শরতে নীল সাজে
শরৎকালটাই যেমন একটু কেমন! কখনো নীল আকাশ, আবার কখনো পেঁজা তুলোর মতো ভেসে বেড়ানো সাদা মেঘ। এর সঙ্গে দিগন্তছোঁয়া কাশফুলের মনমাতানো দৃশ্য, কখনো হয়তো দোলনচাঁপা, বেলি, শিউলি, শাপলা ফুলের অবারিত সৌন্দর্য, এসব কিছুই আমাদের মনটাও যেন একটু নাড়িয়ে দেয়। মনটাও মেঘের সঙ্গে উড়ে বেড়ায় আকাশে। তখন হয়তো আপন মনে গেয়ে উঠি কবিগুরুর এই গানটি, ‘শরতে আজ কোন অতিথি এল প্রাণের দ্বারে। আনন্দ গান গা রে হৃদয়, আনন্দ গান গা রে।’ কিংবা ‘নীল আকাশে কে ভাসালে সাদা মেঘের ভেলা রে ভাই-লুকোচুরি খেলা।’
শরতের আকাশের এই মেঘ- রোদ্দুরের খেলা প্রভাব ফেলে আমাদের মনেও। আর তাই তো শরতে প্রকৃতির এই মনমাতানো সাজ কখনো উঠে আসে আমাদের শাড়ির আঁচলে এক টুকরো নীল আকাশ হয়ে, তো কখনো শরতের কাশবন যেন দোলা দিয়ে যায় কামিজের প্রান্ত ছুঁয়ে। কখনো বা শাপলা ফোটে শাড়ির আঁচলে। তা কেমন হবে আমাদের শরতের সাজ? জানতে চাইলে ফ্যাশন ডিজাইনার লিপি খন্দকার বলেন, ‘ঘন নীল আকাশ, গুচ্ছ গুচ্ছ সাদা মেঘ, কাশবন, শিউলির হালকা মৃদুমন্দ সৌরভে কিংবা শাপলা বিলের মোহনীয় রূপে মুগ্ধ হয় না এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া মুশকিল। শরৎ বলতেই আমরা বুঝি নীল-সাদা আর সবুজের ঐকতান। তাই এ সময় প্রকৃতির সঙ্গে একাকার হতে মানানসই হবে এ রঙগুলোর পোশাক। হালকা নীল-সাদা আর সবুজের যে কোনো ধরনের শেডেই আপনার পোশাক শরতের বার্তা বহন করে। আবার শরৎ বলতেই অনেকে বোঝেন হালকা সবুজ, টিয়া, হলুদ, কমলা রঙগুলো। এসব রঙের পোশাকও বেছে নিতে পারেন শরতের সাজে।’
তিনি বলেন, শরতের পোশাক সুতির কোনো বিকল্প নেই। এ সময় বেছে নিতে পারেন অ্যান্ডিকটন, তাঁত, ভয়েল, লিনেন জাতীয় ফেব্রিকস। একটু গর্জিয়াস পোশাক চাইলে সিল্ক, জয়সিল্ক বা মসলিন ভালো লাগবে। লং কামিজের সঙ্গে সুতি পালাজো, চাপা সালোয়ার কিংবা চুড়িদার পরলেও ভালো লাগবে। শরতের পোশাকের ডিজাইনে হ্যান্ডপেইন্ট, ব্রাশপেইন্ট, স্ক্রিনপেইন্ট মাধ্যমেই বেশি করা হয়।
নজরুলসংগীত শিল্পী রত্না দাস বলেন, ‘নীলের যেকোনো শেডই আমার খুব পছন্দের। আর এ সময় তো যে কোনো উৎসব-আয়োজনে সাজি নীল সাজে। আসলে নীল রঙটাই এমন যে, এটা সবাইকে মানিয়ে যায়। বিশেষ করে নীল শাড়িতে যে কোনো নারীকেই অসাধারণ লাগে।’
আরও পড়ুন:
শীতে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন
এখন যেহেতু প্রকৃতিতে রোদ-বৃষ্টির খেলা, তাই প্রসাধন বেছে নিন পানি নিরোধক। এ সময় দিনের বেলা গরমে যেমন গাঢ় সাজ মানানসই নয়, তেমনি অন্যদের চোখেও তা দৃষ্টিকটু লাগে। তাই শরতের সাজে রাখুন স্নিগ্ধভাব। কেমন হবে এই সময়ের সাজ, জানতে চাইলে বিউটি এক্সপার্ট আফরোজা পারভীন জানালেন, ‘সময় এবং আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সাজও বদলে যায়। শরতের ভোরটা খুব স্নিগ্ধ। তবে একটু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদের তপ্ত ছোঁয়ায় এ আবেশ কেটে যায়। আবার হুট করে ঝরে পড়ে টাপুরটুপুর বৃষ্টি। সাজের ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে এ সবকিছুই। এ ক্ষেত্রে মানানসই হবে হালকা সিগ্ধ সাজই। তাই এ সময় মেকআপের ক্ষেত্রে বেইজ মেকআপটা কমপ্যাক্ট পাউডার দিয়েই সেরে ফেলুন। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে বেছে নিন আইশ্যাডো। শরৎ সাজে চোখে নীল আইশ্যাডো, মাশকারা, আইলাইনার ভালো লাগবে। শরতের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে চোখে রঙিন কাজলও ভালো লাগবে। নীল, সবুজ, গোলাপি কাজলের রেখাও টেনে দিতে পারেন চোখের কোণে। রাতের সাজে চোখে ভারী করে নীল কিংবা নীলচে আইশ্যাডো লাগিয়ে নিলে গর্জিয়াস লাগবে। সঙ্গে হাইলাইট দিন সোনালি রঙের। এর সঙ্গে লাগিয়ে নিন ওয়াটার প্রুফ মাশকারা, পেন্সিল আইলাইনার ও কাজল। ব্লাশনের টানে রাখুন হালকা গোলাপি আভা। লিপস্টিকের ক্ষেত্রে এখন চলছে গাঢ় রঙ। ব্যবহার করতে পারেন কমলা, লাল, মেজেন্টা রঙগুলো।
শরতের সাজ পোশাকের সঙ্গে, বিশেষ করে নীল রঙের পোশাকের সঙ্গে মুক্তার গহনা অনেক বেশি মাধুর্য এনে দেয়। ভালো লাগবে মেটাল, কাচ, মাটি, পুঁতি, বিডসের গহনাও। তবে অনেক বেশি গহনা না পরে বরং গলায় একটা লম্বা মালা, কানে ছোট দুল অথবা টপ পরুন। এতেই ফুটে উঠবে শরতের স্নিগ্ধতা।
আরও পড়ুন:
জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণগুলো জেনে রাখুন
চুলের সাজে ভালো লাগবে খোঁপা, বেণি সবকিছুই। তবে শরতে খোলা চুলের সৌন্দর্যই যেন ভিন্ন কিছু। বেণি, খোঁপা কিংবা খোলা চুল যেভাবেই চুল সাজিয়ে নিন না কেন, চুলে গুঁজে দিন শরতের কোনো ফুল। চুল খোলা রেখে কানের পাশে শুধু একটি দোলনচাঁদা গুঁজে দিলেও দেখতে অসাধারণ লাগবে। কিংবা চলতি পথের ধারের একটা লম্বা কাশফুল ছিঁড়েও যদি খোঁপায় পেঁচিয়ে দেন তাতেও ফুটে উঠবে শরতের সৌন্দর্য। টিনএজাররা চুলগুলো একটু টেনে পনিটেল করে নিলে বেশ ভালো লাগবে।