জাকসুর ভোটগ্রহণ কাল, লড়ছেন যারা

জাবি প্রতিনিধি
১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯:০২
শেয়ার :
জাকসুর ভোটগ্রহণ কাল, লড়ছেন যারা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের প্রচারসহ ভোটগ্রহণের প্রায় সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আচরণবিধি লঙ্ঘন, অভিযোগ,পাল্টা-অভিযোগ সব ছাপিয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর একেবারেই ভিন্ন বাস্তবতায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ নির্বাচন। তবে স্বাধীনতার পর এই প্রথম ছাত্রলীগের অংশগ্রহণ নেই নির্বাচনে এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ইসলামী ছাত্রশিবিরও। এর মধ্যে বাগছাসের মতো শক্তিশালী নতুন ছাত্র সংগঠনও অংশ নিয়ে প্রতিযোগিতা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে।

দীর্ঘদিন পর ভয়মুক্ত পরিবেশে নির্বাচন করতে পারছে সর্বশেষ তিন জাকসুতে বিজয়ী ও ইতিহাসে বড় প্রভাবক সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের বাইরে স্বতন্ত্র প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের আলোচনায় আসাও এবারের জাকসু নির্বাচনের অন্যতম আলোচনার বিষয়।

জাকসুর ৭টি প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

এবারের জাকসু নির্বাচনে সাদী-বৈশাখী-সাজ্জাদ-ইক্বরার নেতৃত্বে ছাত্রদল প্যানেল, আরিফ-মাজহার-ফাহিম-মেঘলার নেতৃত্বাধীন শিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট, অমর্ত্য (প্রার্থীতা বাতিল)-শরণ-স্রোত-নিকির নেতৃত্বে ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সমর্থিত সম্প্রীতির ঐক্য, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ সমর্থিত উজ্জল-সিয়াম-আয়ানের নেতৃত্বে ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক জিতু-শাকিলের নেতৃত্বে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’।

এছাড়াও ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি অমর্ত্য রায় ও সংগঠনগুলোর আরেকাংশের ‘সংশপ্তক পর্ষদ’ নামে পাঁচ সদস্যের আংশিক প্যানেল ও জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের একাংশের মুখপাত্র মাহফুজ ইসলামের নেতৃত্বে আট সদস্যের ‘স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ’ নামে আরেকটি আংশিক প্যানেল রয়েছে। এর বাইরেও আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

প্রার্থী সংখ্যা

জাকসুর ২৫ পদে রয়েছেন ১৭৮ জন প্রার্থী। এর মধ্যে ১৩২ জন পুরুষ ও ৪৬ জন নারী। কেন্দ্রীয় সংসদের নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে নয়জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে নয়জন, নারী যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদে ছয়জন, পুরুষ যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদে ১০ জন, শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক পদে নয়জন, পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক পদে ছয়জন, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে আটজন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে আটজন, নাট্য সম্পাদক পদে পাঁচজন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে তিনজন, নারী সহক্রীড়া সম্পাদক পদে ছয়জন, পুরুষ সহক্রীড়া সম্পাদক পদে ছয়জন, তথ্য-প্রযুক্তি ও গ্রন্থাঘার সম্পাদক সাতজন, সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক পদে আটজন, নারী সহ-সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক পদে সাতজন, পুরুষ সহ-সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক পদে সাতজন, স্বাস্থ্য ও খাদ্যনিরাপত্তা বিষয়ক সম্পাদক সাতজন, পরিহন ও যোগাযোগ সম্পাদক পদে সাতজন, নারী কার্যকরী সদস্য পদে ১৬ জন, পুরুষ কার্যকরী সদস্য পদে ২৬ জন অংশগ্রহণ করবেন।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ২১টি হল সংসদ রয়েছে। প্রতিটি হলে রয়েছে ১৫টি পদ। ২১টি হল সংসদে মোট ৩১৫টি পদ। ১১ ছাত্র হলের প্রার্থী সংখ্যা ৩১৬ জন ও ১০ ছাত্রী হলের প্রার্থী সংখ্যা ১৩১ জন, সবমিলিয়ে ২১ হলে মোট প্রার্থী ৪৪৭ জন।

বিভিন্ন হলে প্রার্থীর সংখ্যা

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি হলের ১১টি ছাত্র ও ১০টি ছাত্রী হল। ছেলেদের ১১টি হলের প্রায় সব (১৫টি) পদে একাধিক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। কিন্তু মেয়েদের হলে চিত্র সম্পূর্ণ আলাদা। হল সংসদে ১৫টি পদ হলেও কোনো হলে ৬টি, কোথাও ১০টি আবার কোথাও ১১টি পদে মনোনয়নপত্র জমা হয়েছে। বেশিরভাগ পদেই কোনো প্রার্থী পাওয়া যায়নি।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আ.ফ.ম কামালউদ্দিন হল, শহিদ সালাম বরকত হল এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে জমা পড়েছে ২২টি করে মনোনয়ন। অন্যদিকে, মীর মোশাররফ হোসেন হল, মওলানা ভাসানী হল এবং ১০নং ছাত্র হলে জমা হয়েছে ৩০টি করে মনোনয়নপত্র। শহিদ রফিক জব্বার হল ও আল বেরুনী হলে জমা পড়েছে ২১টি মনোনয়ন। তবে ২১নং ছাত্র হল হলে ৩৮টি ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলে ৬০টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। এছাড়াও শহিদ তাজউদ্দীন আহমেদ হলে জমা পড়েছে ৪৯টি মনোনয়ন।

অন্যদিকে, নারী শিক্ষার্থীদের জাহানারা ইমাম হলে ১৬টি, প্রীতিলতা হলে ১৩টি, বেগম খালেদা জিয়া হলে ১১টি, বেগম সুফিয়া কামাল হলে ১০টি, বেগম ফজিলাতুন্নেছা হলে জমা পড়েছে মোট ১৫টি মনোনয়নপত্র। এছাড়া ১৫নং ছাত্রী হল, রোকেয়া হল ও বীরপ্রতিক তারামন বিবি হলে জমা পড়েছে ১৭টি করে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। সর্বনিম্ন সংখ্যক মনোনয়ন ১৩নং ছাত্রী হল ও নওয়াব ফয়জুন্নেছা হলে জমা পড়েছে। হল দুটিতে ১৫টি পদে মাত্র ৬টি করে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে।

ছেলেদের হলে পূর্ণাঙ্গ প্রার্থিতা থাকলেও মেয়েদের হলে পদ শূন্য থাকার বিষয়টি শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকে মনে করছেন, নির্বাচন কমিশনের প্রচারণার ঘাটতি এবং নারী শিক্ষার্থীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের আগ্রহ কম থাকায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

এছড়াও নারী নেতৃদের উদ্দেশ্যে অনলাইনে বাজে মন্তব্য, বুলিং ও অবদানকে অস্বীকার করার প্রবণতাকে দায়ী করছেন কেউ কেউ। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সংগঠক সোহাগি সামিয়া বলেন, ‘জুলাইয়ে অবদান রাখা নারীদের প্রাপ্য সম্মান দেওয়ার বদলে হেয় করা হয়েছে। সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন অনেকেই। একারণে তারা আর আগ্রহী নয়।’

তবে শিক্ষকরা বলছেন, বিষয়টি কাঠামোগত সমস্যা ও নারী শিক্ষার্থীদের রাজনীতিতে অনীহার প্রতিফলন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিপ্লবোত্তর বিভাজনকে দায়ী করে উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ‘আমরা ঐক্যবদ্ধ না থাকায় তারা অভিমানস্বরূপ দূরে সরে গিয়েছে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইস্যুতে বিভাজিত হওয়ায় আজকের এ পরিস্থিতি।’

ভোটার সংখ্যা

জাকসু নির্বাচনে মোট ১১ হাজার ৮৮৩ জন ভোটার। এরমধ্যে নারী ভোটার ৫ হাজার ৭২৮ ও পুরুষ ভোটার ৬ হাজার ১১৫ জন।