স্বৈরাচারীর পলায়ন স্বস্তির ছায়া-হাসি

ইথুন বাবু
০৪ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
স্বৈরাচারীর পলায়ন স্বস্তির ছায়া-হাসি

অন্ধকার আর আলো দুটোর মধ্যে কোনো পার্থক্য ছিল না, আমাদের চোখে-মুখে ছিল প্রতিশোধের আগুন। ঘুটঘুটে অন্ধকার মনের ছাপাখানায় গান তৈরি হচ্ছে, কোথায় কাজ করব, মনে হচ্ছে ভাঙা সেতু সাঁতরিয়ে পার হতে হবে গন্তব্য স্থানে যাওয়ার জন্য, মুখে মাস্ক, চোখে সানগ্লাস, মাথায় হেলমেট আমাদের এই চলাটাই অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছিল, কিছু বাইক (হোন্ডা) শ্রমিকদের সাহায্যের কথা বেঁচে থাকাকালীন ভুলে যাওয়া সম্ভব না! রাজপথে মিছিল লিফলেট বিতরণ শেষে পালিয়ে যাওয়ার শেষ সম্বলই ছিল আমাদের বাইক (হোন্ডা) শ্রমিক ভাইয়েরা।

ফজরের আজানের সময় মৌসুমী, পরান, মুন্না, শিবা শানুদের সঙ্গে নিয়ে চুপিসারে করতাম গানের রেকর্ডিং, চলত খণ্ড নাটকের কাজ। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী রাতের পর রাত দিনের পর দিন লুকিয়ে লুকিয়ে গান ও নাটকের কাজ করতাম আমরা সবাই, জুলাইয়ের ১৭ তারিখ আমরা রামপুরা বাজারের আশপাশে সবাইকে নিয়ে দেশমুক্ত করার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ি- এক হাতে মৃত্যু- অন্য হাতে মুক্তি... টিয়ারশেল, কাঁদানে গ্যাস আর বোমার শব্দে কম্পিত রামপুরাসহ সারা ঢাকা, কোনো সময় ছুটে যেতাম যাত্রাবাড়ী কোনো সময় ছুটে আসতাম শাহবাগে- তিনটা হোন্ডাতে লিখে রেখেছিলাম সাংবাদিক। ৪ আগস্ট তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা সবাই অবস্থান নেই প্রেসক্লাবের সামনে, পেশাজীবীদের অনুষ্ঠানে দুপুরে হঠাৎ করেই শুরু হয় আক্রমণ- ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় জনসভা। আমরা ছুটে গিয়ে অবস্থান নিই প্রেসক্লাবের ভেতরে। এমতাবস্থায় ফ্যাসিস্ট ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশ লীগ অতর্কিত হামলা চালাতে থাকে। এ সময় রুহুল আমিন গাজী ও গনি ভাই আমাদের নিয়ে খুব ভয়ে ছিলেন, হঠাৎ একজন সাংবাদিক ভাই ওনার নাম আবুল, গোলাগুলি, টিয়ারশেল আর বিকট বোমার শব্দের ভেতরে হেলমেট পরিয়ে প্রেসক্লাব থেকে মৃত্যুর হাত থেকে বের করে আমাদের নিয়ে আসে, তারপর আমরা ডিসিশন নিই আজকের সন্ধ্যার কারফিউ যেভাবে হোক আমরা ভাঙব, আমরা রাত আটটার পর কয়েকজন মিলে বেরিয়ে পড়ি। তখন শাহবাগে খুব কম লোকজন ছিল স্লোগান আর প্রতিবাদ। ধীরে ধীরে ভিড় বাড়তে থাকে, সাড়ে দশটা এগারোটার দিকে শাহবাগ মোড় আবার জনস্রোতে ভরে যায়। আমরা ফেসবুক খুলে ফেলি আমরা লাইভে জনগণকে আমন্ত্রণ জানাতে থাকি আমাদের পাশে থাকার জন্য, ৫ আগস্ট রাত দেড়টা পর্যন্ত আমরা শাহবাগের মোড়ে ছিলাম। তারপরে চলে আসি রামপুরা, সারারাত চিন্তায়, চা বিস্কুট জীবন চলার প্রতিদিনের সঙ্গী, ভোরের আলো দেখছি চেয়ে চেয়ে, হঠাৎ সূর্যের আলোটা মনে হচ্ছিল আমাদের কিছু একটা বলছে...

তারপর ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারীর পলায়ন/ স্বস্তির ছায়া-হাসি/ আমরা বাংলাদেশি।