আদালতকে খায়রুল /

বয়স ও হার্ট অ্যাটাকের ‎বিষয়টি বিবেচনা করবেন

আদালত প্রতিবেদক
১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪:৫২
শেয়ার :
বয়স ও হার্ট অ্যাটাকের ‎বিষয়টি বিবেচনা করবেন

প্লট দুর্নীতির মামলার শুনানিতে বিচারকের উদ্দেশে অনুরোধ জানিয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক বলেছেন,‘আমার বয়স ৮১ প্লাস। দুই সপ্তাহ আগে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। জামিনের জন্য এ বিষয়গুলো বিবেচনা করে যা আদেশ দেওয়ার দেবেন।’

‎আজ বুধবার ঢাকার সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতে এ শুনানি হয়। শুনানিতে আইনজীবীর বক্তব্যের পাশাপাশি তিনিও আদালতে বক্তব্য রাখেন। 

‎ওই আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ইব্রাহিম মিয়া শুনানি শেষে তাকে গ্রেপ্তার দেখান ও জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন।

এদিন শুনানিকালে খায়রুল হককে আদালতে হাজির করে সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ প্রহরায় আদালতে তোলা হয়। এ সময় তার মাথায় হেলমেট ও বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিহিত ছিল।

‎‎‎আসামির কাঠগড়ায় একটি প্লাস্টিকের চেয়ারে তাকে বসতে দেওয়া হয়। বিচারক এজলাসে উঠলে তিনি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ান। শুরু হয় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানি। এক পর্যায়ে তিনি কথা বলতে আদালতের অনুমতি প্রার্থনা করলে আদালত মঞ্জুর করেন। 

‎‎বক্তব্যে খায়রুল হক বলেন, ‘সবাই যেভাবে প্লটের জন্য (রাজউকে) অ্যাপ্লাই করে, আমিও সেভাবে করেছি। ২২/২৩ বছর আগের কথা হওয়ায় কারোরই মনে থাকার কথা না। সেসময় আমি লিখেছিলাম, আমার টাকা নেই। তাই রিটায়ার্ড করার পর টাকা দেবো। টাকা না থাকা তো কোনো অপরাধ নয়। তখন আমার এত টাকা ছিল না। এ কারণে রাজউককে জানাই রিটায়ার্ডমেন্টের পরে টাকাটা দেবো। সেভাবে রিটায়ার্ডমেন্টের পর বাকি টাকা আমি পরিশোধ করেছি। এরপর তারা আমাকে রেজিস্টি করে দিয়েছে।’

‎‎তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিভিন্ন আলোচিতসহ অনেক মামলার জাজমেন্ট দিয়েছিলাম। যা শেষ করতে আমার পৌনে তিন বছর লেগেছে।’

‎‎সবেক এ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘রানা প্লাজা ভবন ধসের পর আমাকে এবং সুলতানা কামালসহ তিনজনকে নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে কমিশন গঠন হয়। সেখানে কাজ করতে আমাদের প্রতি মাসে বেতন ছিল সাড়ে ৯ হাজার ডলার। আমরা ১৮ মাস কাজ করেছিলাম। একটা টাকাও আমরা নেইনি। কেন নেইনি? চেয়েছিলাম এই দেড় কোটি টাকা রানা প্লাজায় যাদের ক্ষতি হয়েছে তারা যেন পায়।’

‎কোথাও থেকে কোনোভাবে সুবিধাভোগী হননি দাবি করে খায়রুল হক বলেন, ‘আমার বয়স ৮১ প্লাস। দুই সপ্তাহ আগে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। জামিনের জন্য এ বিষয়গুলো বিবেচনা করে যা আদেশ দেওয়ার দেবেন।’ বক্তব্য শেষে আদালত তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন।

‎প্রসঙ্গত, ‎গত ২৪ জুলাই সকালে ধানমন্ডির বাসা থেকে খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। জুলাই আন্দোলনের সময় ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে যুবদল কর্মী আবদুল কাইয়ুম আহাদ হত্যা মামলায় ওইদিন রাতে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। 

এর পাঁচদিন পর গত ২৯ জুলাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে বেআইনি রায় দেওয়া ও জাল রায় তৈরির অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় করা মামলায় তাকে ভার্চুয়ালি গ্রেপ্তার দেখানো হয়। শাহবাগ থানার ওই মামলায় তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়। 

‎‎প্লট দুর্নীতির মামলাটি গত ৬ অগাস্ট দুদকের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বাদী করেন। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন-রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল হুদা, সদস্য (অর্থ ও এস্টেট) আ.ই.ম গোলাম কিবরিয়া, সদস্য মো. আবু বক্কার সিকদার, সদস্য (পরিকল্পনা) মো. আনোয়ারুল ইসলাম সিকদার, সদস্য (এস্টেট) আখতার হোসেন ভুইয়া, সাবেক যুগ্ম সচিব ও সদস্য (উন্নয়ন) এম মাহবুবুল আলম এবং সদস্য (প্রশাসন ও ভূমি) নাজমুল হাই।

‎‎মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, ঢাকার ২ নম্বর শিক্ষা সম্প্রসারণ সড়কে (নায়েম রোড) পৌনে ১৮ কাঠা জমির ওপর ৬ তলা পৈতৃক বাড়ি রয়েছে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের। কিন্তু তিনি দেশের প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে দ্য ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (অ্যালটমেন্ট অব ল্যান্ডস) রুলস, ১৯৬৯ এর বিধি ১৩ লঙ্ঘনের মাধ্যমে হলফনামা দাখিল করে রাজউকের ১০ কাঠা প্লট বাগিয়ে নেন।

খায়রুল হক প্লট বরাদ্দের শর্ত ভঙ্গ করে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। রাজউকের কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় সুদ মওকুফের কোনো বিধান না থাকা সত্ত্বেও প্লট বরাদ্দের জন্য সাময়িক বরাদ্দপত্রে শর্ত ভঙ্গ করেন। তিনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সুদসহ কিস্তির টাকা জমা না দিয়ে অবসরের পর অর্থাৎ বরাদ্দের ৫ বছর পর সুদবিহীনভাবে টাকা জমা দেন। 

এ ক্ষেত্রে রাজউকের প্রচলিত নীতিমালা ভঙ্গ করে বিশেষ সুবিধা গ্রহণ করে সুদবাবদ চার লাখ ৭৪ হাজার ২৪০ টাকা পরিশোধ না করে সরকারের ক্ষতিসাধন ও আত্মসাৎ করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।