সংস্কারের জন্য নির্বাচন বন্ধ রাখা সংগত নয় - আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী

সাক্ষাৎকার

রণজিৎ সরকার
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
সংস্কারের জন্য নির্বাচন বন্ধ রাখা সংগত নয় - আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী

অধ্যাপক ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বাহরাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত। শিক্ষা, সংস্কার, রাজনীতি, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক, ছাত্র সংসদ নির্বাচনসহ নানা বিষয় নিয়ে আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী কথা বলেছেন আমাদের সময়ের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রণজিৎ সরকার

"আমাদের সময় : আপনার দৃষ্টিতে জাতির প্রয়োজনে শিক্ষা কমিশন গঠনের গুরুত্ব কতটুকু?

আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী : একটি দেশ জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত হবে কিনা, আধুনিক বিশে^ তীব্র প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে কিনা তা অনেকটাই নির্ভর করে দেশটির শিক্ষাব্যবস্থার ওপর। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার সমস্যা এবং তা সমাধানের উপায় নিয়ে এ পর্যন্ত তেমন কোনো কাজ হয়নি। বর্তমানে বিভিন্ন পর্যায়ে যে শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে তা কর্মমুখী এবং যুগের চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট নয়। একজন শিক্ষার্থী তার শিক্ষাজীবন শেষে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা পাচ্ছে না। বেসরকারি একটি গবেষণা সংস্থার মতে, বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিতদের প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন বেকার। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে যে শিক্ষা কার্যক্রম চালু আছে তা শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে পারছে না, শুধু পাসের হার বাড়াচ্ছে মাত্র। যেহেতু প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে একজন শিক্ষার্থী ভালোভাবে জ্ঞানার্জন করতে পারছে না তাই তারা উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে গিয়ে তাল মেলাতে পারছে না। কর্মজীবনে তারা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। কীভাবে প্রচলিত শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন করা যায় এবং উন্নত বিশে^র সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার মতো গুণগত মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা যায় সে লক্ষ্যে শিক্ষা কমিশন গঠন করা খুবই জরুরি।

শিক্ষার মান কীভাবে আরও উন্নত করা যায় সে সম্পর্কে সুপারিশ প্রদান এবং দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য শিক্ষা কমিশন গঠন করা খুবই প্রয়োজন ছিল। কিন্তু জাতির এই প্রয়োজন উপেক্ষিত হয়েছে, যা মোটও কাক্সিক্ষত ছিল না। শিক্ষক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মহল থেকে শিক্ষা কমিশন গঠনের জন্য দাবি জানানো হলেও কোনো সরকারই তাতে কর্ণপাত করেনি। প্রয়োজনে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন এবং আধুনিকায়নের জন্য স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠন করা যেতে পারে। গত সাড়ে ১৫ বছরের আওয়ামী স্বৈরাচারী শাসনামলে শিক্ষাব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। বিপর্যস্ত শিক্ষাব্যবস্থাকে কীভাবে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায় আমাদের সে ব্যাপারে ভাবতে হবে।

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা একসময় বেশ উন্নত ছিল। এই মুহূর্তে শিক্ষা কমিশন গঠন করা যদি সম্ভব না হয় তাহলে একটি কমিটি গঠন করে শিক্ষাক্ষেত্রে বিগত সরকারের আমলে যে অনিয়ম-দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে তা নিয়ে একটি শে^তপত্র প্রকাশ করা যেতে পারে। একইভাবে কী করে শিক্ষার মানোন্নয়ন করা যায় সে সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দিতে পারে।

আমাদের সময় : প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। এর কারণ কী এবং কীভাবে এটা প্রতিরোধ করা যেতে পারে বলে মনে করেন?

আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী : আমাদের দেশের শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া একটি জটিল সমস্যা। আমাদের শিক্ষানীতি এমনভাবে প্রণয়ন করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া বন্ধ করা যায়। সাধারণত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার প্রবণতা বেশি লক্ষ করা যায়। দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করানো হলেও তারা কিছুটা বড় হওয়ার পর পরিবারের আর্থিক সংকট নিরসনের জন্য শ্রম বিক্রি করতে বাধ্য হয়। পরিবারও দেখে, ছেলেরা স্কুলে পড়েও চাকরি পাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তার চেয়ে বরং তারা যদি খামারে কাজ করে তাহলে পরিবারের জন্য কিছু বাড়তি আয় হবে। মাধ্যমিক স্তরে মেয়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার সবচেয়ে বেশি। পরিবারে একটি মেয়ে বড় হলে অভিভাবকরা তার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। সামাজিক সম্মান রক্ষার জন্য অভিভাবকরা দ্রুত সময়ের মধ্যে মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করেন। সামাজিক নিরাপত্তার অভাববোধই অল্পবয়সী মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার একটি প্রধান কারণ। আমাদের দেশে অর্থনৈতিক ও সামাজিক কারণে শিক্ষার্থীরা স্কুল থেকে ঝরে পড়ে। স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা যাতে ঝরে না পড়ে তা নিশ্চিত করার জন্য ইউনেস্কো একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। সেই পরিকল্পনা বর্তমানে কোন পর্যায়ে আছে আমি জানি না। তবে এখনও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণের সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি।

বাংলাদেশে শিক্ষার ব্যয় তুলনামূলকভাবে বেশি। শিক্ষার ব্যয় কমানোর চেষ্টা করতে হবে। একই সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে শিক্ষা বৃত্তির ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে শিক্ষা যাতে কর্মসংস্থানমূলক হয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। একটি নির্দিষ্ট পর্যায় থেকে কারিগরি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। এতে একজন শিক্ষার্থী শিক্ষাজীবন শেষে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা পাবে। স্কুলে দুপুরে খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষা কার্যক্রম এমনভাবে প্রণয়ন করতে হবে যাতে একজন শিক্ষার্থী ক্লাসরুমে বসেই তার প্রতিদিনের পড়া শিখতে পারে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষা উপকরণ বিনামূল্যে প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। এসব উদ্যোগ নেওয়া হলে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার প্রবণতা অনেকটাই কমে যাবে বলে আশা করা যায়। গ্রামাঞ্চলে এখনও বাল্যবিবাহ প্রচলিত আছে। মেয়ে শিশুদের অভিভাবকরা মেয়ে বড় হলে কোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে চান না। তারা চেষ্টা করেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মেয়ের বিয়ে দিতে। অল্পবয়সে একটি মেয়ের বিয়ে দিলে তার কী কী অসুবিধা হতে পারে তা অভিভাবকদের বোঝাতে হবে।

আমাদের সময় : গ্রামীণ সমাজ নানা ধরনের কুসংস্কারে আচ্ছন্ন, এর ফলে গ্রামীণ নারীদের শিক্ষা কি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে?

আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী : গ্রামাঞ্চলে নারীদের ঘরের বাইরে না যাওয়ার জন্য ফতোয়া দেওয়া হয়। এমনকি এটাও বলা হয় যে, নারীদের উচ্চশিক্ষিত করা যাবে না। এতে পর্দার খেলাপ হবে। পুরো গ্রামীণ সমাজই নানা ধরনের কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। কাজেই নারীদের শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে রেখে কোনোভাবেই সুষম জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব নয়। নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা আছে তা দূরীকরণের ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলি, কিন্তু নারীর ক্ষমতায়ন করতে গেলে প্রথমেই নারীকে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করে যোগ্য কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। নারীকে অশিক্ষিত রেখে কখনই তার ক্ষমতায়ন সম্ভব নয়।

আমাদের দেশে ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ের ব্যাপারে আইনি প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে মেয়েদের বয়স বাড়িয়ে বিয়ে দেওয়া হয়। এটা রোধ করতে হবে। বাংলাদেশের নারীরা সৃজনশীল ক্ষমতার অধিকারী। তারা সুযোগ পেলে যে কোনো অসাধ্য সাধন করতে পারে। কিন্তু নারীরা সমাজে তাদের যোগ্য অধিকার পাচ্ছে না। নারীদের অশিক্ষিত রেখে দিনবদলের চিন্তা করা বৃথা। নারীরা শিক্ষিত হলে পুরো দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা পরিবর্তিত হতে পারে।

আমাদের সময় : ইউনেস্কোর মতে, একটি দেশের মোট জিডিপির ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন। আমাদের দেশের বাজেটে শিক্ষা খাতে যে ব্যয় বরাদ্দ দেওয়া হয় তার পরিমাণ জিডিপির ২ শতাংশেরও কম। এ ব্যাপারে কিছু বলবেন কি?

আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী : বরাদ্দকৃত এই অর্থের একটি বড় অংশই অবকাঠামোগত নির্মাণে ব্যয় হয়। সেখানেও ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ফলে শিক্ষার মানোন্ন্নয়ন ও গবেষণার জন্য বরাদ্দ পাওয়া যায় না। একটি জাতি যদি উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে গড়ে উঠতে না পারে তাহলে তার পক্ষে বাইরের দুনিয়ায় প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা খাতে মোট জিডিপির ৬ শতাংশ হয়তো রাতারাতি বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হবে না, তবে চেষ্টা চালাতে হবে। প্রতিবছর বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে হবে, যাতে আমরা ইউনেস্কোর টার্গেট পূরণ করতে পারি। শিক্ষার মানোন্নয়ন করতে না পারলে জাতি হিসেবে আমরা অর্ধশিক্ষিতই থেকে যাব।

আমাদের সময় : অনেক দিন ধরেই শিক্ষাঙ্গনে এক ধরনের অস্থিরতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এই অস্থিরতার কারণ কী এবং প্রতিরোধের উপায়ই বা কী?

আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী : এর নানা কারণ রয়েছে। শিক্ষাঙ্গন তো সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। সামাজে যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয় তার প্রভাব শিক্ষাঙ্গনেও পড়ে। বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ, আত্মীয়করণ এবং দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তারের মাধ্যমে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। তার অনিবার্য প্রভাব শিক্ষাঙ্গনেও পড়েছে। সরকারে আনুকূল্যে শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, সিট দখল ইত্যাদি অনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশকে বিনষ্ট এবং কলুষিত করা হয়েছে। শিক্ষাঙ্গনে যেসব অনৈতিক কার্যকলাপ হয় তা প্রতিরোধের মাধ্যমে শিক্ষাঙ্গনে জ্ঞানচর্চার উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শিক্ষাঙ্গনে জ্ঞানচর্চার উপযোগী পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে।

আমাদের সময় : শিক্ষাঙ্গনে, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-শিক্ষকদের মাঝে বিদ্যমান সম্পর্কের অবনতি লক্ষ করা যাচ্ছে। এর কারণ কী?

আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী : এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, আমাদের দেশের শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক আর আগের মতো নেই। শিক্ষক-ছাত্রের সম্পর্ক হতে হবে পিতা-পুত্রের মতো। আমি বিশে^র বেশ কিছু বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণার কাজে সম্পৃক্ত ছিলাম। আমি দেখেছি, শিক্ষক ও ছাত্রের সম্পর্ক কতটা মধুর হতে পারে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে যদি সুসম্পর্ক গড়ে না ওঠে তাহলে জ্ঞান আহরণ ও জ্ঞান বিতরণের কাজ সঠিকভাবে হতে পারে না। ছাত্র হবে শিক্ষকের বন্ধু। তাদের উভয়ের মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে জ্ঞান সঞ্চারিত হবে এটাই নিয়ম। কোনো কারণে এর ব্যত্যয় ঘটলে জ্ঞানচর্চা এবং জ্ঞান বিতরণ বিঘ্নিত হতে বাধ্য। ফলে ছাত্র-শিক্ষকের মাঝে সৃষ্ট দূরত্ব দিন দিনই বাড়ছে। ছাত্র-শিক্ষকের মাঝে সৃষ্ট ব্যবধান ও দূরত্ব শিক্ষা কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে। ছাত্র-শিক্ষকের যে অবনতিশীল সম্পর্ক তা দূর করতে হবে।

আমাদের সময় : ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়সহ দেশের পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রসংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই উদ্যোগ শিক্ষাঙ্গনে গণতন্ত্রচর্চায় কতটা অবদান রাখবে বলে মনে করেন?

আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী : বিভিন্ন পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে আমি তাকে স্বাগত জানাই। ছাত্রসংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে বিশ^বিদ্যালয়ে ছাত্র নেতৃত্ব গড়ে উঠবে। বিশ^বিদ্যালয়ে আজকে যারা ছাত্রনেতা হিসেবে নির্বাচিত হবেন, পরে তারাই জাতীয় রাজনীতিতে নেতৃত্ব দেবেন। নির্বাচিত ছাত্রসংসদ কার্যকর থাকলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া এবং অভাব-অভিযোগ এখানে পেশ করতে পারবে। বিগত সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে বিশ^বিদ্যায়লগুলোর ছাত্রসংসদ কার্যত অচল করে রাখা হয়েছিল। এতে নেতৃত্ব গড়ে ওঠার সুযোগ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষাঙ্গন নানা ধরনের অন্যায়-অপকর্মের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল। নির্বাচিত ছাত্রসংসদের প্রথম কাজ হবে শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার উপযোগী পরিবেশ ফিরিয়ে আনা। ছাত্রসংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হোক। নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিরা বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি ও অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে অবদান রাখবে এটাই প্রত্যাশা করি।

আমাদের সময় : অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে বাদ দিয়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তা কতটা গ্রহণযোগ্য হবে বলে মনে করেন?

আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী : আমি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। জনগণের রায়ই শেষ কথা। জনগণ যদি চায় বিদ্যমান অবস্থাতেই নির্বাচন হবে তাহলে নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনো অসুবিধা নেই। আবার জনগণ যদি মনে করে, আওয়ামী লীগ বা জাতীয় পার্টির যেসব সদস্য বা নেতা কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত ছিলেন না এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করেননি তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকা উচিত নয় তাহলে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। এটা সম্পূর্ণরূপেই জনগণের চাওয়ার ওপর নির্ভর করছে। এ ব্যাপারে জনগণই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

আমাদের সময় : অনেকেই বলছেন, নির্বাচনের আগে সংস্কার ও গণহত্যার বিচার করতে হবে। আবার কেউ কেউ বলছেন, আগে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। আপনি কী বলেন?

আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী : সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। সংস্কার এক দিনে বা রাতারাতি সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। আর গণহত্যার বিচারের জন্যও কিছুটা সময়ের প্রয়োজন রয়েছে। তাই এ ধরনের শর্ত দিয়ে নির্বাচন বিলম্বিত করার কোনো মানে থাকতে পারে না। ইতোমধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঘোষণা করা হয়েছে। এই মুহূর্তে অন্য কোনো বিতর্ক তৈরি না করে নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য হয় সে ব্যাপারে সহযোগিতা করা উচিত। অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘদিন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা উচিত নয়। এতে নানা ধরনের সমস্যা এবং বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে। তাই ঘোষিত সময়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো বিকল্প নেই। সংস্কারকাজ এবং অপরাধীদের বিচারকার্য চলমান রয়েছে। আগামীতে যারা নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করবেন তারা সংস্কার এবং অপরাধীদের বিচারের কাজ সম্পন্ন করবেন। সংস্কার আগামী ৫০ বছর, এমনকি ১০০ বছর ধরে চলতে পারে। তাই সংস্কারের জন্য নির্বাচন বন্ধ রাখা সংগত হবে না। নির্বাচন এবং সংস্কার ও অপরাধীদের বিচারের কাজ একই সঙ্গে চলতে পারে।

আমাদের সময় : সাক্ষাৎকারে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী : ধন্যবাদ। "