টিনএজ সন্তানকে ভালো রাখতে যা করবেন

লাবণ্য লিপি
২৪ আগস্ট ২০২৫, ১০:১৭
শেয়ার :
টিনএজ সন্তানকে ভালো রাখতে যা করবেন

টিনএজ সন্তানের মর্জি বোঝা খুব মুশকিল। এই বয়সে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন হয়। আর এর সঙ্গে থাকে নানা রকম সমস্যা। শিশুদের কাউন্সেলিং করেন সামিয়া আলম। তিনি বলেন, ‘আসলে সময় এখন বদলে গেছে। আমরা যেভাবে বড় হয়েছি, এখনকার শিশু- কিশোররা তেমনভাবে বড় হয় না। হাতের নাগালে এখন বিশ্ব। প্রযুক্তি এখন পৃথিবীটাকে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। ওরা অনেক কিছু জানে, যা কখনো কখনো বড়রাও জানে না। তাই খুব সতর্কতার সঙ্গে বয়ঃসন্ধির বাচ্চাদের হ্যান্ডেল করতে হয়।’

সামিয়া আলম বলেন, ‘বয়সটাই এমন যে, ওরা অনেক বেশি সংবেদনশীল। তাই এখন বদলে গেছে পেরেন্টিংও। টিনএজ বাচ্চাদের একটা বড় সমস্যা এ সময়ে ওরা খুব জেদি ও রাগি হয়। মা-বাবার কথা কিছুতেই শুনতে চায় না। এ সময়ে ওরা মা-বাবাকে মনে করে শত্রু। তারা যাই বলে, সেটাকেই ওরা ভাবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ কথাও অস্বীকার করার উপায় নেই যে, নাগরিক জীবনে ব্যস্ততার কারণে মা-বাবাও সন্তানদের সময় দিতে পারেন না। ফলে ওরা অনেকটা সময় একা কাটায়। এতে মা-বাবার সঙ্গে ওদের দূরত্ব বাড়ে। আর একা থাকতে থাকতে ওরা অনেকটাই নিজেকে গুটিয়ে নেয়।এ ছাড়া বয়ঃসন্ধির সময়টায় ওদের শারীরিক পরিবর্তন যেমন হয়, তেমনি মানসিক পরিবর্তনও হয়। আর এই পরিবর্তনের জন্যই ওদের আচরণেও পরিবর্তন আসে। এ সময় ওরা বড় হতে শুরু করে। হয়ে ওঠে কৌতুহলী। সব কিছুর প্রতি ওরা কৌতূহল বোধ করে। কিন্তু সেটা কারও সঙ্গে শেয়ার করতে পারে না। ফলে ওরা আরও বেশি গুটিয়ে নেয় নিজেকে। তাই এ সময়ে মা-বাবাকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে চলতে হয়।’

সবার আগে দরকার টিনএজ শিশুর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা। মা-বাবা নয়, শিশুর সঙ্গে কথা বলুন বন্ধু হয়ে। যেন সে তার গোপন কথাটাও অন্য কারও সঙ্গে না, আপনাদের সঙ্গেই শেয়ার করে। এই বয়সী বাচ্চারা খুব বেশি অভিমানী হয়। কারণ সে মনে করে, তাকে কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না। তাই কথা বলার আগে তার মনে এই আস্থা অর্জন করেন যে আপনারা ওকে গুরুত্ব দিচ্ছেন, ওর কথা খুব মন দিয়ে শুনছেন। 

আপনার সন্তানকে অন্য কারও সঙ্গে তুলনা করতে যাবেন না। কারণ প্রত্যেকেই আলাদা। আপনার সন্তান অন্য কারও মতো কেন হবে! সে হবে তার নিজের মতো। শুধু খেয়াল রাখুন আপনার সন্তান যেন ভুল পথে পা না বাড়ায়। কারণ এ বয়সটা ভুল করার বয়স। তাই বলে সবসময় শাসন এবং নজরদারিতে রাখলে হিতে বিপরীত হতে পারে। ওকে ভালো- মন্দের পার্থক্য বুঝান। তবে সেটা বন্ধু হয়ে। তাই বলে একদমই শাসন করবেন না, সেটা কিন্তু না। সে যা আবদার করবে সবটাই রাখা সম্ভব না। এটা তাকে বুঝিয়ে বলুন। ওর ভালোর জন্যই যে কাজটা করা ঠিক না, এটা বুঝানোও মা-বাবার দায়িত্ব। 

শুধু বুঝানোর ধরণটা পাল্টাতে হবে। ও হয়তো বলবে আমাকে দামি ফোন, দামি পোশাক- জুতা কিনে দাও। আমার বন্ধুদের এসব আছে। তখন তাকে বুঝাতে হবে, সবার সামর্থ্য এক রকম নয়। যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী লাইফ স্টাইল সেট করতে হয়। এ সময় বাচ্চারা বন্ধুদের সঙ্গে বেশি মিশতে চাইবে। মিশতে দিন। তবে কার সঙ্গে মেশে সেটা খেয়াল রাখতে হবে।

সে যেখানেই যেতে চাইবে, সব জায়গায় যাওয়ার অনুমতি দেওয়া যাবে না। তাই বলে একেবারেই কোথাও যেতে না দেওয়াও ঠিক না! মাঝে মাঝে প্রয়োজন অনুযায়ী যেতে দিতে হবে।তবে অবশ্যই কেয়াল রাখতে হবে কার সঙ্গে মিশছে। 

মাঝে মাঝে বাচ্চাকে নিয়ে বেড়াতে যান। বেড়ানোর সময় যখন ওর মুড ভালো থাকবে, তখন সুযোগ বুঝে প্রসঙ্গ তুলে ওর সঙ্গে শারীরিক বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলুন। মনে রাখবেন, সঠিক শিক্ষাটা ও যেন মা-বাবার কাছ থেকেই পায়। মূল্যবোধের শিক্ষাটাও দিন। ভালো-মন্দ বোঝাটা খুব দরকার। কখনই শিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে যাবেন না। বরং বন্ধু হয়ে বুঝিয়ে বলুন। এটা অনেক বেশি কাজে দেয়।

এ সময় অনেক বাচ্চা লেখাপড়ার কথা বললে খুব রেগে যায়। তাই সবসময় পড়তে বসো না বলে কথাচ্ছলে বলুন লেখাপড়া না করলে সে ভালো মানুষ হতে পারবে না, ওর ভালো ক্যারিয়ার হবে না। এ বয়স থেকেই ওকে দায়িত্ব নিতে শেখান। সংসারের কিছু কাজ ওকেও করতে দিন। ভুলভাল হলে বুঝিয়ে বলুন। বকাঝকা করলে পরে আর সে কোনো কাজই করতে চাইবে না। বরং প্রশংসা করুন। মনে রাখবেন, আপনার প্রশংসা ওকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।