শিশু বেশি গেমস খেলছে
আজকাল ছোট থেকে বড় সবার হাতেই থাকে স্মার্টফোন। বড়রা সেটা দিয়ে কাজ করলেও ছোটরা ফোন হাতে পেলে গেমস খেলে বা ভিডিও দেখে। বিশেষ করে শহরের শিশুরা আশঙ্কাজনক হারে গেজেট নির্ভর হয়ে পড়েছে। এর একটা বড় কারণ শহরের শিশুদের খেলার পর্যাপ্ত মাঠ নেই। থাকলেও সুযোগ-সুবিধা, নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। শিশুরা আগে বিভিন্ন ধরনের খেলনা দিয়ে খেলে সময় কাটাত। কিন্তু সময় পাল্টেছে। শিশুরা এখন এ ধরনের ইনডোর গেমসেও তেমন আগ্রহ পায় না। ইট, কংক্রিটের শহুরে শিশুরাও এখন হয়ে উঠেছে বড়দের মতো যান্ত্রিক। শিশুরা এখন খেলাধুলার আনন্দ খুঁজে ফিরছে স্মার্টফোনে গেমসে। যা দিন দিন অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মালিহা। স্কুল আর বাসায় হামওয়ার্ক করা ছাড়া দিনের অধিকাংশ সময় কাটে তার ট্যাবে গেমস খেলে। পড়াশোনায় তেমন মন নেই। হোমওয়ার্কের সময়টায় মা তাকে পাশে বসে এক রকম জোর করেই হোমওয়ার্ক করান। ইদানীং পরীক্ষার ফলাফলও খারাপ হচ্ছে। বাসায় অতিথি এলে গেমস রেখে তাদের সঙ্গে গল্প করতেও সে আগ্রহ দেখায় না। খাওয়ার সময়ও তার চোখ থাকে ট্যাবের স্ক্রিনে। এ নিয়ে মালিহার মা মীরা আহমেদ ইদানীং বেশ দুশ্চিন্তায় আছেন। কীভাবে মেয়ের এই গেমস আসক্তি দূর করবেন তিনি ভেবে পাচ্ছেন না। আজকাল এটা শুধু মালিহার অভিভাবকের দুশ্চিন্তা নয়। প্রযুক্তির এ যুগে মালিহার মতো অনেক শিশুই এখন গেমসে আসক্ত।
প্রায়ই ভিডিও গেমসে আসক্ত শিশুদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আসতে দেখেছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মহসিন আলী। তিনি বলেন, ‘শুধু ভিডিও গেমসই নয়, যে কোনো গ্যাজেটের ওপরই শিশুদের অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা খারাপ। অনেক মা-বাবা শিশুকে নিয়ন্ত্রণ করতে মুঠোফোন বা কম্পিউটার দিয়ে বসিয়ে দেন। এটা উচিত নয়। এতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানো, সবার সঙ্গে মিশতে পারার দক্ষতা শিশুরা ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলে। অনেক শিশুর সারাক্ষণ চোখ পিটপিট করে। অনেক শিশু মোটা হয়ে যায়। এটাও গ্যাজেটের ফল। তবে কিছু ভালো গেমসও আছে। যেটায় শিশুদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ হয়। তবে শিশুদের এক ঘণ্টার বেশি কোনো ধরনের ভিডিও গেমসই খেলতে দেওয়া উচিত নয়।’
ক্ষতিকর দিক
# অতিরিক্ত কার্টুন দেখা বা গেমস খেলা শিশুর চোখের জন্য ক্ষতিকর।
# ভিডিও গেমসের অধিকাংশই মারামারি ও সহিংসতাপূর্ণ। এগুলো থেকে অনেক সময় শিশু মারামারি শেখে এবং আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন:
শীতে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন
# অনেক সময় শিশু শুধু কার্টুন চরিত্রের নেতিবাচক দিকগুলোই শেখে।
# শিশুর পড়াশোনায় মনোযোগ কমে যায়।
# ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে বসে ভিডিও গেমস খেলায় শিশুরা মুটিয়ে যায়।
# শিশু আত্মীয়স্বজন, পরিচিতজনদের সঙ্গে মেশার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ধীরে ধীরে অন্তর্মুখী হয়ে ওঠে।
অভিভাবকদের করণীয়
# শিশুরা তো গেমস খেলবেই। কিন্তু লক্ষ রাখতে হবে তা যেন মাত্রা ছাড়িয়ে না যায়।
# শিশুর জন্য শিক্ষণীয় বা বুদ্ধিবৃদ্ধিতে সহায়ক এমন গেমস নির্বাচন করুন। কার্টুন নির্বাচনেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করুন।
# শিশুকে সমবয়সী অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলার সুযোগ করে দিন।
# মা-বাবাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা শিশুকে সময় দিন, যাতে সে নিঃসঙ্গ না থাকে।
আরও পড়ুন:
জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণগুলো জেনে রাখুন
# বাড়িসহ স্কুলের পরিবেশে খোলা জায়গায় খেলার পরিবেশ তৈরি করে দিন।
# শিশুকে মাঝেমধ্যে বেড়াতে নিয়ে যান। এতে তার মানসিক বিকাশ ঘটবে।
# বাড়ির আশপাশে খোলা মাঠ থাকলে শিশুকে বিকেলবেলা মাঠে নিয়ে যান। এতে শিশু খোলা পরিবেশে খেলার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে।
# শিশুর বয়স অনুযায়ী তাকে বই পড়া, ছবি আঁকা, গান শেখা ইত্যাদি সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত রাখুন।