‘নিষ্ঠুর পৃথিবীকে জানাই বিদায়’ লিখে নদীতে ঝাঁপ, ২৭ ঘণ্টা পর মিলল মরদেহ
গাজীপুরের শ্রীপুরে নিজের হোয়াটসঅ্যাপের স্টোরিতে পোস্ট দিয়ে লামিয়া (১৭) নামের এক কলেজছাত্রী নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে জানা গেছে। নিখোঁজের ২৭ ঘণ্টা পর আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সূতিয়া নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহত লামিয়া উপজেলার নান্দিয়াসাংগুন গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির ছাত্রী।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, লামিয়ার সঙ্গে একই গ্রামের বাসিন্দা শাহরিয়ার সাজিমের দীর্ঘ সাড়ে চার বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্প্রতি তাদের বিয়ের কথাবার্তা চলছিল। গত মঙ্গলবার রাতে ছোট ভাইয়ের জন্মদিন উদযাপনের পর লামিয়া হোয়াটসঅ্যাপ স্টোরিতে একটি দীর্ঘ আবেগঘন পোস্ট দেন।
স্টোরিতে লামিয়া লেখে ‘পৃথিবীর প্রতি হাজারটা অভিযোগ রেখে গেলাম। এই পৃথিবীর প্রতি অঅকাশ পরিমান অভিযোগ রেখে গেলাম। এই পৃথিবী আমাকে দেয়নি ভাল থাকতে। এই পৃথিবীর মানুষ আপন মানুষ নিষ্ঠুর। চেহারা নিষ্ঠুর চলাচল যা আমাকে পৃথিবীতে বেঁচে শান্তিটুকু দেয়নি। যাদের ভেবেছি আপন তারাই মারে ছুরি। তাদের প্রতি নেই কোনো অভিমান নেই কোন অভিযোগ। ভালো থাকুক তারা চাই শুধু এতোটুকুই। আমার থেকে যারা আমার শান্তি কেড়ে নিয়েছে তাদের কাছে থেকে যেন কেউ শান্তিটুকু কেড়ে না নেয়। যারা পারেনি আমাকে সাহায্য করতে তাদের জীবন অলৌকিক কিছু না ঘটুক। নিষ্ঠুর পৃথিবীকে জানাই বিদায়। যে পৃথিবীতে আমার বেঁচে থাকার নেই কোন অধিকার, নেই কোন আশা। পৃথিবী তোমাকে বলে যাই তুমি দিলে না তোমার বুকে যা চাইলেই পারতে আমাকে একটু বেঁচে থাকতে সাহায্য করতে। অকারণে তুমি করলেকি দোষী,করলে অসহায় যা আমাকে বাঁচতে দেয়নি আর,,,।’
নিহতের ছোট বোন সাদিয়া জানায়, লামিয়ার সঙ্গে সাজিম নামে একজনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তাদের বিয়ের কথা চলায় আপু হাসি-খুশি ছিল। গত মঙ্গলবার ছোট ভাইয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠান ছিল। পরে তার কি হলো। রাতে হোয়াটসঅ্যাপ স্টোরিতে পোষ্ট দেয়।’
সে আরও জানান, গতকাল বুধবার সকালে ঘরেই ছিল। সাড়ে নয়টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়। কিছু সময় পর তাকে খোঁজে পাচ্ছিলাম না। পরে শুনতে পেয়েছি পাশের সুতিয়া নদীর ব্রিজ থেকে এক মেয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছে। ছুটে গিয়ে ব্রিজের ওপর আপুর জুতা দেখতে পাই। পরে বুঝতে পারি সে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছে।’
প্রত্যক্ষদর্শী হাবিবুল্লা জানান, সকাল দশটার দিকে ওই মেয়েকে হেঁটে ব্রিজের দিকে যেতে দেখেছি। পরে সে ব্রিজে জুতা রেখে নদীতে ঝাঁপ দেয়। জেলেরাসহ আমরা দৌড়ে গিয়ে দেখি মেয়েটা হাত উঁচিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছে। তবে নদীর প্রচণ্ড শ্রোতে সে তলিয়ে যায়। জেলেদের নিয়ে জাল দিয়ে চেষ্টা করে তার সন্ধান করতে পারি নাই। পরে খবর পেয়ে পুলিশ আসে।
এদিকে, গতকাল শ্রীপুর ফায়ার সাভিসের উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে আসে। পরে দুপুর আড়াইটার দিকে টঙ্গী থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল এসে নদীতে উদ্ধার অভিযান চালায়। পরে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার পর্যন্ত ডুরুরি দল অভিযান চালিয়ে ওই ছাত্রীর সন্ধান করতে পারেনি। আজ দুপুরে ভাসমান অবস্থায় ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহতের বাবা দেলুয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার মেয়ের কোন সমস্যা ছিল না। সে হাশিখুশি ছিল। সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে ফিরেনি। কিছু সময় পর শুনতে পেয়েছি সে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছে। সে কেনো এ কাজ করল? কি কষ্ট ছিল তার। আমাকে বললে পাড়ত। সে কিছুই বলে গেল না। কেন এমনটি করল তা বলতে পারি না।’
শ্রীপুর ফায়ার সার্ভিসের ওয়ার হাউজ ইনিসপেক্টর এ টি এম মাহমুদুল হাসান জানা, গতকাল টঙ্গী থেকে আসা ডুবুরী দল বেলা আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ওই ছাত্রীর সন্ধান করতে পারেনি। নদীতে প্রবল শ্রোতে কাজ বাধাগ্রস্থ হয়। পরে ২৭ ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলের অদূরে ভাসমান অবস্থায় ওই ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহম্মদ আবাদুল বারিক জানান, খবর পেয়েই গতকাল ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। স্বজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন:
ডেঙ্গুতে ৬ জনের মৃত্যু