সুস্থ থাকতে ইয়োগা
নাগরিক জীবনে নানা কারণে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ, মানসিক চাপ ও শারীরিক অসুস্থতা বেড়েই চলেছে। আধুনিক জীবনযাত্রা আমাদের শরীর ও মনের ওপর যেভাবে প্রভাব ফেলছে, তাতে সুস্থ থাকার জন্য শুধু ওষুধ বা ডায়েট যথেষ্ট নয়। এই জায়গায় ইয়োগা হয়ে উঠছে এক শান্তিপূর্ণ, কার্যকর ও প্রাকৃতিক উপায়।
ইয়োগা শব্দটির উৎপত্তি সংস্কৃত ‘যোগ’ থেকে, যার অর্থ সংযোগ বা মিলন। এর মর্মার্থ হলো শরীর, মন ও আত্মার মধ্যে সেতুবন্ধ সৃষ্টি করা। ইয়োগা শুধু একটি ব্যায়াম পদ্ধতি নয়- এটি একটি জীবনদর্শন, একটি ধ্যানজীবন, যা মানুষকে তার নিজের ভেতরের সঙ্গে যুক্ত হতে শেখায়।
আমাদের প্রতিদিনের জীবন যাপনে নিজের জন্য অন্তত আধা ঘণ্টা সময় বের করে ইয়োগা করা উচিত বলে মনে করেন ইয়োগা ইন্সট্রাকটর মোহাম্মদ হারুন। চলুন জেনে নেই ইয়োগার প্রয়োজনীয়তা-
ইয়োগা আজ সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যচর্চার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। চিকিৎসাবিজ্ঞান ও নানা গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, নিয়মিত ইয়োগাচর্চা মানসিক চাপ কমায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, হজমশক্তি উন্নত করে এবং ঘুমের গুণমান বাড়ায়। যারা নিয়মিত ইয়োগা করেন, তারা অনেক বেশি ফোকাসড, শান্ত ও ইতিবাচক মানসিকতায় জীবনযাপন করেন। ইয়োগার কিছু কার্যকর উপকারিতা।
স্ট্রেস রিলিফ: ইয়োগার ধ্যান ও শ্বাস-প্রশ্বাসের চর্চা করলেই বোঝা যায়, কীভাবে মানসিক চাপ ধীরে ধীরে কমে আসে।
শরীরের নমনীয়তা ও ভারসাম্য বাড়ায়: আসনভিত্তিক চর্চা শরীরকে নমনীয় এবং শক্তিশালী করে।
আরও পড়ুন:
শীতে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন
ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় রাখে: নিয়মিত ইয়োগাচর্চা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
ঘুমের মান উন্নত করে: অনিদ্রা বা খারাপ ঘুমের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মেলে ধ্যান ও ইয়োগাচর্চায়।
হজমশক্তি বাড়ায়: কিছু নির্দিষ্ট ইয়োগা আসন হজমপ্রক্রিয়া উন্নত করতে কার্যকর।
ইয়োগার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো-এটি ধীরে ধীরে শরীরকে নমনীয় ও শক্তিশালী করে, শ্বাস-প্রশ্বাসের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনে এবং মেরুদন্ড ও জয়েন্টে স্থায়িত্ব বজায় রাখে। বিশেষ করে যারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডেস্কে বসে কাজ করেন বা মোবাইল স্ক্রিনে চোখ রাখেন, তাদের জন্য ইয়োগা এক বিকল্প পথ হতে পারে সুস্থতার।
শুরু করুন আজ থেকেই
আরও পড়ুন:
জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণগুলো জেনে রাখুন
ইয়োগা করতে হলে খুব বেশি কিছু দরকার হয় না। একটি শান্ত জায়গা, একটি ম্যাট আর খানিকটা মনোযোগই যথেষ্ট। সূর্য নমস্কার, তাড়াসন, বজ্রাসনের মতো সহজ আসন দিয়েই শুরু করা যায়। নতুনদের জন্য ইউটিউব ভিডিও বা অনলাইন কোর্স উপকারী হতে পারে, তবে একজন প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে শুরু করাই ভালো।
প্রতিদিন মাত্র ২০ মিনিট সময় দিলেই ইয়োগার সুফল ধরা দিতে শুরু করে। নিয়মিত চর্চায় শরীর শুধু ফিটই থাকে না, মনেও আসে প্রশান্তি। যাদের ঘুমের সমস্যা বা দুশ্চিন্তা বেশি, তারা ‘প্রাণায়াম’ ও ধ্যানচর্চা থেকে তাৎক্ষণিক উপকার পেতে পারেন। প্রতিদিন ইয়োগা করলে আপনার শরীর-মন ঝরঝরে থাকবে, কাজের গতি বাড়বে।
ইয়োগা মনের জোর বাড়ায়
বলা হয়, ইয়োগা এক ধরনের অন্তর্জ্ঞান। এটি ধৈর্য শেখায়, মনোযোগ বাড়ায় এবং রাগ, উদ্বেগ ও হতাশা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ইনার পিস বা অন্তরের শান্তি অর্জনের পথে ইয়োগা হতে পারে অন্যতম সঙ্গী।এটি শিশু থেকে বয়স্ক- সবার জন্য উপযোগী। শিশুদের মনোযোগ বৃদ্ধিতে, প্রাপ্তবয়স্কদের স্ট্রেস মোকাবিলায় এবং প্রবীণদের জয়েন্ট ও হাড়ের শক্তি ধরে রাখতে ইয়োগা কার্যকর। শারীরিক সীমাবদ্ধতা থাকলেও অনেক সহজ আসন রয়েছে যা সবাই করতে পারেন।
নিজের জন্য সময় দিন
আরও পড়ুন:
শীতে মুলা কেন খাবেন?
আমরা সারাক্ষণ পরিবারের জন্য, কাজের জন্য বা সমাজের জন্য ব্যস্ত থাকি। কিন্তু নিজের শরীর ও মনের জন্য সময় না দিলে এক সময় সেই ভার জীবনের ওপরই পড়ে। ইয়োগা আমাদের শেখায়, নিজের সঙ্গে সময় কাটানো মানেই আত্মশ্রদ্ধা ও আত্মসচেতনতা চর্চা করা। অন্য কিছু না হোক, প্রতিদিন সকালে নিজেকে ২০ মিনিট উপহার দিন- শরীরের দিকে মন দিন, শ্বাস নেওয়ার শব্দ শুনুন, নিজের মনকে চুপ করে শোনার চেষ্টা করুন। দেখবেন, জীবনের গতি বদলে যাচ্ছে।
শরীর ও মন একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। একটিকে উপেক্ষা করলে অন্যটিও দুর্বল হয়ে পড়ে। ইয়োগা এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করে। তাই আজই শুরু করুন- নিয়মিত ইয়োগাচর্চার মাধ্যমে নিজের শরীর ও মনের মধ্যে সেই বহু প্রতীক্ষিত ‘সংযোগ’ গড়ে তুলুন।