চোখের অপারেশন যখন করাবেন
মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ চোখ। মানুষের দেখার জন্য চোখের কর্নিয়া ও লেন্স খুব প্রয়োজনীয়। বয়স বা অন্য কোনো কারণে লেন্স অস্বচ্ছ হলে দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়। চোখের লেন্স অস্বচ্ছ হওয়ার নাম ছানি।
ছানির চিকিৎসা : অপারেশন ছানির একমাত্র চিকিৎসা। ছানি অপারেশনে চোখের ভেতরের অস্বচ্ছ লেন্স বের করে সেখানে কৃত্রিম লেন্স বসানো হয়। ছানির অপারেশন দুভাবে করা হয়। যেমন- ফ্যাকো সার্জারি (সেলাইবিহীন ছানি অপারেশন) ও প্রচলিত ছানি অপারেশন (সেলাইযুক্ত)। ছানির চিকিৎসা না করলে দৃষ্টি ক্রমে কমতে থাকে। বেশি দেরি করলে গ্লুকোমা বা চোখের প্রেসার, চোখে প্রদাহ, তীব্র ব্যথাসহ মারাত্মক জটিলতা বয়ে আনতে পারে।
ফ্যাকো সার্জারি কী : ছানি গলিয়ে বের করে চোখে কৃত্রিম লেন্স বসানো হয়। এ পদ্ধতিতে রক্তক্ষরণ হয় না। চোখে ২.৫-৩ মিলিমিটার ছিদ্র করা হয়। সেলাইয়ের প্রয়োজন হয় না। অপারেশনের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি যাওয়া যায়। এ অপারেশনে শুধু সাত দিন চোখে পানি দেওয়া নিষেধ শুধু।
প্রচলিত অপারেশন : এ অপারেশনে পুরো লেন্স একবারে বের করে আনা হয়। রক্তক্ষরণের আশঙ্কা থাকে। অপারেশনে ৬-৭ মিলিমিটার ছিদ্র করা হয়। মাঝে মধ্যে সেলাই লাগে। অপারেশনের পর অন্তত এক দিন হাসপাতালে থাকতে হয়। তবে যে কোনো পদ্ধতিতে ছানি অপারেশনের পর কাছে দেখার জন্য চশমার প্রয়োজন। মাল্টি ফোকাল লেন্স ফ্যাকো সার্জারিতে ব্যবহার করলে দূরে-কাছে কোথাও চশমা লাগে না।
আরও পড়ুন:
শীতে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন
অপারেশন করতে করণীয় : চক্ষু বিশেষজ্ঞরা অপারেশন করার উপদেশ দিলে, পরামর্শমতো অপারেশনের আগে ৩-৪টি পরীক্ষা করতে হয়। যেমন- ডায়াবেটিসের জন্য ব্লাড সুগার; ইসিজি; চোখে যে লেন্স বসানো হবে, সেই মাপের জন্য বায়োমেট্রিক; চোখের প্রেসার পরীক্ষা ও করোনাকালীন করোনার টেস্ট করা।
ফোল্ডেবল লেন্স : এটি লেন্সের সর্বশেষ সংস্করণ। খুবই নরম। ভাঁজ করা যায়। এই লেন্সের ক্ষেত্রে মাত্র ২.৫-৩ মিলিমিটার কাটতে হয়। এ ক্ষেত্রে অপারেশনের পর লেন্সের পেছনে অস্বচ্ছ হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। চোখে পরিষ্কার দেখতে কোনো সমস্যা হয় না।
সাধারণ লেন্স : SICS পদ্ধতিতে সাধারণ প্রচলিত লেন্স (PMMA)। এই লেন্স শক্ত, ভাঁজ করা যায় না। লেন্সের ক্ষেত্রে ৫.৫ মিলিমিটারের মতো কাটতে হয়। এ ক্ষেত্রে অপারেশনের পর লেন্স অস্বছ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ইনজেকশনের মাধ্যমে অবশ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে স্বল্পপরিমাণ রক্তক্ষরণের আশঙ্কা থাকে। ইনজেকশনের মাধ্যমে Anaesthesia দিতে হয়।
আরও পড়ুন:
জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণগুলো জেনে রাখুন
অপারেশন-পরবর্তী করণীয় : অপারেশনের পর ডাক্তারের কাছ থেকে ছাড়পত্র বুঝে নিয়ে বাড়ি যেতে হয়। ছাড়পত্রে লিখিত ওষুধ নিয়মমাফিক ব্যবহার করা। সাত দিন চোখে সরাসরি পানি লাগানো যাবে না। অপারেশনের পরের দিন থেকে সাত দিন পর্যন্ত এবং এক মাস পর মোট তিনবার ডাক্তারের কাছে আসতে হবে। এর মধ্যে যে কোনো সময় কোনো অসুবিধা দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
ছানি হলে যদি কারও স্বাভাবিক দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হয়, সে ক্ষেত্রে ছানি পোক্ত হওয়ার জন্য দেরি করার কোনো প্রয়োজন নেই। অনেক সময় ছানি না হলেও ১০-১২ বা তারও বেশি চোখের মাইনাস পাওয়ার হলে স্বচ্ছ লেন্সেও ফ্যাকো সার্জারির প্রয়োজন। চোখের নানাবিধ সমস্যায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এর পরামর্শ নিয়ে রাখা ভালো।
লেখক : অধ্যাপক ও গ্লুুকোমা বিশেষজ্ঞ এবং পরিচালক, বাংলাদেশ আই হসপিটাল, মালিবাগ শাখা, ঢাকা। হটলাইন : ০৯৬১৩৯৬৬৯৬৬
আরও পড়ুন:
শীতে মুলা কেন খাবেন?