ঠোঁট ফাটা বা ঠোঁটে ঘা অবহেলা করা মোটেই ঠিক নয়
আমাদের মুখমণ্ডলের অন্যতম সংবেদনশীল অঙ্গ হলো ঠোঁট। এটি শুধু কথা বলা কিংবা খাবার গ্রহণের মাধ্যম নয়, সৌন্দর্যেরও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তবে অনেকেই ঠোঁটের যত্ন নিতে চান না, বিশেষ করে যখন ঠোঁট ফাটে বা ঘা দেখা দেয়। ভাবেন, এটি এমনিতেই সেরে যাবে। কিন্তু বাস্তবে ঠোঁট ফাটা বা ঠোঁটে ঘা সাধারণ সমস্যা হলেও তা উপেক্ষা করলে জটিল আকার ধারণ করতে পারে। এটি শুধু চর্ম সমস্যা নয়; কখনও কখনও তা শরীরের অভ্যন্তরীণ রোগ, পুষ্টিহীনতা কিংবা সংক্রমণের পূর্বলক্ষণ হিসেবেও দেখা দিতে পারে। ঠোঁটের এ সমস্যাটি শুধু শারীরিক অস্বস্তিই তৈরি করে না, মানসিক ও সামাজিক বিরূপ প্রভাবও ফেলতে পারে। অনেক সময় আত্মবিশ্বাসে প্রভাব ফেলে, কাজের পরিবেশেও অস্বস্তি তৈরি করে।
ঠোঁট ফাটার লক্ষণ : ঠোঁট ফাটা বা চেইলাইটিসের (ঈযবরষরঃরং) বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে। এগুলো শুরুতে মৃদু মনে হলেও ক্রমে তীব্র হতে পারে। যেমন- ঠোঁটে লালচে ফোলাভাব বা প্রদাহ, চামড়ার ওপর খোস ওঠা বা পুরু আবরণ জমে যাওয়া, ফাটল বা চিরে যাওয়া, অনেক সময় রক্ত পড়া, ব্যথা, জ্বালাপোড়া, চুলকানি, ঠোঁটের কোণে ঘা হওয়া, ঠোঁট শুকিয়ে শক্ত হওয়া, কথা বললে বা মুখ খুললে ফাটল থেকে ব্যথা হওয়া ইত্যাদি।
ঠোঁট ফাটার কারণ : ঠোঁট ফাটা একাধিক কারণে হতে পারে এবং কারণগুলো সাধারণত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- পরিবেশগত, অভ্যাসগত ও চিকিৎসাগত।
পরিবেশগত কারণ : শুষ্ক বা ঠান্ডা আবহাওয়া, বিশেষ করে শীতকালে। তীব্র রোদে দীর্ঘ সময় অবস্থান করা। বাতাসে ধুলাবালি ও দূষণ। ঘরের ভেতরে অতিরিক্ত শুষ্ক বাতাস (এসি বা হিটার ব্যবহারের কারণে)।
আরও পড়ুন:
শীতে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন
অভ্যাসগত কারণ : জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট বারবার চাটা (অনেকে না বুঝে এ কাজটি করেন)। দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ানো। ঠোঁট চাটার ফলে লালার অ্যাসিড ঠোঁটে থেকে গিয়ে চামড়া আরও শুষ্ক করে তোলে। পানির কম পান। ধূমপান বা তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণ। ঠোঁটে মানানসই নয়- এমন প্রসাধনী ব্যবহার করা।
চিকিৎসাগত বা শারীরিক কারণ : পুষ্টির ঘাটতি, বিশেষ করে ভিটামিন বি২ (রাইবোফ্লাভিন), বি১২, আয়রন ও জিঙ্কের ঘাটতি। ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ (বিশেষ করে ক্যান্ডিডা)। ত্বকের অন্যান্য রোগ, যেমন- একজিমা (অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস), সোরিয়াসিস, পায়োরিয়া (মাড়িরোগ), অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া, কেমোথেরাপি বা রেটিনয়েড জাতীয় ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
চিকিৎসা : অ্যান্টিফাঙ্গাল মলম (যদি ছত্রাক সংক্রমণ থাকে), ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ বা সেবন, টাক্রোলিমাস, পাইমেক্রোলিমাস বা হালকা স্টেরয়েড মলম প্রয়োগ, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, আয়রন ও জিঙ্ক সাপ্লিমেন্ট খেতে হবে। প্রয়োজনে ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী লেজার থেরাপি নিতে হবে।
আরও পড়ুন:
জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণগুলো জেনে রাখুন
পরামর্শ : সঠিক চিকিৎসার জন্য প্রথমেই রোগের মূল কারণ চিহ্নিত করা জরুরি। কারণভেদে চিকিৎসা ভিন্ন হতে পারে। এক্ষেত্রে অলিভ অয়েল, নারকেল তেল, গ্লিসারিন, ঘি বা মধু ঠোঁটে নিয়মিত লাগাবেন। পেট্রোলিয়াম জেলি প্রয়োগ করে ঠোঁট আর্দ্র রাখুন। ঠোঁট চাটা ও কামড়ানো বন্ধ করুন। পানির পানের পরিমাণ বাড়িয়ে দিন। ঠোঁট পরিষ্কার ও ময়েশ্চারাইজ রাখুন। ঠোঁট ফাটা যদি দীর্ঘদিন থেকে যায় বা সংক্রমণ হয়, চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। এটি ডায়াবেটিসের উপসর্গও হতে পারে। শিশু ও বয়স্কদের ঠোঁট ফাটাকেও বিশেষ গুরুত্ব দিন।
লেখক : চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ এবং সিনিয়র কনসালট্যান্ট
চেম্বার : আলোক হেলথকেয়ার, মিরপুর-১০, ঢাকা। হটলাইন : ১০৬৭২
আরও পড়ুন:
শীতে মুলা কেন খাবেন?