জাকসু প্রার্থীদের বাধ্যতামূলক ডোপ টেস্ট, যা বলছেন প্রার্থীরা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের বাধ্যতামূলক ডোপ টেস্ট চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের ১০ দিন পর এবং নির্বাচনের মাত্র দুই দিন আগে ডোপ টেস্ট করার বিষয়কে প্রশাসনের অদূরদর্শীতা ও হঠকারী সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন প্রার্থীরা।
আজ সোমবার নির্বাচন কমিশনের সিন্ধান্ত অনুযায়ী সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জাকসু নির্বাচনের কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদের প্রার্থীদের নমুনা সংগ্রহ শুরু হয়েছে। নমুনা সংগ্রহ চলবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নির্বাচন কমিশনের মনোনীত কর্তৃপক্ষের কাচে জাকসুর প্রার্থিতার তথ্য প্রদান করে প্রার্থীরা ডোপ টেস্টের নমুনা প্রদানের করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সংসদের প্রার্থীদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হল সংসদের প্রার্থীদের নমুনা সংগ্রহ চলমান। প্রার্থীদের ডোপ টেস্টের জন্য নমুনা হিসেবে ইউরিন নেওয়া হচ্ছে।
বাধ্যতামূলক ডোপ টেস্টের সিদ্ধান্তকে প্রার্থীরা সাধুবাদ জানালেও নির্বাচনের মাত্র দুই দিন আগে এই কার্যক্রম গ্রহণকে নির্বাচন কমিশনের অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত বলে দাবি করছেন প্রার্থীরা।
জাকসু নির্বাচনের দুই দিন আগে ডোপ টেস্ট করা প্রশাসনের হঠকারী সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন জিএস পদপ্রার্থী আবু তৈহিদ মো. সিয়াম। তিনি বলেন, ‘চূড়ান্ত প্রার্থিতা ঘোষণার আগেই ডোপ টেস্টের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল। ইতোমধ্যে ব্যালট পেপারের প্রার্থীদের নাম পিন করা হয়ে গেছে। ডোপ টেস্টে কারও পজিটিভ আসলে সেটা কীভাবে বাতিল হবে, তা আমরা জানি না। আমি মনে করি এটা প্রশাসনের একটা হঠকারী সিদ্ধান্ত।’
নির্বাচনে নারী জিএস প্রার্থী লামিয়া রহমান তৈশী বলেন, ‘দীর্ঘ ৩৩ বছর পর আগামী ১১ সেপ্টেম্বর জাকসু হতে যাচ্ছে। নির্বাচনের ঠিক দুদিন আগে আজকে ডোপ টেস্ট করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমি বলতে চাই, যেহেতু অনেক আগে থেকেই ডোপ টেস্ট নিয়ে কথা হচ্ছিল তাহলে কেন দুদিন আগে ডোপ টেস্টের কথা আমাদের জানানো হয়? ডোপ টেস্টে অনেক প্যানেল বা অনেকে অংশ নিচ্ছে না তাহলে আমরা যারা করিয়েছি তাদের সাথে কিভাবে মানদণ্ড হবে? এই ফলাফল আসলে কতটা নিরপেক্ষ হবে সে জায়গায় আমি সন্দিহান। ডোপ টেস্টে কারও সাথে যদি ষড়যন্ত্রমূলক আচরণ করা হয়, তাহলে প্রশাসন কি এটার দায় নিবে?’
ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘স্বল্প সময়ের নোটিশে ডোপ টেস্ট করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। হাতে সময় খুবই কম, নির্বাচনের আর দুই দিন বাকি। এটা নির্বাচন কমিশনের অদূরদর্শীতার নামান্তর। এমতাবস্থায় যদি কোনো প্রার্থীর নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদনে ভুল আসে তবে এই স্বল্প সময়ে যাচাই করার সুযোগ নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়।’
এ বিষয়ে জাবি চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. শামসুর রহমান বলেন, ‘জাকসু নির্বাচন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে আমরা সকল প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট করছি। এখানে আমরা ডিকোডিং পদ্ধতিতে কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদের প্রায় ৭৫০ প্রার্থীর তথ্য গ্রহণ করে নমুনা সংগ্রহ করেছি। আশা করছি,স্বচ্ছতার সাথে আগামীকালের মধ্যে আমরা ফলাফল প্রকাশ করতে পারব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সোহেল আহমেদ বলেন, ‘জাকসু নির্বাচনের আচরণবিধিতে রয়েছে, কোনো প্রার্থী যদি মাদকাসক্ত হয় এবং তার বিরুদ্ধে কেউ যদি অভিযোগ করে তখন ওই প্রার্থীরডোপটেস্ট করা হবে এবং ফলাফলের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। গত ১০-১২ দিন আগে আমাদের একজন শিক্ষার্থী, যে নিজেই একজন প্রার্থী, সে সকল প্রার্থীর ডোপ টেস্টের দাবিতে অনশনে বসে। তখন আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন ওই শিক্ষার্থীকে আশ্বাস দেই যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অংশীজনের সাথে কথা বলে তারা যদি এ বিষয়ে একমত হয়, তাহলে আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব। পরবর্তীতে সকলেই এই বিষয়ে একমত হওয়ায় ডোপ টেস্টের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে, প্রার্থীরা আসছে এবং তারা স্যাম্পল সরবরাহ করছে। এই প্রক্রিয়ায় স্যাম্পল সরবরাহের ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে ডিটেক্ট হয়ে যায়। এখানে আমরা একদম ব্লাইন্ডলি কাজ করছি। নমুনা গুলোকে কোডিং করা হচ্ছে। রেজাল্ট প্রস্তুত হলে এখান থেকে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হবে। এরপর সেখানে ডিকোডেড হলে বোঝা যাবে কার রেজাল্ট কি এসেছে। আমরা আশা করছি রাত ১০টার মধ্যেই নির্বাচন কমিশনে আমরা লিখিতভাবে জমা দিতে পারব।’