অপরিণত নবজাতকের বিশেষ চিকিৎসা
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে । কমে আসছে মৃত্যুহার। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুহার কমানোর গৌরবও বাংলাদেশ ইতোমধ্যে অর্জন করেছে। কিন্তু নবজাতকের মৃত্যুহার (০-২৮ দিন) এখনও আশানুরূপ কমেনি। যেসব কারণে নবজাতক শিশু মারা যায়, তাদের মধ্যে অন্যতম কারণ হলো, সময়ের আগেই জন্ম নেওয়া এবং এ সম্পর্কিত জটিলতা। এক গবেষণার তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের যে কয়টি দেশে সময়ের আগে নবজাতক জন্মের (৩৭ সপ্তাহ গর্ভকাল পূর্ণ হওয়ার আগে) হার বেশি, বাংলাদেশ তার মধ্যে শীর্ষস্থানীয়। আমাদের দেশে শতকরা ১৬ ভাগ নবজাতকই ৩৭ সপ্তাহের আগে জন্মগ্রহণ করে।
জটিলতা : অপরিণত নবজাতকের নানাবিধ জটিলতা দেখা দিতে পারে। যেমন- শ্বাসকষ্ট, জন্ডিস (হলুদ হয়ে যাওয়া), শ্বাস বন্ধ করে ফেলা, পেট ফুলে যাওয়া, খিচুনি ইত্যাদি। এসব জটিলতার সঠিক চিকিৎসা ও বিশেষ যত্ন প্রয়োজন। এ ধরনের বিশেষ নবজাতকের ডেলিভারি হাসপাতালে হওয়া জরুরি। পাশাপাশি যেসব হাসপাতালে নবজাতক আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) রয়েছে, দ্রুত সেখানে রেফার তথা স্থানান্তর করতে হবে।
কারণ : বিভিন্ন কারণে সময়ের আগেই নবজাতক জন্ম নিতে পারে। যেমন- মায়ের অপুষ্টি, ঘন ঘন সন্তান প্রসব, মায়ের অসুস্থতা (উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, জীবাণু সংক্রমণ) ইত্যাদি। এছাড়াও জমজ শিশু জন্ম নেওয়া, গর্ভকালীন অবস্থায় শিশুর জটিলতা- এসব কারণেও সময়ের আগেই নবজাতকের জন্ম হতে পারে।
চিকিৎসা : অপরিণত নবজাতক কম ওজনে জন্মানোয় তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয়ে যায়। এজন্য গরম রাখার মেশিনে রাখতে হয়। জন্মের পর শ্বাসকষ্ট হতে পারে। তাই কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের মেশিন, যেমন- ঈচঅচ (সিপ্যাপ), ভেন্টিলেটর, দীর্ঘদিন অক্সিজেনের প্রয়োজন হতে পারে। জন্ডিসের জন্য ফটোথেরাপি মেশিন লাগতে পারে। যেহেতু নিজেরা বুকের দুধ টেনে খেতে পারে না, তাই নাক ও মুখে নল দিয়ে দুধ খাওয়াতে হয়। এছাড়া ২হাজার ৫০০ গ্রামের কম জন্ম-ওজন থাকলে তাদের ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার সেবা দেওয়া হয়। ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার একটি সহজ পদ্ধতি। এখানে কম ওজনের নবজাতককে মায়ের দুই স্তনের মাঝে রাখা হয়। এতে শিশুটির শরীরের তাপমাত্রা বজায় থাকে, শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়মিত থাকে, ঘন ঘন মায়ের বুকের দুধ খেতে পারে, ওজন বৃদ্ধি পায়। হাসপাতাল থেকে দ্রুত ছুটিও দেওয়া যায়।
আরও পড়ুন:
চোখের রক্তবর্ণ ধারণের কারণ ও প্রতিকার
পরামর্শ : অপরিণত নবজাতক দীর্ঘদিন চিকিৎসার কারণে দীর্ঘমেয়াদি কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। এজন্য তাদের চোখ (জবঃরহড়ঢ়ধঃযু ড়ভ চৎবসধঃঁৎরঃু), কান (ঐবধৎরহম), থাইরয়েড স্ক্রিনিং করতে হবে, যা বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোয় হয়ে থাকে।
সর্বোপরি, অপরিণত নবজাতকের বিভিন্ন জটিলতা কমানো ও মৃত্যুহার কমাতে গর্ভবতী মায়ের নিয়মিত চেকআপ, হাসপাতালে ডেলিভারি ও বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর কোনো বিকল্প নেই।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক ও প্রধান, নবজাতক বিভাগ
আরও পড়ুন:
জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণগুলো জেনে রাখুন
ডা. এমআর খান শিশু হাসপাতাল অ্যান্ড
ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ, মিরপুর-ঢাকা
চেম্বার : আলোক মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার, মিরপুর-৬, ঢাকা
আরও পড়ুন:
শীতের রোগ-বালাইয়ের ব্যাপারে সচেতন হোন
হটলইন : ১০৬৭২, ০৯৬১০১০০৯৯৯