গ্রাফিতি : দেয়ালের ক্যানভাসে আঁকা প্রতিবাদ প্রতিরোধ ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি

মোহসিনা ইসলাম
০৫ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
গ্রাফিতি : দেয়ালের ক্যানভাসে আঁকা প্রতিবাদ প্রতিরোধ ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি

গ্রাফিতি হলো দেয়াল লিখন বা চিত্রণশিল্পের একটি রূপ। এই শিল্প গণমানুষের দ্বারা অঙ্কিত, জনমানুষের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন। গ্রাফিতির রয়েছে অদৃশ্য প্রভাবন-ক্ষমতা, এটি জনসাধারণের অনুভূতি প্রকাশের একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। সমাজের সমসাময়িক অবস্থা ও পরিস্থিতির নিরিখে গ্রাফিতির সৃষ্টি, একই সঙ্গে এটি সমাজস্থ মানুষের মনো-সামাজিক অবস্থার বার্তা বহন করে। বর্তমান সময়ে বিশ্বব্যাপী গ্রাফিতি সরকার বা শাসকের বিরুদ্ধে গিয়ে ভিন্ন মতের প্রচারক হিসেবে, প্রতিবাদের শক্তিশালী ভাষা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এককথায় যাকে অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের একটি বৈধ, ন্যায়সঙ্গত ও শান্তিপূর্ণ প্রকাশ-পদ্ধতি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যায়। ‘গ্রাফিতি’ শব্দটি এসেছে ইতালীয় শব্দ ‘Grafitiato’ থেকে, যার অর্থ- ‘খচিত’ বা ‘সজ্জিত’। বিশ্ব ইতিহাসে দাবি বা অধিকার আদায়ের জন্য গ্রাফিতির ব্যবহার বেশ পুরনো। কখনও এই চিত্র হতে পারে একেবারেই সহজ-সরল, সাবলিল; কখনওবা বিদ্রুপাত্মক। কখনও ফুটে উঠেছে কষ্ট, কখনওবা তীব্র রোষ ও ঘৃণা। গ্রাফিতি অঙ্কনের উদ্দেশ্য মূলত প্রচলিত অবস্থার বিপরীতে থেকে বর্তমান অবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে এক ধরনের বিপ্লবের সূচনা ঘটানো। সেই বিপ্লব কখনও জনতার রোষে অগ্নিস্ফূলিঙ্গ হয়ে ওঠে, কখনও আবার কেবলই দেয়ালে ছবি হয়েই থাকতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গ্রাফিতির মূল আধেয় বা উপাদান হিসেবে সামাজিক বঞ্চনা, শাসকের আধিপত্য, শোষণ, নিষ্ঠুরতা, রাজনৈতিক অনাচার, স্বৈরাচার ইত্যাদি বিষয় প্রতিবিম্বিত হয়। গ্রাফিতি জনমানুষের স্বতঃস্ফূর্ত চিন্তা প্রকাশের মাধ্যম, যা প্রকাশের স্থান হিসেবে দেয়ালকে বেছে নেওয়া হয়। এই দেয়াল হয়ে ওঠে জনগণের উন্মুক্ত ক্যানভাস।

অখণ্ড বাংলা থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে বিপ্লব ও আন্দোলনের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হয়ে এসেছে গ্রাফিতি। ভারতে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন থেকে উদ্ভূত রাজনৈতিক কারণে দেয়ালে স্লোগান  লেখার প্রথা শুরু হয় এবং পরে তা ব্যাপক আকার ধারণ করে। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ-পরবর্তী সময়ে, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে গ্রাফিতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ওই সময় দেয়াল লিখনের জন্য অনেক শিক্ষার্থীকে কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়েছিল। এর পর ১৯৬৯, ১৯৭১ ও ৮০-এর দশকের শেষের দিকে স্বৈরাচারী শাসনের প্রতিবাদ ও আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে আঁকা গ্রাফিতিগুলো জনসাধারণের ভাষা, দাবি আদায়ের ভাষা এবং জনগণ ও রাষ্ট্রের মধ্যে, জনগণ ও শাসকের মধ্যে যোগাযোগোর মাধ্যম হয়ে ওঠে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত ছাত্র আন্দোলন ছিল একটি নতুন অধ্যায়, যেখানে নিরস্ত্র সাধারণ শিক্ষার্থীদের অস্ত্র হয়ে ওঠে রঙ-তুলি। এই আন্দোলন সাধারণ প্রতিবাদে সীমাবদ্ধ ছিল না। এটি ছিল অনুভূতির প্রকাশ, রাজনৈতিক দুর্ব্যবস্থার বিরুদ্ধে গণস্বর এবং নাগরিক অধিকারের জন্য রচিত দৃশ্যমান ইতিহাস। জুলাই আন্দোলনে সমগ্র বাংলাদেশ হয়ে উঠেছিল আনাড়ি নাম না জানা শিল্পীদের উন্মুক্ত ক্যানভাস। হাজার-হাজার গ্রাফিতিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে জনতার ক্ষোভ, আশা, চিন্তা ও রাষ্ট্রব্যবস্থার সুষ্ঠু সংস্কারের প্রত্যাশা। ছবিতে স্লোগানে গ্রাফিতিগুলো যেনো সরাসরি রাষ্ট্রকে প্রশ্ন করছে, সমাজের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে, রাষ্ট্র ও সমাজ কাঠামোয় পরিবর্তনের সঞ্চার ঘটাচ্ছে। রঙের মাধ্যমে, শব্দের মাধ্যমে, প্রতীকের মাধ্যমে গড়েছে এক নতুন চিন্তার পরিসর। গ্রাফিতিগুলোর সরাসরি কিংবা সাংকেতিক উপস্থাপনা লক্ষ্য করলে উপলব্ধ হয়- সাধারণ জনগণ বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা এই গ্রাফিতিগুলোতে স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে নিজেদের বিপরীত অবস্থান তুলে ধরেছে, একইসঙ্গে স্বৈরাচারকে প্রতিরোধের জন্য সম্মিলিত আকাক্সক্ষা এবং একটি ধর্মনিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িক, সাম্যবাদী সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে ২০২৪ সালের জুলাই এবং আগস্ট, যেখানে শিক্ষার্থীদের দাবিতে, তাদের প্রতিরোধে সরকারের পতন ঘটে। কোটা আন্দোলনকে ঘিরে গড়ে ওঠা আন্দোলন ২০২৪-সালের জুলাই মাসজুড়ে একটি গণ-আন্দোলনে উত্তাল সময় পার করেছে। কোটা সংস্কার নিয়ে সরকারের সময়ক্ষেপণ, হত্যা, সহিংসতা, ইন্টারনেট অবরোধ, গণগ্রেপ্তারের মাধ্যমে গণ-আন্দোলন দমনের প্রচেষ্টায় আরও ফুঁসে ওঠে শিক্ষার্থীরা। সেসব দিনে শিক্ষার্থীদের স্লোগানে স্লোগানে যেমনি প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজপথ, জনপদ প্রকম্পিত হয়েছে তেমনি প্রতিবাদলিপি, প্রতিবাদী চিত্রে দেয়ালগুলোও রঙিন হয়ে উঠেছিল। শিক্ষার্থীরা প্রথম সংগঠিত ও আনুষ্ঠানিকভাবে ২৯ জুলাই দেশব্যাপী গ্রাাফিতি বা দেয়াল লিখন কর্মসূচি শুরু করে। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা পুলিশ ও অস্ত্রের ভয় উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গ্রাফিতির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছে। কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য নিজেরাই তহবিল সংগ্রহ করে। প্রতিটি জনপদে হাজারো আনাড়ি হাতের ছোঁয়ায় একেকটি গ্রাফিতি হয়ে উঠেছিল একেকটি অনবদ্য শিল্প, প্রতিবাদ এবং বিদ্রোহের স্ফূলিঙ্গ। গ্রাফিতির ভাষাগুলো হয়ে উঠেছিল বহুমাত্রিক। বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি স্লোগান, কবি-সাহিত্যিকদের বাণী, ক্যালিগ্রাফি, বিদ্রোহের গান, স্যাটায়ার, বাঙালির জীবনে রক্তিম অধ্যায় ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিও উঠে এসেছে এসব চিত্রকলায়। এ ছাড়াও গ্রাফিতিগুলোতে অনবদ্য হয়ে উঠেছে ২০২৪ সালের আন্দোলনের গল্প। গণ-অভ্যুত্থানের সময় মৃতদেহ বহন করা রিকশা, ক্যালেন্ডারের পাতায় গণ-অভ্যুত্থানের দিনগুলো, যার শেষ তারিখ ৩৬ জুলাই, আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদের প্রশস্ত বাহু, উন্মোচিত বক্ষ এবং ঘাতকের বুলেট, তরুণের হাসিমুখ, শিশুর লুটিয়ে পড়া শরীর, সবুজ বাংলাদেশ, বৈষম্যমুক্ত সমাজ, সকল ধর্মের সহাবস্থান, আদিবাসীদের মর্যাদা, ফ্যাসিবাদের নিপাত, দুর্নীতি প্রতিরোধ, সকল কুশাসনের প্রতিকার ইত্যাদি হাজারো ছবিতে আঁকা গ্রাফিতি প্রায় প্রতিটি জনপদে, শহরে, গ্রামে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে ভিন্ন-ভিন্ন রূপে আঁকা হয়েছে। ছবির সঙ্গে সঙ্গে উঠে এসেছে প্রতিবাদী স্লোগান  আবার কখনও বা করুণ কোনো উক্তি- ‘হামার বেটাক মারলু কেনে?’, ‘আমি বাহান্নটি দেখিনি, আমি চব্বিশটি দেখেছি’, ‘আমার ভাইয়ের রক্তের বিচার চাই’, ‘আমার বুকে বিরাট ঝড়, আমার বুকে গুলি কর’, ‘স্বাধীনতা এনেছি, সংস্কারও আনব’ ইত্যাদি। গ্রাফিতিগুলোতে প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে দেশাত্মবোধ, দেশ, মাটি ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা এবং মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষার দৃপ্ত প্রত্যয়। চিত্রে কখনও কখনও স্বাধীনতা সংগ্রামের আত্মত্যাগ ও গৌরবময় ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি নতুন আন্দোলনের প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। ‘শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘বাংলাদেশকে বাঁচাতে হবে’- এই ধরনের স্লোগান  নাগরিক হিসেবে দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা ও দায়িত্ববোধের অনুভূতি ও আবেগ সৃষ্টি করেছে। বাংলার প্রকৃতি, নদী, মাটি, শস্য-শ্যামলা রূপও দেশাত্মবোধের শৈল্পিক প্রকাশ ঘটিয়েছে। গ্রাফিতিতে জাতীয় পরিচয় জ্ঞাপনকারী সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ, ঐতিহ্য, ভাষা, সাহিত্য, শিল্পকলা এবং নিয়মনীতিকে সুচিন্তিতভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। ভাষা হিসেবে বাংলার গৌরব ও ঐতিহ্য উঠে এসেছে। যেমন- ‘ছাত্র যদি ভয় পাইতো বন্দুকের গুলি, উর্দু থাকতো রাষ্ট্রভাষা, উর্দু থাকতো বুলি’, ‘বায়ান্ন দেখিনি চব্বিশ দেখেছি’। জুলাই আন্দোলনে শহীদ, জাতীয় বীর তরুণদের প্রতিকৃতি উঠে এসেছে; উঠে এসেছে শহীদদের আইকনিক ভঙ্গি বা বক্তব্য। যেমন- ‘বিপ্লব স্পন্দিত বুকে, মনে হয় আমিই সাঈদ’, ‘পানি লাগবে, পানি’ ইত্যাদি পঙ্তি স্মরণ করিয়ে দেয় সেইসব বিপ্লবী সময়। গ্রাফিতিতে সকল ধর্ম-বর্ণ তথা বাংলাদেশে সকল সম্প্রদায়ের সহাবস্থানের কথা বর্ণিত হয়েছে। যেমন- একটি গ্রাফিতি ছিল এমন ‘পাতা ছিঁড়া নিষেধ’; এই ছবিটি একটি গাছের আকৃতিতে আঁকা, পাঁচটি সবুজ পাতায় মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও আদিবাসী লেখা আছে। জুলাই আন্দোলন এবং পরবর্তী সময়ে সারাদেশের অসংখ্য দেয়ালে অনুরূপ গ্রাফিতি আঁকা হয়েছিল। এ ছাড়াও রয়েছে- ‘হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, উই আর ওয়ান’, ‘দেশের কোনো ধর্ম নেই, দেশের কোনো বর্ণ নেই’, ‘ধর্ম যার যার দেশ সবার’ ইত্যাদি অসাম্প্রদায়িক গ্রাফিতি। সামাজিক ন্যায়বিচার এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সক্রিয় অংশগ্রহণের গুরুত্ব সম্পর্কে অবিহিত করার মাধ্যম হয়ে উঠেছিল জুলাই আন্দোলনের গ্রাফিতিগুলো। যেমন- ‘আমার ভাইয়ের রক্তের বিচার চাই’, ‘পাহারায় থাকতে হবে, দুর্নীতিকে রুখতে হবে’, ‘ঘুষ চাইলে ঘুষি’, ‘শিক্ষক রাজনীতি নিপাত যাক, মেধা পাচার থেমে যাক’, ‘ছাত্ররাজনীতি নিপাত যাক, শিক্ষাঙ্গন মুক্তি পাক’, ‘ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার নই/এসো দিন বদলের যোদ্ধা হই’ ইত্যাদি। কোনো কোনো গ্রাফিতিতে দৃঢ়ভাবে ফুটে উঠেছে বাঙালির আত্মপরিচয়। যেমন- ‘তুমি কে আমি কে/বাঙালি বাঙালি’, ‘আমি, তুমি, আমরা’, ‘২৪-এর গল্প, আমি নয় আমরা’, ‘পিন্ডির গোলামীর জিঞ্জির ছিন্ন করেছি, দিল্লির দাসত্ব মানি না মানব না’ ইত্যাদি। এ ছাড়াও প্রকাশ পেয়েছে লিঙ্গ-বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের অভিপ্রায়। জুলাই আন্দোলন ২০২৪-এর সময় শিক্ষার্থীদের আঁকা গ্রাফিতিগুলোতে রঙের ব্যবহার ছিল প্রতীকী ও অন্তর্নিহিত তাৎপর্যপূর্ণ। রঙ শুধু গ্রাফিতির সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হয়নি; বরং এগুলো ছিল আন্দোলনকারীদের মনো-সাংস্কৃতিক অবস্থা, রাজনৈতিক মনোভাব এবং দৃষ্টিভঙ্গির এক শক্তিশালী প্রকাশ। গ্রাফিতিগুলোতে ব্যবহৃত প্রধান রঙ হিসেবে লাল, সবুজ, কালো, নীল, হলুদ বা কমলা রঙের প্রাধান্য দেখা গেছে। লাল উঠে এসেছে সংগ্রাম, বিপ্লব, রক্তের রঙ, স্বাধীনতার আকক্সক্ষা, আত্মত্যাগ ইত্যাদির প্রতীক হিসেবে। কালো রঙ প্রতিরোধ, শোক, দুঃখ ও নিপীড়ন বিরোধিতার প্রতীক। সাদা শুদ্ধতা, শান্তি এবং মুক্তির আকাক্সক্ষার প্রতীক। নতুন আলো, বিপ্লবের উত্তাপ, আশার আলো এবং একটি শুভ সময়ের সূচনার প্রতীক হিসেবে গ্রাফিতিগুলোতে হলুদ বা কমলা রঙের ব্যবহার হয়েছে। সবুজ রঙ শান্তি, জীবন, স্বপ্ন এবং সম্ভাবনার প্রতীক। নমুনা গ্রাফিতিগুলোতে বাংলাদেশ, এই দেশের প্রকৃতি, মানচিত্র অঙ্কনে সবুজ রঙ ব্যবহৃত হয়েছে। সবুজের মাধ্যমে নবজীবন, স্বাধীন, সমতা ও ঐক্যের সমাজ আকাক্সক্ষা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙে মুক্ত জীবনের আকাক্সক্ষা প্রকাশে নীলের প্রতিনিধিত্ব দেখা গেছে। গ্রাফিতিগুলোর টেক্সট বা ভাষ্যের দিকে লক্ষ করলে দেখা যায়- শিক্ষার্থীদের ব্যবহৃত ভাষা ছিল দৃঢ়, তীব্র জিজ্ঞাসামূলক, যা বিদ্যমান রাজনৈতিক কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে এক ধরনের সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। ‘কোটা না মেধা, মেধা, মেধা’, ‘ফ্যাসিবাদ নিপাত যাক’, ‘শোষণের শৃঙ্খল ভেঙে দাও’, ‘কোটা প্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘আমার সোনার বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’- এই ধরনের টেক্সটের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা একটি ন্যায়ভিত্তিক, বৈষম্যহীন সমাজের আশা প্রকাশ করেছে, যা ছিল বৃহত্তর গণ-আন্দোলনের প্রাথমিক প্রতিফলন। সম্মিলিত ক্ষোভ ও প্রত্যাশা প্রকাশে গ্রাফিতি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। গ্রাফিতিগুলোতে ভাষা ও প্রতীকের মাধ্যমে স্বাধীনতা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার এক সুস্পষ্ট দাবি উত্থাপিত হয়েছে, যা নিপীড়ন, বৈষম্য ও ফ্যাসিবাদী শাসন প্রত্যাখ্যানের প্রকটতাকে তুলে ধরেছে। জুলাই আন্দোলনের গ্রাফিতিগুলো জনসচেতনতা গঠনে এবং সম্মিলিত প্রতিরোধ আন্দোলনকে উদ্দীপিত করতে ভিজ্যুয়াল কালচারের এক রূপান্তরিত শক্তি হিসেবে ভূমিকা রেখেছে, যা বাংলাদেশ তথা বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদের হাতিয়ার ও শিল্প হিসেবে গ্রাফিতিকে দিয়েছে নতুন এক মাত্রা।