন, হালকা, আরামদায়ক এবং নিরাপদ। নীলিমা আরও বলেন, পোশাকের ডিজাইন ও নকশা করার সময় খেয়াল রাখা জরুরি যেন খুব বেশি ভারী সিকুইন, তীক্ষè স্টোনের অলংকার বা অতিরিক্ত লম্বা পোশাক না হয়। পূজার পোশাক শিশুদের চলাফেরায় অস্বস্তি সৃষ্টি না করে, যেন স্বস্তি আরামদায়ক হয়। পাশাপাশি সহজে ধোয়া যায় এমন কাপড় বেছে নেওয়াই ভালো, যাতে উৎসব শেষে শিশুর পোশাক আবার ব্যবহারযোগ্য থাকে।



মেয়েশিশুদের জন্য

মেয়েশিশুদের উৎসবের পোশাকে শাড়ি, গাউন বা ফ্রক জনপ্রিয়। ছোটদের জন্য মিনি শাড়ি কিংবা কাতান কাপড়ে হালকা কাজের ফ্রক অনেকটাই উৎসবমুখর করে তোলে। এ ছাড়া লাল-সবুজ, গোলাপি, হলুদ বা প্যাস্টেল রঙের পোশাক শিশুদের প্রফুল্লতা প্রকাশ করে। অনেকে এখন জামদানি বা দেশীয় হ্যান্ডলুম কাপড়ে তৈরি শিশুদের পোশাককে বেছে নিচ্ছেন।

ছেলেশিশুদের জন্য

ছেলেশিশুর জন্য উৎসবের প্রথম পছন্দ বরাবরই ধুতি-পাঞ্জাবি, কুর্তা বা শার্ট। তুলা বা সিল্ক মিশ্রিত কাপড়ে তৈরি পাঞ্জাবি আর আরামদায়ক ধুতি কিংবা জিন্সের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া যায়। বিশেষ করে পূজার মতো উৎসবে লাল, সাদা, নীল কিংবা সোনালি রঙের পাঞ্জাবি শিশুদের আরও উজ্জ্বল করে তোলে। এ ছাড়া ফ্যাশন হাউসগুলো ঘুরে দেখা গেল প্রতিবারের মতো এবারও শারদীয় দুর্গাপূজা সামনে রেখে প্রতিটি ফ্যাশন হাউসেই ছোটদের জন্য থাকছে রঙিন সব পোশাকের আয়োজন।

পূজায় পোশাকের পসরা

যমুনা ফিউচার পার্কের বিভিন্ন দোকান, দেশাল, অঞ্জন’স, সেইলর, কে-ক্র্যাফট, লা রিভ, শৈশব, আড়ং, ক্লাব হাউস, টুয়েলভ, ইনফিনিটি, রঙ বাংলাদেশ, ইয়েলো বিশ্বরঙসহ বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস এবার পূজাকে কেন্দ্র করে ছোটদের জন্য নান্দনিক ড্রেস এনেছে। এবার পূজা কালেকশনে মিশে আছে ঐতিহ্য, লোকজ শিল্প, শৈল্পিক কারুকাজ ও আধুনিক ফ্যাশনের রুচিশীলতা। জ্যামিতিক নকশা, রেখার খেলা এবং রঙের ছন্দে আঁকা পোশাক।



এবার পূজায় পোশাক ডিজাইনে লালের দীপ্তি, খয়েরির গভীরতা, আকাশির স্বচ্ছতা, গেরুয়ার উষ্ণতা, কমলা রঙের উচ্ছ্বাস আর সাদার নির্মলতার প্রাধান্য রয়েছে। সব রঙ মিলেমিশে যেন পূজার সকাল, দুপুর আর সন্ধ্যার পুরো গল্প বর্ণনা করে প্রতিটি পোশাকে। ফ্যাব্রিকসে আছে সফট সিল্কের মসৃণ পরশে উৎসবের রাজসিকতা, লিনেনের হাওয়ায় শরতের স্নিগ্ধতা, জ্যাকার্ড কটনের বুননে ঐতিহ্যের গভীরতা, কটনের সরলতায় সারাদিনের স্বস্তি আর ভয়েলের স্বচ্ছতায় মায়াবী সৌন্দর্য। ডিজাইনে মিলেছে স্ক্রিন প্রিন্টের নিখুঁত রেখা, ব্লকপ্রিন্টের হাতে গড়া শিল্প, ডিজিটাল প্রিন্টের প্রাণবন্ত রঙ, সূক্ষ্ম এমব্রয়ডারির কারুকাজ এবং কাট-অ্যান্ড-স্যুর আধুনিক ফিনিশিং।

ফ্যাশন হাউসগুলোর পোশাকের দাম একটু বেশি হলেও কাপড়ের মান ভালো হয় এবং রঙেরও গ্যারান্টি থাকে। তবে যে কোনো মার্কেট থেকে নিজস্ব বাজেট অনুযায়ী কিনতে পারেন সোনামণির পছন্দনীয় পোশাকটি। অনেকেই আবার আধুনিক ছোঁয়ার মিশেলে শিশুদের জন্য ওয়েস্টার্ন ফিউশনও বেছে নিচ্ছেন। যেমন-গাউন বা ফ্রকের সঙ্গে দেশীয় জ্যাকেট অথবা কুর্তার সঙ্গে কোট। আবার ছেলেদের জন্য ছোট ব্লেজার বা ওয়েস্টকোটও উৎসবের সাজে যোগ করেছে বাড়তি মাত্রা।