জীবনের গতি ধীরে ধীরে থামিয়ে দেয় যে নীরব ঘাতক রোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
জীবনের গতি ধীরে ধীরে থামিয়ে দেয় যে নীরব ঘাতক রোগ

উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন মারাত্মক এক রোগ। অনেক সময় রোগটিকে আমরা পাত্তা দিতে চাই না। ফলে কারও কারও জীবনের জন্য ডেকে আনে মারাত্মক বিপদ। অনেক সময় দেখা যায়, উচ্চ রক্তচাপের রোগী নিয়মিত ওষুধ খান না। কেউ কয়েকদিন খাওয়ার পর ছেড়ে দেন। এই অবহেলা রোগটিকে আরও মারাত্মক করে তোলে।

২০২৪ সালে ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব কার্ডিওলজি (ESC) রক্তচাপকে তিন ভাগে ভাগ করেছে। প্রথম ভাগ হলো- স্বাভাবিক রক্তচাপ, যার পরিমাণ ১২০/৭০ mmHg বা তার নিচে। দ্বিতীয় ভাগ হলোÑ রক্তচাপ ১২০/৭০ থেকে ১৪০/৯০ mmHg-এর মধ্যে থাকে এবং তৃতীয় ভাগ হলো- রক্তচাপ ১৪০/৯০ mmHg-এর বেশি হয়। এ তিন স্তর রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।

উচ্চ রক্তচাপের কারণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ফ্যাক্টর : সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, খাদ্যে অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ। আধুনিক জীবনযাত্রায় লবণের অতিরিক্ত ব্যবহার স্বাস্থ্যর জন্য বড় হুমকি। ধুমপান ও মদ্যপান রক্তচাপ বাড়ায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তাও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। রক্তচাপ বাড়িয়ে তোলে। শারীরিক অনুপ্রেরণার অভাবও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বিঘœ ঘটায়। শরীরে চর্বির পরিমাণ বেশি হলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেশি থাকে। এছাড়া পরিবারের মধ্যে কারও যদি উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তাহলে ওই পরিবারের অন্য সদস্যরাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণ করাও হৃদযন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর এবং রক্তচাপ বাড়ায়।

লক্ষণ ও তার গুরুত্ব : উচ্চ রক্তচাপের বড় সমস্যা হলো, এটি প্রায়ই লক্ষণহীন থাকে। তাই বলা হয় নীরব ঘাতক। তবে কখনও কখনও রোগীরা কিছু লক্ষণ অনুভব করতে পারেন। যেমনÑ মাথা ঘোরানো, ক্লান্তি, বুকে ব্যথা বা ধড়ফড় করা, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন ইত্যাদি। এ লক্ষণগুলো কখনও ছোট করে দেখা উচিত নয়। কারণ এগুলো হৃদরোগ বা স্ট্রোকের আগাম সতর্ক সংকেত হতে পারে।

মারাত্মক জটিলতা : উচ্চ রক্তচাপ দীর্ঘমেয়াদে মস্তিষ্ক, হৃদয় ও কিডনির ক্ষতি করে। এতে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে বাধা সৃষ্টি হয়। ফলে ব্রেইন স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। হার্টের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে হার্ট অ্যাটাক ও হার্ট ফেইলিউর হতে পারে। কিডনির রক্তপ্রবাহ কমে গেলে ক্রনিক কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ে।

নিয়ন্ত্রণের উপায় : এক্ষেত্রে কিছু সহজ ও কার্যকর নিয়ম মেনে চলা উচিত। প্রথমত, খাদ্যে তাজা ও প্রাকৃতিক খাবার গ্রহণ করা জরুরি। বিশেষ করে বেশি লবণ, তেল ও চর্বিজাতীয় খাবার পরিহার করা ভালো। নিয়মিত হাঁটা, দৌড়ানো বা ব্যায়াম করা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ ও জীবনযাপন করতে হবে। ধুমপান ও মদ্যপান পরিহার করা উচিত।

সচেতনতা ও দায়িত্ব : বিশ্বজুড়ে উচ্চ রক্তচাপের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। আমরা সবাইকে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বুঝতে হবে এবং নিয়মিত রক্তচাপ পরিমাপ ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হবে। আসুন, নিজের এবং পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে আজ থেকেই স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গ্রহণ করি এবং উচ্চ রক্তচাপ পরাভূত করি।

লেখক : হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, মেডিসিন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ

চেম্বার : আলোক হাসপাতাল, মিরপুর-৬, ঢাকা

হটলাইন : ১০৬৭২, ০৯৬৭৮৮২২৮২২