শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলা, যা বললেন বাকৃবি উপাচার্য
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) টানা এক মাস যাবৎ কম্বাইন্ড (বিএসসি ইন ভেট ও এএইচ) ডিগ্রির দাবিতে আন্দোলন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন ও ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে গতকাল রবিবার রাতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় বহিরাগতরা। এতে শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ অন্তত ১০ জন আহত হন।
আজ সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান এই পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা আড়াই শতাধিক শিক্ষক আন্তরিকতার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সকল দাবি মেনে নিয়েছি। শতভাগ দাবি মেনে নেওয়ার পরও কেন তারা শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করলো, সেটি আমার প্রশ্ন। টানা ৮ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর শিক্ষকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পরে কিছু শিক্ষক, কর্মকর্তা ও নিরাপত্তারক্ষীরা গেট ভেঙে শিক্ষকদের বের করতে সাহায্য করেন।’
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের হামলার বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা দাবি করছে যে, শিক্ষকরা বহিরাগতদের দিয়ে তাদের ওপর হামলা করিয়েছেন—এটি সম্পূর্ণ ভুল কথা। আমরা বাইরের কাউকে ক্যাম্পাসে আসতে বলিনি, আমরা কেন বলব? শিক্ষার্থীরা আমাদের ছেলে-মেয়ের মতো।’
ক্যাম্পাস ও হল বন্ধের বিষয়ে অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ভাঙচুর চালানো হয়েছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় ও হল বন্ধ করে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে। তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’
পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে অবশ্যই একটি কমিটি করা হবে বলেও জানান তিনি।
উপাচার্যের ক্ষমা চাওয়ার দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি কেন ক্ষমা চাইব? আমি তো কোনো অন্যায় করিনি।’
এর আগে শিক্ষার্থীরা একাডেমিক কাউন্সিলের দাবিতে গত বুধবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে সড়ক অবরোধ করে রাতভর সড়কে অবস্থান করেন। এরপর শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে গত রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন অডিটরিয়ামে একাডেমিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন:
ইবির ইসলামের ইতিহাস বিভাগে তালা!
সভা শেষে ঘোষণা দেওয়া হয়, আগামী সেশন থেকে কম্বাইন্ড কোর্সে ১৫০ জন, ভেটেরিনারিতে ৫০ জন এবং পশুপালনে ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হবে। ইতোমধ্যে যারা ভর্তি হয়েছেন, তাদের জন্য অপশন থাকবে তারা চাইলে ভেটেরিনারি, পশুপালন বা কম্বাইন্ড যেকোনো একটি ডিগ্রি নিতে পারবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী দুই অনুষদ একীভূত করা সম্ভব নয়। তবে দুই অনুষদ মিলিতভাবে কম্বাইন্ড ডিগ্রি প্রদান করবে এবং পালাক্রমে দুই অনুষদ থেকেই ডিন নির্বাচিত হবেন।
একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত ফলপ্রসূ না হওয়ায় সভায় উপস্থিত উপাচার্যসহ সব শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় প্রায় ৮ ঘণ্টা যাবৎ ২২৭ জন শিক্ষক অবরুদ্ধ থাকেন। এরপর গতকাল রবিবার রাত ৭টা ৪৫ মিনিটের দিকে বহিরাগতরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় অবরুদ্ধ শিক্ষকরা গেটের তালা ভেঙে বাইরে বের হয়ে আসেন। বহিরাগতদের এই হামলায় শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। এরপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।