কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাস্তি পাওয়া ছাত্রদের নাম প্রকাশ

বাকৃ‌বি প্রতি‌নি‌ধি
০৭ আগস্ট ২০২৫, ২০:৪৭
শেয়ার :
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাস্তি পাওয়া ছাত্রদের নাম প্রকাশ

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) শিক্ষকদের ওপর হামলা, শিক্ষার্থীদের নির্যাতন ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প‌রিচালনার অভিযোগে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ৩১ জন শিক্ষার্থীকে শাস্তি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাদের মধ্যে ৭ জনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয় এবং ২৪ জনের ডিগ্রির সনদ বাতিল করা হয়।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩২৮তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আজ বৃহস্পতিবার শাস্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের পরিচয় জানা যায়।

এছাড়াও আশরাফুল হক হলে চারজন শিক্ষার্থীকে ছাত্রদল ও শিবির ট্যাগ দিয়ে র‍্যাগিংয়ের অভিযোগে আরও ১৫ জন শিক্ষার্থীর ডিগ্রির সনদ বাতিল এবং ৩ জন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে‌ছে প্রশাসন ।

ছাত্রলীগের সঙ্গে জ‌ড়িত ৩১ শিক্ষার্থীর বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়,গত বছর ৪ আগস্ট কিছু শিক্ষক,কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা বহিরাগতদের সঙ্গে নিয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ‘শান্তি মিছিল’ এর নামে একটি সন্ত্রাসী মিছিল আয়োজন করে। সেই মিছিল থেকে গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নেওয়া শিক্ষকদের ওপর হামলা চালানো হয় এবং এক শিক্ষার্থীকে মারাত্মকভাবে আহত করা হয়। পরে ওই ছাত্রকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। এছাড়াও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অংশগ্রহণকারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভয়ভীতি দেখায় ও প্রকাশ্যে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পক্ষের মৌন মিছিলে অংশগ্রহণকারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয় এবং ‘এক দফার আন্দোলন করলে চোখ তুলে নেওয়া হবে’ ও ‘ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়া হবে’ এ ধরনের হুমকি দেওয়া হয়। ওই মিছিল থেকে ‘সারা বাংলায় খবর দে, এক দফার কবর দে’ এমন উসকানিমূলক স্লোগান দেওয়া হয়।

 আজীবন বহিষ্কৃত হওয়া ছাত্ররা হলেন

পশুপালন অনুষদের আব্দুর রহিম বিশ্বাস, কৃষি অনুষদের বায়েজিদ রহমান বাপ্পি, কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের মো. আদনান সামি, পশুপালন অনুষদের নাবিল শাহরিয়ার, কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদের মো. আরিফুল ইসলাম, মৎস্য অনুষদের মো. রাকিবুল ইসলাম ও কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের মো. শেখ মেহেদী রুমি।

ডিগ্রী বাতিল হওয়া ছাত্ররা হলেন

সীড সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি (মাস্টার্স) বিভাগের খন্দকার তায়েফুর রহমান, কৃষি শক্তি ও যন্ত্র (মাস্টার্স) বিভাগের ইমরান সিদ্দিক ও মো মাসিদুল আমিন মিরাজ, ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট (মাস্টার্স) বিভাগের মো মিরাজুল ইসলাম, ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথ এন্ড ফুড (মাস্টার্স) বিভাগের মো মোস্তাফিজুর রহমান, কৃষি অনুষদের মো ইজাজ আহমেদ ইমন, আল সিয়াম শোয়াইব, হাসিবুল হাসান দুর্জয়, মো ওয়ায়েস কারানি ও মো নাজমুল হক আকাশ, কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের মো সায়েদুল মোরসালিন, আশিস চাকমা ও মো আবু হুয়াইয়া, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স (মাস্টার্স) বিভাগের শাহিনুর রেজা, কৃষি সম্প্রসারণ শিক্ষা (মাস্টার্স) বিভাগের মো নাজমুল হাসান সাকিব, এগ্রোনমি (মাস্টার্স) মো তারেক উজ জামান, পশু পালন অনুষদের তাসলিম বিন হামিদ ও আরিফুল ইসলাম সাগর, ভেটেরিনারি অনুষদের মো শাহরিয়ার খন্দকার, ওয়াশিম উজ জামান সোহাগ ও মো মুঈন নাদিম আল মুন্না, পোল্টি সায়েন্স (মাস্টার্স) বিভাগের ইফতেখারুল আলম, সাসটেইনেবল এগ্রিকালচার এন্ড ফুড সিকিউরিটি (মাস্টার্স) বিভাগের মো আশরাফুল ইসলাম রাহাত এবং প্যারাসাইটোলজি (মাস্টার্স) বিভাগের নাফিস ইমতিয়াজ সেজন।

র‌্যাগিংয়ের অভিযোগে আজীবন বহিষ্কার হওয়া আশরাফুল হলের ছাত্ররা হলেন

কৃষি অনুষদের মো তামিম মাহমুদ আকাশ, মৎস্য অনুষদের মিনহাজুল হক ভূঁইয়া এবং পশুপালন অনুষদের মো ফিশাল হাসনাত নুহাশ। 

র‌্যাগিয়ের সঙ্গে জড়িত থেকে ডিগ্রীর সনদ বাতিল ছাত্ররা হলেন 

ফুড টেকনোলজি (মাস্টার্স) বিভাগের মো মেহেদী হাসান, এগ্রোনমি (মাস্টার্স) বিভাগের দীপক হালদার, পোল্ট্রি সায়েন্সে (মাস্টার্স) বিভাগের মো আজহারুল ইসলাম, অ্যানিমেল সায়েন্সের (মাস্টার্স) মো সালমান মোস্তফা, জেনেটিক্স এন্ড প্লান্ট ব্রিডিং (মাস্টার্স) দীপ্ত সিকদার, কৃষি রসায়ন (মাস্টার্স) বিভাগের নুর ই আলম অনিক, পশুপালন অনুষদের (স্মাতক) মো ইবরাহিম আমিন ও সৌরভ মেহরাহ সাকিব, কৃষি অনুষদের (স্মাতক) মো আল মামুন, অন্তর চৌধুরী, হাসিবুল হাসান দুর্জয়, সজীব সাহা ও মো সামস উদ্দীন সাজ্জাদ, কৃষি অর্থনীতি (স্মাতক) অনুষদের মো রাশেদুল ইসলাম এবং মৎস্য অনুষদের মো আশিক বিল্লাহ মেসবাহ।

উল্লেখ্য, এর আগে শিক্ষার্থীদের জোরাল দাবির মুখে গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রোফরেস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক জি এম মুজিবর রহমানকে সভাপতি ও কৃষি সম্প্রসারণ শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান সরকারকে সদস্যসচিব করে ২৬ সদস্যের ওই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির সদস্যরা ধাপে ধাপে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের থেকে অনলাইন ও স্বশরীরে অভিযোগ নেয়।