যেসব কারণে চুল ঝরে পড়ে, এ সমস্যার আধুনিক সমাধান

ডা. লুবনা খন্দকার
২০ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
যেসব কারণে চুল ঝরে পড়ে, এ সমস্যার আধুনিক সমাধান

চুল পড়া সাধারণ ও জটিল সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে ইদানীং। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মাথায় গড়ে এক থেকে দেড় লাখ চুল থাকে। স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতিটি চুল তিন বছর পর্যন্ত টিকে থাকে। একে বলা হয় অ্যানাজেন পর্যায়, অর্থাৎ চুলের বৃদ্ধির ধাপ। তারপর চুল প্রবেশ করে টেলোজেন বা বিশ্রামের পর্যায়ে, যা সাধারণত তিন মাস স্থায়ী হয়। এরপর চুল পড়ে যায় এবং নতুন চুল গজাতে শুরু করে। এই প্রক্রিয়াটি একটি প্রাকৃতিক জীবনচক্র। প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০টি চুল পড়া খুব স্বাভাবিক। তবে অনেক কারণেই এই স্বাভাবিক চক্রে বিঘœ ঘটে। অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় চুল পড়ার হার। কিছু ক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ চুল একসঙ্গে বিশ্রামের পর্যায়ে চলে যায়। ফলে কয়েক মাসের মধ্যে হঠাৎ করে চুল পড়া বেড়ে যায়। চুল পড়া কখনও ধীরে ধীরে দীর্ঘ সময় ধরে চলতে পারে। কখনও খুব দ্রুত ঘটে। এটি স্থায়ী কিংবা অস্থায়ী- উভয় ধরনেরই হতে পারে।

চুল পড়ার সবচেয়ে প্রচলিত কারণ হলো বংশগত প্রভাব। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ সমস্যা প্রকট হয়। এছাড়া থাইরয়েড সমস্যা, রক্ত স্বল্পতা, মাথার ত্বকে সংক্রমণ (যেমন- দাদ), বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা বা রোগ, যেমন- ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, আর্থ্রাইটিস বা মানসিক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, এমনকি কেমোথেরাপির মতো কিছু চিকিৎসা পদ্ধতিও চুল পড়ার কারণ হতে পারে।

নারীর ক্ষেত্রে সন্তান জন্ম দেওয়ার পর কিংবা মেনোপজের সময় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে চুল পড়ে যেতে পারে। আবার গর্ভনিরোধক বড়ি বন্ধ করা, পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমের মতো হরমোনজনিত ভারসাম্যহীনতাও চুল ঝরে পড়ার জন্য দায়ী হতে পারে। জিনগতভাবে সংবেদনশীল চুলের ফলিকলের কারণে টেস্টোস্টেরনের বিপাক প্রক্রিয়ায় সাধারণ টাক পড়ার প্রবণতাও দেখা দেয়। তীব্র বা দীর্ঘস্থায়ী রোগ, অপারেশন, মানসিক চাপ, হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া, অস্বাস্থ্যকর ডায়েট কিংবা পুষ্টির ঘাটতিও চুল পড়ার বড় কারণ। পাশাপাশি মাথার চর্মরোগ, যেমন- সোরিয়েসিস, সেবোরিক ডার্মাটাইটিস, লাইকেন প্ল্যানাস ইত্যাদিও চুল পড়ায় ভূমিকা রাখে। আবার চুল সোজা করা, রঙ করা, চুলে অতিরিক্ত প্রসেসিং কিংবা টানটান করে বাঁধার অভ্যাস এবং হট অয়েল থেরাপিও চুলের ক্ষতির কারণ হতে পারে।

এ সমস্যার সমাধানে প্রথমেই প্রয়োজন চুল পড়ার প্রকৃত কারণ নির্ণয়। এজন্য একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। চুল ভালো রাখতে নিয়মিত চুল আঁচড়ানো, মাথার তালু পরিষ্কার রাখা, সপ্তাহে দুবার মেডিকেটেড শ্যাম্পু ব্যবহার, সুষম খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত পানি পান, ঘুম ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি শরীরচর্চাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। চুল পড়ার সমস্যা অবহেলা না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া কার্যকর সমাধান হতে পারে।

লেখক : চর্ম, অ্যালার্জি, যৌনরোগ, কসমেটিক ও লেজার বিশেষজ্ঞ

সহযোগী অধ্যাপক, চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগ

বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

চেম্বার : ল্যাবএইড লিমিটেড, সেকশন ০১, ব্লক-বি, মিরপুর-১, ঢাকা

হটলাইন : ০১৭৬৬৬৬২৮৮৮; ০১৭৬৬৬৬১৬০২-৩