শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলা, বাকৃবি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক অবরুদ্ধ শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের উদ্ধারে অস্ত্রশস্ত্রসহ বহিরাগতদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। তাৎক্ষণিক আহত শিক্ষার্থীদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
আজ রবিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে অনলাইনে জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের আগামীকাল সোমবার সকাল ৯টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে একইদিন রাত ৭টা ৪৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনের সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় ক্লাস পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করার ঘোষনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি।
জানা যায়, কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে পশুপালন ও ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছিলেন। আন্দোলন চলাকালে সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটের দিকে লাঠিসোটা হাতে বহিরাগত দুর্বৃত্তরা নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীরা মিলনায়তনের তালা খুলে ভেতরে ৮ ঘন্টা যাবৎ আটকে থাকা শিক্ষকদের বের করে আনে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যা থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ মোড় এলাকায় ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনের আশপাশে অবস্থান করতে দেখা যায়। পরে তারাই শিক্ষার্থীদের ওপর এ হামলা চালায়।
আন্দোলনকারীরা জানান, শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির আন্দোলন দমাতে আজ সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও কিছু শিক্ষকের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে আনা হয়। তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় এবং নারী শিক্ষার্থীরাও এ হামলার শিকার হন।
এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘হঠাৎ দেখি ভিসি বাসভবনের দিক থেকে অনেক লোক আসছে এবং অডিটোরিয়ামের ডান পাশ থেকে চিৎকার শুরু হয়। পরে বহিরাগতরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ করে এবং মারধর চালায়। আশ্রয়ের জন্য আমরা লাইব্রেরিতে অবস্থান নেই। কিন্তু ওই সময় যারা আক্রমণ করছিল তারা সবাই ছাত্রদলকর্মী ও টোকাই ছিল। তারা লাইব্রেরিতে ভাঙচুরও চালায়।’
আরও পড়ুন:
ইরাকের উত্তরাঞ্চলে তুরস্কের অতর্কিত হামলা
এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় রাত ৯টায় দিকে বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস ও উপাচার্যের বাসভবনে ভাঙচুর চালায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘অন্যান্য অনুষদের শিক্ষার্থীরা আমাদেরকে তালা ভেঙে বের করেছে। বহিরাগতরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে কি না সেটি আমরা জানি না। শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার পরেও তারা আমাদেরকে আটক করে রাখলো। শিক্ষক সমিতির সদস্যরা জরুরি মিটিং করেছি। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, এই আটক করে রাখার ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষা-কার্যক্রমে আমরা অংশগ্রহণ করব না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. আবদুল আলীম বলেন, ‘আমি সবচেয়ে পরে বের হয়েছি। বের হয়ে দেখলাম যে কয়েকজন লোক লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। তারা বহিরাগত ছিলেন নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সেটি আমি বুঝতে পারিনি কারণ তখন রাত হয়ে গিয়েছিলো।’
আরও পড়ুন:
ইবির ইসলামের ইতিহাস বিভাগে তালা!
উল্লেখ্য, আজ রবিবার কম্বাইন্ড ডিগ্রি বাস্তবায়নে আয়োজিত একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত ফলপ্রসূ না হওয়ায় সভায় উপস্থিত উপাচার্যসহ সব শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে তালা ঝুলিয়ে দেয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশুপালন ও ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় ২২৭ জন শিক্ষক অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।