কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাস্তি পাওয়া ৫৭ শিক্ষকের নাম প্রকাশ
গত বছরের ৪ আগস্ট ‘শেখ হাসিনাতেই আস্থা’ নামে শান্তি মিছিলে যোগদান এবং গণঅভ্যুত্থান চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরীহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর জুলুম ও নির্যাতনের অভিযোগে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ৫৭ জন শিক্ষককে শাস্তি প্রদান করেছে প্রসাশন। যাদের মধ্যে ৬ জনকে বরখাস্ত, ১২ জনকে অপসারণ, ৮ জনকে নিম্নপদে অবনমন এবং ৩১ জনকে তিরস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ৩২৮তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার শাস্তি পাওয়া ৫৭ জন শিক্ষকের পরিচয় পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অভিযুক্ত শিক্ষকরা ছাত্র জনতার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের শারীরিক, মানসিক নির্যাতন এবং হয়রানি করেছে। এ ছাড়া শেখ হাসিনার সমর্থনে গতবছর ৪ আগস্ট ‘শেখ হাসিনাতেই আস্থা’ শান্তি মিছিলে যোগদান এবং ‘ঘরে ঘরে খবর দে, এক দফার কবর দে’ স্লোগান দিয়ে মিছিল করেন। যার মাধ্যমে জুলুম, নির্যাতন ও গণহত্যার উসকানি ও সমর্থন প্রদান করে নিরীহ ছাত্র ও শিক্ষকদের ওপর হামলা, শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট, শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ নষ্ট, প্রশাসন তথা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে শাস্তি প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়া ৬ শিক্ষক হলেন-
পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড মো আজহারুল ইসলাম, ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. পূর্বা ইসলাম, ফিজিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ড আফরিনা মুস্তারি, ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড এ কে এম জাকির হোসেন, কৃষি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো আখতার হোসেন চৌধুরী এবং এনাটমি এন্ড হিস্টোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো নাজমুল হাসান সিদ্দিকী।
চাকরি থেকে অপসারণ হওয়া ১২ শিক্ষক হলেন-
একোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড মো আবু হাদী নূর আলী খান, সার্জারি ও অবস্ট্রেটিক বিভাগের অধ্যাপক নাছরীন সুলতানা জুয়েনা, অ্যানিমেল নিউট্রিশন বিভাগের অধ্যাপক ড মোহাম্মদ মহি উদ্দীন, ডেয়রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো হারুন অর রশিদ, একোয়াকালচার বিভাগের প্রভাষক মো হামিদুর রহমান, মাইক্রোবায়োলজি এন্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক মো শফিকুল ইসলাম, এনিমেল ব্রিডিং এন্ড জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড এ কে এম ইয়াহিয়া খন্দকার ও প্রভাষক মো আবুল বাশার, কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ড উজ্জল কুমার নাথ এবং এনিমেল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ও পোল্ট্রি সায়েন্স অধ্যাপক ড সুবাস চন্দ্র দাস ।
বর্তমান পদ থেকে এক বছরের জন্য নিম্নপদে অবনমিত করা ৮ শিক্ষক হলেন-
প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড চয়ন গোস্বামী ও অধ্যাপক ড রিজওয়ানুল হক, আইআইএসএফ সহযোগী অধ্যাপক ড রাখী চক্রবর্তী, এনিমেল নিউট্রিশন বিভাগের অধ্যাপক ড মোহাম্মদ আল মামুন ও অধ্যাপক ড খান মো সাইফুল ইসলাম, কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড মুহম্মদ মহির উদ্দীন ও অধ্যাপক ড মো মাহবুবুর রহমান এবং প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড শিরিন আক্তার। এছাড়াও তাদের চাকুরিকালীন সময়ে কোন অতিরিক্ত দায়িত্ব না দেওয়ার শাস্তি দেওয়া হয়।
তিরস্কার শাস্তি পাওয়া ৩১ শিক্ষক হলেন-
কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো রমিজ উদ্দিন, এনিমেল সায়েন্স বিভাগের প্রভাষক মো সৈয়দুজ্জামান আরাফাত, মাইক্রোবায়োলজি এন্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো গোলজার হোসেন, প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. শারমীন আক্তার রনী, প্লান্ট প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো আতিকুর রহমান খোকন, কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো হারুন অর রশীদ, কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. উত্তম কুমার সরকার, ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. পলি কর্মকার, মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো রফিকুল ইসলাম, গ্র্যাজুয়েট ট্রেনিং ইন্সটিটিউট অধ্যাপক এ. কে. এম, রফিকুল ইসলাম , একোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল হক, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আসলাম আলী, হাওড ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের প্রভাষক মো তারিকুল ইসলাম, কৃষি রসায়ন বিভাগের প্রভাষক ফাল্গুনী দাস, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. কামরুল হাসান কাজল, এনাটমি এন্ড হিস্টোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রবিউল করিম, একোয়াকালচার বিভাগ অধ্যাপক ড. মো আব্দুস সালাম, ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো আলমগীর হোসেন-২, কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. গোপাল দাস, সার্জারি এন্ড অবস্ট্রেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. রুখসানা আমিন রুনা, ফার্ম স্ট্রাকচার এন্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো সিদ্দিকুর রহমান, মাইক্রোবায়োলজি এন্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. সুকুমার সাহা, কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো তাজ উদ্দিন, এনিমেল নিউট্রিশন বিভাগের অধ্যাপক ড. মমতা রানি দেবী, এনাটমি এন্ড হিস্টোলজি বিভাগের প্রভাষক আলমগীর কবির , প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. জাহান আরা বেগম, প্যারাসাইটোলজি বিজাগের অধ্যাপক ড. মো জাহাঙ্গীর আলম, প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. রোখসানা পারভীন, ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো নূরুল হায়দার, প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুনমুন পারভীন এবং মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ড. আমিনুল ইসলাম। এছাড়াও তাদের চাকুরিকালীন সময়ে অতিরিক্ত কোন দায়িত্ব না দেওয়ার শাস্তি দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের জোরালো দাবির মুখে গত বছর ২২ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রোফরেস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক জি এম মুজিবর রহমানকে সভাপতি ও কৃষি সম্প্রসারণ শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান সরকারকে সদস্যসচিব করে ২৬ সদস্যের ওই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত ও বিচারকাজে আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে আছেন ময়মনসিংহ জজ কোর্টের আইনজীবী মো. খালেদ হোসেন (টিপু)। তদন্ত কমিটির সদস্যরা ধাপে ধাপে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের থেকে অনলাইন ও স্বশরীরে অভিযোগ নেয়।
আরও পড়ুন:
ইবির ইসলামের ইতিহাস বিভাগে তালা!