ঋতু পরিবর্তনে পরিচর্যা

নিশাত তানিয়া
১৩ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
ঋতু পরিবর্তনে পরিচর্যা

প্রকৃতির পালাবদলে বিদায় নিচ্ছে বর্ষা। কিন্তু তার প্রভাব রয়ে গেছে আমাদের ত্বকে, চুলে। ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে ত্বক ও চুলে দেখা দিচ্ছে নানা সমস্যা। নতুন একটি ঋতু আমাদের ত্বকেও নতুন ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসে। তাই এই পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য আনতে প্রয়োজন বাড়তি যতেœর। বিস্তারিত লিখেছেন নিশাত তানিয়া

জারাস বিউটি লাউঞ্জ অ্যান্ড ফিটনেস সেন্টারের সিইও ফারহানা রুমি বলেন, এ সময়টায় বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকে, তাই মুখের ত্বক, চুল বা মাথার ত্বকের জন্যও চাই বাড়তি যত্ন। আর যত্নটা ঘরোয়াও হতে পারে, তবে সেটি হতে হবে নিয়মিত। তবেই এই ঋতু পরিবর্তনের সময়ও সব থাকবে ঠিকঠাক।

ত্বকের যত্ন

এ সময় ত্বকের উজ্জ্বলতা হারিয়ে যায়। আর বাতাসে আর্দ্রতার মাত্রা বেড়ে যায়, তই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার বাড়িয়ে দিতে হবে। ধুলাবালির পরিমাণ অনেকটাই থাকে, এ জন্য দিনে ২ বার অন্তত এবং রাতে ভালোমতো স্কিন কেয়ার করে শুতে হবে। সে ক্ষেত্রে বেসনটা খুবই উপকারী বললেন ফারহানা রুমি। তিনি বলেন, প্রথমে হালকা করে মুখে লাগিয়ে তারপর ম্যাসাজ করলে এটি স্কিন পরিষ্কার রাখে। মুখের তেলতেলে ভাবটা দূর হবে বেসনের মাস্কে। আর কারও যদি ব্রণের দাগের সমস্যা থাকে, তাহলে দারচিনির গুঁড়া ও মধুর মাস্ক দিতে পারেন। দারচিনিতে দাগ দূর হয় আর মধু অ্যান্টিসেপটিকের কাজ করবে। আর সানস্ক্রিন ব্যবহার অবশ্যই করতে হবে। তবে যেখানেই থাকুন সানস্ক্রিন ব্যবহারের ২ ঘণ্টা পর অবশ্যই মুখটা আবার ধুয়ে সানস্ক্রিন ব্যবহারের পরামর্শ দিলেন রুমি। যে কোনো প্রাকৃতিক ফেসপ্যাক সব সময়ই উপকারী । সপ্তাহে অন্তত ২ দিন যে কোনো ফেসপ্যাক ব্যবহার করুন। অ্যালোভেরা, গ্রিন টি বা অন্যান্য অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ত্বকে ব্যবহার করুন। এগুলো ব্যাকটেরিয়া থেকে ত্বককে রক্ষা করবে। মুলতানি মাটির প্যাকটিও ভালো কাজ করবে। আর্দ্রতার মাত্রা বেশি থাকার কারণে ত্বক চিটচিটে হয়ে থাকে। এ জন্য স্কিন কেয়ার রুটিনে টোনার রাখুন। গ্লাইকোলিক অ্যাসিডযুক্ত টোনার হলে বেশি ভালো। ত্বকের যতেœর পাশাপাশি অ্যান্টিফাঙ্গাল পাউডার ব্যবহার করুন। প্রতিদিন গোসল করার পর এটি মাখলে ত্বক সুস্থ থাকবে। ক্ষারমুক্ত ক্লিনজার ব্যবহার করুন। এতে মুখের ন্যাচারাল তেল ধরে রাখবে। ডায়েটে ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবার যোগ করুন। ত্বকে একটি উজ্জ্বল আভা ধরে রাখতে ভিটামিন সি সিরাম ব্যবহার করুন। তবে এ সময় মুখের ত্বকের পাশাপাশি হাত-পায়ের ময়েশ্চারাইজার ধরে রাখাও জরুরি। এ জন্য ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন, এতে পা নরম থাকবে। প্রতিদিন শুকনা পায়ে ২ বার লাগান এটি। আধা কাপ চিনির সঙ্গে এক চা চামচ নারকেল তেল ও লেবুর রস মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করে পায়ে ম্যাসাজ করুন। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন, এতে পায়ে আর্দ্রতা ফিরে আসবে। একটু বেকিং সোডার সঙ্গে অল্প পানি মিশিয়ে ও নারকেল তেল দিয়েও মিশ্রণটি তৈরি করতে পারেন। এ সময়টায় একটু খোলামেলা জুতা পরার চেষ্টা করুন।

চুলের যত্ন

এ সময় যখন-তখন বৃষ্টিতে চুল ভিজে যেতে পারে অথবা গরমেও স্যাঁতসেঁতে হয় এ আবহাওয়া, তাই চুলটা সব সময় অন্তত ফ্যানের বাতাসে হলেও শুকিয়ে নেওয়ার কথা বললেন রুমি। কারণ এতে চুল ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর চুল ভালো ও ঝরঝরে রাখতে পরিষ্কার রাখার বিকল্প নেই। তবে এ সময় খুশকি বেড়ে যেতে পারে কারও কারও এবং মাথার ত্বকে ফাঙ্গাস হয়। তাই অ্যান্টিফাঙ্গাল শ্যাম্পু ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি। তবে সপ্তাহে ৪/৫ দিন যারা তেল দিতেন, এ আবহাওয়ায় সেটি কমিয়ে ২ দিন দেওয়ার কথা বলেন তিনি।

যে কোনো মাইল্ড শ্যাম্পুর ব্যবহারে এ সময় চুলের তেলতেলে ভাবও দূর হবে। চুলে শ্যম্পু করার আগে শুকনা চুলের গোড়া ম্যাসাজ করুন কিছুক্ষণ। আঙুলের সাহায্যে ধীরে ধীরে ম্যাসাজ করুন। এতে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে এবং আটকে থাকা খুশকি আলগা হবে। চুল ধোয়ায় গরম পানি ব্যবহার করবেন না, এতে চুল ময়েশ্চারাইজার হারিয়ে ফেলে। খুশকি বৃদ্ধি পায়। চিরুনি, হেয়ার ব্রাশ, বালিশের কভার পরিষ্কার রাখুন। এগুলো অন্য কারও সঙ্গে শেয়ার করা যাবে না। সপ্তাহে ২ দিন ঘরোয়া মাস্ক ব্যবহার করুন। আর হেয়ার প্যাকের ক্ষেত্রে পাকা কলা ও অ্যালোভেরা ব্যবহার এ সময়ের জন্য সবচেয়ে ভালো বলে মনে করেন রুমি।

নারকেল তেল ও লেবুর রস চুলে দিয়ে ১ ঘণ্টা পর শ্যম্পু করে ফেলুন। টক দই, ডিমের সাদা অংশ ও পাকা কলার প্যাকটিও চুল ঝলমলে করবে। নারকেল তেলের মধ্যে মেথি দিয়ে রাখুন। এ ছাড়া তিলের তেল ব্যবহার করলে বেশ উপকার পাবেন।