৪৫ ঘণ্টা ধরে অনশনে চবির ৯ শিক্ষার্থী, অসুস্থ ৪
সাত দফা দাবিতে টানা ৪৫ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আমরণ অনশন করছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) নয় শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ৪ জন অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন বলে জানা গেছে।
এর আগে গত বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের সামনে অধিকার সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দের ব্যানারে বাম সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি শুরু করেন। ইতোমধ্যে ৪৫ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও তাদের এই অনশন এখনও চলমান রয়েছে।
অনশনরত ৯ শিক্ষার্থী হলেন, বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ওমর সমুদ্র, সংগীত বিভাগের ২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি জশদ জাকির, স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের ২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাংগঠনিক সম্পাদক রাম্রা সাইন মারমা, ইংরেজি বিভাগের ২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর রাজনৈতিক শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পাদক আহমেদ মুগ্ধ, একই বিভাগের দপ্তর সম্পাদক নাইম শাহ জান, বাংলা বিভাগের ১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী ও গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ধ্রুব বড়ুয়া, মার্কেটিং বিভাগের ২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী ও নারী অঙ্গনের সংগঠক সুমাইয়া শিকদার, সংগীত বিভাগের ২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী ও বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের সংগঠক ঈশা দে এবং বাংলা বিভাগের ১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুদর্শন চাকমা।
দীর্ঘক্ষণ অনশনে থাকায় তাদের মধ্যে সুমাইয়া সিকদার, ধ্রুব বড়ুয়া, জশদ জাকির ও সুদর্শন চাকমা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে সুদর্শন চাকমাকে অনশনের স্থানে স্যালাইন দেওয়া হয়েছিলো এবং বাকি তিনজন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে গেছেন চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে।
তাদের অনশন ভাঙাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক কামাল উদ্দিন, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনসহ কয়েকজন শিক্ষক তাদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। তারা চেষ্টা করেও অনশন ভাঙাতে ব্যর্থ হন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন স্থগিত করবেন না বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন:
ইবির ইসলামের ইতিহাস বিভাগে তালা!
বাংলা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের অনশনরত শিক্ষার্থী ওমর সমুদ্র বলেন, ‘অনশনের ৪৫ ঘণ্টা কেটে গেল। চিকিৎসকরা বললেন, আর অনশন চালিয়ে নেওয়া খুব ঝুঁকিপূর্ণ হবে। ইমিডিয়েট কিছু খেতে বললেন। জশদ জাকিরের হার্টে সমস্যা আছে। তাকে দ্রুত অনশন ভাঙতে বলেছে। বাকিদের অবস্থাও ভালো না, স্যালাইন চলছে। আমরা লড়াই চালিয়ে যাব। অনশন শুরুর সময় কথা দিয়েছিলাম, দাবি আদায় না হলে লাশ হয়েই ফিরব। প্রশাসনে দায়িত্বরতরা আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। তারা এখনও আমাদের দাবি মেনে নেয়নি।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খান আমাদের সময়কে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অনশনের কথা শুনে আমি, উপ-উপাচার্য ড. কামাল উদ্দিনসহ ৫-৬ জন শিক্ষক তাদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছি। তাদের সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টা আলোচনা করার পরেও তাদের অনশন ভাঙাতে পারেনি। আমরা বলেছি আগামী রবিবার তোমাদের সঙ্গে বসে তোমাদের সকল দাবি দাওয়া শুনবো। আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্তের রিপোর্টে যদি প্রক্টর দোষী হয় তাহলে অবশ্যই তাকে অপসারণ করা হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা সেটা মানে নাই। তারা তাদের কথার ওপর অটল আছে।’
তাদের সাত দফা দাবি হলো- ব্যর্থতার দায়ে প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ, আহত শিক্ষার্থীদের পূর্নাঙ্গ তালিকা প্রকাশ, নিরাপত্তাহীন অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য অবিলম্বে মানসম্মত ভ্রাম্যমাণ আবাসনের ব্যবস্থা কর এবং আবাসনচ্যুত শিক্ষার্থীদের মালামাল উদ্ধারে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ, উদ্ভূত পরিস্থিতিকে ঘিরে বিশেষভাবে চিহ্নিত শিক্ষার্থীদের সকলপ্রকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা এবং নিরাপরাধ এলাকাবাসীদের হয়রানি বন্ধ করা, বৈপরীত্যমূলক দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসনে উভয়পক্ষের অন্তর্ভুক্তিমূলক সমন্বয় কমিটি গঠন করা এবং ন্যূনতম তিন মাস পরপর মিটিং করা এবং সিন্ডিকেটকর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত এবং নিরাপদ ক্যাম্পাসের রোডম্যাপ প্রকাশ ও বাস্তবায়ন করা।