সানস্ক্রিন ব্যবহারে অনীহা কেন?

লাইফস্টাইল ডেস্ক
৩১ আগস্ট ২০২৫, ১২:৩৬
শেয়ার :
সানস্ক্রিন ব্যবহারে অনীহা কেন?

রোদের কারণে বাংলাদেশে বছরজুড়ে প্রায় সবাই নানারকম বিড়ম্বনার শিকার হন। তীব্র রোদের কারণে পানিশূন্যতা, ত্বক পুড়ে যাওয়া, ত্বকে খসখসে ভাব, ত্বক কুঁচকে যাওয়া সহ নানা সমস্যা তৈরি হয়। আমাদের আশেপাশের অনেকেই এর ভুক্তভোগী। তবে এরপরেও রোদের থেকে ত্বক বাঁচাতে এখনো বেশিরভাগ মানুষ ভরসা করেন ছাতা কিংবা ছায়ার ওপর। পশ্চিমে তো বটেই, পাশের দেশ ভারতসহ নানান দেশেই অনেক মানুষ সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন এবং গরমের দিনে এটি সেসব জায়গার মানুষের একটি অত্যাবশ্যকীয় অনুষঙ্গ। তবে বাংলাদেশে এর চিত্রটি এখনো বিপরীত।

এর কারণ জানতে চাইলে ঢাকার একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত সামিয়া জামান জানান, বাংলাদেশের মানুষের ত্বকের ওপর রোদের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জানার ঘাটতি রয়েছে। বাংলাদেশে সারা বছরই রোদ পড়ার কারণে অনেকেই মনে করেন প্রাকৃতিকভাবে এখানে কোন দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হবার সম্ভাবনা নেই। তবে অনেকেই তীব্র রোদের কারণে নানা ত্বকের সমস্যাতে ভোগেন। তবে এখানে মূল সমস্যা হিসেবে কাজ করে সানস্ক্রিনের দাম। কারণ বাজারে মানসম্মত সানস্ক্রি সরবরাহ যেমন পর্যাপ্ত নয়, তেমনি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দামটাও চড়া। অনেকের পক্ষেই নিয়মিত বিদেশী ব্র্যান্ডের সানস্ক্রিন ব্যবহার করা সম্ভব হয় না।

ঢাকার বিভিন্ন বিপণিবিতান এবং কসমেটিকসের জন্য জনপ্রিয় কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ঘুরে দেখা যায়- ৫০ থেকে ৮০ গ্রামের এক একটি সানস্ক্রিন বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকায়। যেহেতু সানস্ক্রিন একটি নিত্যব্যবহার্য পণ্য, প্রতিদিন বাইরে বের হবার আগেই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন, কাজেই সেই হিসাবে নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার আসলেও খরুচে ব্যাপার অনেকের জন্য।

এ ব্যাপারে রাজধানীর একটি বিপণিবিতাদের একজন বিক্রয়কর্মী জানান, মুলত বাংলাদেশে পাওয়া যায় এমন মানসম্মত সানস্ক্রিন সবই বিদেশ থেকে আমদানী করা হয়। ফলে আমদানী সংক্রান্ত নানা শুল্ক এবং অন্যান্য খরচ যুক্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত সব সানস্ক্রিনের দামই অনেক বেড়ে যায়। এছাড়া দেশীয় প্রতিষ্ঠানের তৈরি উৎপাদিত মানসম্মত সানস্ক্রিনের অভাবের কথাও ঐ বিক্রয়কর্মী উল্লেখ করেন।

তবে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দোকানগুলোতে বিভিন্ন মোড়কে ভিন্ন ভিন্ন নামে সানস্ক্রিন পাওয়া যায় কম দামে।

ক্রেতারা জানান, এসব নন-ব্র্যান্ড সানস্ক্রিন স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত। অনেক ক্ষেত্রে এগুলোর লাইসেন্সও থাকে না। মান নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। 

ফলে ক্রেতাদের মধ্যে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এসব পণ্যের তেমন একটা চাহিদা নেই।

অন্য এক দোকানি জানান, আগের চেয়ে ক্রেতাদের মধ্যে এখন ত্বকের যত্ন নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে। অনেকেই সানস্ক্রিন খোঁজ করেন। পূর্বের তুলোনায় বিক্রির পরিমাণও বেড়েছে। তবে বাজারে প্রচলিত বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর সানস্ক্রিনের দাম বেশিরভাগ ক্রেতার নাগালের বাইরে।

ঐতিহাসিকভাবে রোদ থেকে বাঁচতে আমাদের দেশের কৃষকেরা মাথাল পরতেন। পরবর্তীতে ছাতার ব্যবহার বেড়েছে। বিশেষ করে ঢাকা শহরে এখন অনেককেই ছাতা ব্যবহার করতে দেখা যায়। তবে দৈনন্দিন কাজে বের হওয়া অনেকের পক্ষেই ছাতা ব্যবহার করা সুবিধাজনক নয়। তাছাড়া বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং অন্যান্য পরিবেশগত কারণে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা বাড়ছে। একইভাবে রোদের তীব্রতা এবং অতিবেগুনি রশ্মির পরিমাণও বেড়েছে। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের মধ্যে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ফলে সৃষ্ট সমস্যা নিয়ে সচেতনতা জরুরী। সেই সঙ্গে ত্বকের সুরক্ষায় ব্যবহার্য পণ্যের সহজলভ্যতা এবং সুলভ মূল্যের ব্যবস্থা সময়ের দাবি।