ওজন কমাতে যা খাবেন
আজকাল অনেকেরই স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে অতি ওজন। সুস্থ থাকতে ওজন অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। অনেকে ওজন কমাতে না খেয়ে থাকেন, এটাও স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ক্ষুধায় কষ্ট পেলে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। তাই খেতে হবে নিয়ম মেনে এবং পুষ্টিকর খাবার। সকাল কিংবা রাত কোনো বেলারই মিল বাদ দেওয়া যাবে না। বরং ছোট ছোট মিল সারাদিনে ভাগ করে নিলে বেশি খিদেও লাগবে না এবং ডায়েট করাও সহজ হবে। তাই ওজন কমাতে কী কী খাবার খাবেন তা নিয়ে লিখেছেন নিশাত তানিয়া
ওজন কমানোর জন্য ফলের রস না খেয়ে গোটা ফল খাওয়ার পরামর্শ দিলেন সাজেদা ফাউন্ডেশনের পুষ্টিবিদ ইসরাত জাহান। ঠিক একইভাবে নরমাল পানি পান না করে ডিটক্স পানি পান করলে উপকার পাওয়ার কথা বলেন তিনি। এ ছাড়া ওজন কমানোর জন্য বিশেষভাবে কয়েকটি বিষয় বিবেচনার উপদেশ দিলেন ইসরাত। যেমন- শরীরের অবস্থা অনুযায়ী ব্যালেন্স ডায়েট করা। সঠিক সময় খাবার খাওয়া। পরিমাণ বুঝে খাওয়া এবং প্রতিদিন শারীরিক পরিশ্রম করা।
কী কী খাবেন তার আগেই খাদ্যতালিকা থেকে অপ্রয়োজনীয় উচ্চ ক্যালরি বাদ দিন। যেমন ফাস্টফুড, ভাজাপোড়া, কেক, পেস্ট্রি, চকোলেট, আইসক্রিম, কোমল পানীয়। এগুলো শরীরের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। এবার নিজের খাদ্যতালিকায় যোগ করুন সব পুষ্টিকর খাবার।
আমিষজাতীয় খাবার
কেউ কেউ ভাবেন মাংস খেলে বুঝি ওজন বাড়ে। এটা ভুল ধারণা। ওজন বাড়ে চর্বি খেলে। তাই চর্বি ছাড়া মাংস খেতেই পারেন।
সারাদিনে এক টুকরো মাছ কিংবা মাংস, ২১০-২২০ মিলিলিটার দুধ আর এক কাপ মাঝারি ঘনত্বের ডাল খেলে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের রোজকার আমিষের চাহিদা পূরণ হয়। তবে মাছ-মাংসের সঙ্গে খ- চর্বি থাকলে সেটি কেটে বাদ দিতে হবে। মাছের তেল বা পিঠের চামড়া খেলে ক্ষতি নেই। এতে আরও উপকার পাবেন।
নানারকমের স্যুপ
সবজি বা মুরগি দিয়ে বানাতে পারেন নানারকম স্যুপ। খেতে বসে প্রথমেই একবাটি স্যুপ খেয়ে নিলে তুলনামূলক অন্য খাবার কম খাওয়া হবে। কর্নফ্লাওয়ার ছাড়া ক্লিয়ার স্যুপ খাওয়ার চেষ্টা করুন। কারণ কর্নফ্লাওয়ারে শর্করার মাত্রা বেশি থাকে।
চিনাবাদামের পুষ্টি
আরও পড়ুন:
শীতে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন
দেশি চিনাবাদাম খেতে পারেন। তবে একদিনে ৮০-১০০ গ্রামের বেশি নয়। খোসা ছাড়ানোর পর যে লাল আবরণটা দেখা যায় চিনাবাদামের সেটি ফেলবেন না।
টক দইয়ের রেসিপি
ওজন কমাতে টক দই বেশ উপকারী। সালাদ তৈরিতে কাজে লাগাতে পারেন। এ ছাড়া ব্লেন্ড করে লাচ্ছি বানিয়ে নিতে পারেন।
শাক পাতার গুন-গুন
ওজন কমাতে বেছে নিন যে কোনো ধরনের শাক। প্রতিদিন পর্যাপ্ত শাক খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কেউ কেউ ভাবেন রাতের বেলা শাক খেতে হয় না। তবে এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
মাটির ওপরের জন্মানো সবজি
ওজন কমাতে সঙ্গে সুস্থ থাকতে নানারকম সবজি খেতে হবে রোজ। বিশেষ করে যেসব সবজির ভেতরটা সাদা, রোজকার তালিকায় সেগুলো রাখার চেষ্টা করুন। আলু, গাজর কিংবা মুলা খেলে ওজন বাড়বে। কাঁচা সবজির সালাদ খেতে পারলে খুবই ভালো। না পারলে
হালকা সেদ্ধ করে তাতে একটু চিকেন দিয়ে খেলে স্বাদ বৃদ্ধি পাবে। পানি জাতীয় সবজি যেমন ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, চালকুমড়া, লাউ কম ক্যালরি তাই ওজন কমাতে সাহায্য করে, বলছিলেন ইসরাত।
আরও পড়ুন:
জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণগুলো জেনে রাখুন
ফলের প্রকারভেদ
সারাদিনে নানারকমের ফল খেতে পারেন। তবে মিষ্টিজাতীয় ফল এড়িয়ে চলুন। টক এবং পানসে ফল তালিকায় রাখুন। নাশপাতি, আমড়া, টক বরই, বাঙ্গি, পেয়ারা এমন নানা ফলই খেতে পারেন নিশ্চিন্তে।
ওজন কমাতে কিছু প্রয়োজনীয় টিপস
হ কার্বোহাইড্রেট ও শর্করাজাতীয় খাবারের পরিমাণ কমিয়ে আনুন। যেমন- ভাত, রুটি, পরোটা, পাউরুটি। পরিবর্তে লাল আটা, ওটস, লাল চাল বেছে নিন।
হ রোজ অনন্ত তিনবেলার খাবার একটি নির্দিষ্ট সময়ে গ্রহণ করুন। প্রাতঃরাশ সকাল ৮টার মধ্যে, মধ্যাহ্নভোজ দুপুর ১২-২টার মধ্যে এবং নৈশভোজ সন্ধা ৬-৮টার মধ্যে।
হ প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে দূরে থাকুন। পর্যাপ্ত পানি এবং তরল খাবার গ্রহণ করুন।
হ চিনি বাদ দিতে হবে। একবারে বাদ দিতে না পারলে একটু একটু করে ছাড়ুন। বাজারের কেনা জুস খাওয়া যাবে না।
হ প্রতিদিন না পারেন সপ্তাহে অনন্ত ৪ দিন ৩০-৪০ মিনিট হাঁটুন। আর সেটি সকালে হলে তো আরও ভালো।
আরও পড়ুন:
শীতে মুলা কেন খাবেন?
হ নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করুন।
হ বিশেষজ্ঞ পরামর্শ ছাড়া অনলাইন থেকে কোনো ডায়েট করা থেকে বিরত থাকুন।
হ দিনে দুইবার গ্রিন টি পান করুন।
হ কোনো বেলাতেই খাবার পর পরই শুবেন না। খাবারটি হজম হওয়ার জন্য খাবার গ্রহণের কমপক্ষে আধা ঘণ্টা পর শুবেন।